Chandimangal

About this text

Introductory notes

The Chandimangal is a mangal kavya, or a narrative poem which tells the tales of deities who establish their cult among human beings. This popular genre in Bengali, influenced by regional cults such as that of Chandi, Manasa, Dharma, or Vaishnav songs, flourished from the thirteenth century to the eighteenth. However, mangal kavya poems appear to have been written until the start of the nineteenth century. The poems are typically written in the form of songs (panchalika) meant for performance by professional singers (mangal gayak) backed by a male chorus (dohar) during ritual worship of the particular deity who was the subject of the poem. The Chandimangal of Mukandaram Chakravarti was composed in the latter half of the sixteenth century in West Bengal, India. There are numerous manuscripts of this work in West Bengal, Bangladesh, and Assam, as well as early printed editions from the nineteenth century onwards. The most frequently used edition is Sukumar Sen’s which was based on a manuscript dated 1700, discovered by the editor. In this version, the text is divided into 14 palas, whose performance began on a Tuesday from noon to dusk, and continued from late evening till midnight. The performances lasted for a week, ending on the following Tuesday with the ashthamangal. The poem’s performative origins are evident in its rhyming verse, use of repetition, directions for using specific rhythms, musical modes, and dance forms.

The focus of Mukundaram’s poem is on his difficult times, human beings, seasons, and daily detail, rather than merely establishing the cult of the titular goddess. These broader themes and mundane socio-economic concerns are represented in our selections below. We have provided our own English translation which renders the text in prose as closely as possible.

Selection details

The focus of Mukundaram’s poem is on his difficult times, human beings, seasons, and daily detail, rather than merely establishing the cult of the titular goddess. These broader themes and mundane socio-economic concerns are represented in our selections below. We have provided our own English translation which renders the text in prose as closely as possible.

[Page 39]

1. ৬৬

প্রাণনাথ কাল গর্ভে হইল কোন ফলে
আরুচা করিল বল উদন বেঞ্জন জল
পেটে ভোক মুখে নাহি চলে ।
গর্ভের দেখিয়া ভর মনে বড় লাগে ডর
খুদা ত্রিশা নাহি দিনা দশ
আপনার মত পাই তবে গ্রাস কত খাই
পোড়া মীনে জামিরের রস ।
নিধাণী করিয়া খই তথি মহিষের দই
কুলি করঞ্জা প্রাণ হেন বাসি
যদি পাই মিঠা ঘোল পাকা চালিতার ঝোল
প্রাণ পাই পাইলে আমসি ।
আমার সাধের সীমা ইঙ্গিচা পলতা গিমা
বোআলি ঘাঁটিয়া কর পাক
ঘন কাঠি খর জ্বালে সান্তলিবে কটু তৈলে
দিবে তায় মরিচের ঝাল
হরিদ্রারঞ্জিত কাঞ্জি উদর পুরিয়া ভঞ্জি
প্রাণ পাই পাইলে পাকা তাল ।
লোন কিছু দিবে বাড়া নেউল গোধিকা পোড়া
হাঁসডিম্বে কিছু তোল বড়া
কীছু ভাজ বালিকড়া চিঙ্গড়ির তোল বড়া
সসারু করহ শিকপোড়া ।
সদাই নাকার উথে দিনে দিনে বল টুটে
বদনে সদাই উঠে জল
মূলাতে বার্তাকু সিম তাহে দিয়া রান্ধ নিম
আর দেহ ডম্বুরের ফল ।
নিদয়ার সাধ হেতু ঘরে জায় ধর্মকেতু
চাহিয়া আনিল আয়োজন
আপনি রাঁধিয়া ব্যাধ নিদয়ারে দিল সাধ
বিরচিল শ্রীকবিকঙ্কন ।।
[Page 44]

2. ৭৩

শ্বশুরে বিদায় করি আইল বীর নিজ পুরী
ফুল্লরা সহির সবিনয়
শিরে দিয়া দূর্বা ধান নিছিয়া পেলিল পান
নিদয়া দিলেন জয়জয় ।
ছায়ামন্ডপের মাঝে ঢেমচা দগড়ি বাজে
বন্ধুজন দিলেন জৌতুকে
অন্নপানে কৈল সুখী পঞ্চদিন ঘরে রাখি
বিদায় দিলেন সকৌতুকে ।
সম্বল আরজনে বীর কাল্কেতু মহাবীর
দেখি সুখী হইল ধর্মকেতু
নিদয়ার সুখ বড় গৃহকার্যে বধূ দড়
কুলযশ রক্ষণের হেতু ।
জেই দিন যেমন পায় তাহা যে দিবসে খায়
ডেড়ি অন্ন না রাখে আগারে
তিন বাণ শরাসন বিনে আর নাহি ধন
বাঁধা দিতে ধারে বা উধারে ।
প্রভাতে সঘ্ন ত্বরা বধে খড়্গ মৃগ ধরা
প্রতিদিন করএ মৃগয়া
পুত্র হইতে ধর্মকেতু নিচিন্দ সম্বল হেতু
আনন্দিত হৃদয়ে নিদয়া ।
নিদয়া বসিল খাটে মাংস লইয়া যায় হাটে
অনুদিন বেচয়ে ফুল্লরা
সাধুড়ি জেমন ভনে তেনমত বেচে কিনে
তৈল লোন আনয়ে বেসাতি ।
সাক বাগান কচু মূলা আঠ্যা থোড় কাঁচকলা
নানা সজ পুরিয়া লয়ে পাথী ।
ফুল্লরা আইল ঘরে নিদয়া জিজ্ঞাসা করে
কহে বামা হাটের বিবরণ
আজ্ঞা নিদয়ার ঘরে ফুল্লরা রন্ধন করে
আগে ধর্মকেতুর ভোজন ।
তনয়ে বাগুরা জাল সমরপিয়া বহুকাল
সুখে ভুঞ্জে কিরাতনন্দন
খাওয়ার ফুল্লরা বধূ খির খণ্ড দধি মধু
নিদয়ার সফল জীবন
ব্যাধের উত্তম দৈব জে জন আছিল শৈব
সে হইল কোলের বংশধর
চিরদিন সাধুসঙ্গ বিপদ হইল ভঙ্গ
ধর্মকেতু চিন্তে পুরহর ।
মুক্তিপদে দিয়া মন শিব ভাবে অনুক্ষণ
শুনে প্রভঞ্জন উপ্যাখ্যান
ছায়ার সঙ্গে ধর্মকেতু ভাবিলেন মুক্তি হেতু
বারানসী করিল পয়ান ।
দম্পত্য লোটায়া কান্দে কেশপাশ নাহি বান্ধে
মাসে মাসে পাথান সম্বল
সুধন্য আরড়া স্থান শ্রীকবিকঙ্কন গান
হৈমবতী-শঙ্কর মঙ্গল ।।
[Page 54]

3. ৯১

ফুল্লরা নাহিক বাসে আক্ষটি অন্নের আশে
পড়শিরে জিজ্ঞাসে বারতা
পড়শি বীরেরে বলে গোলাহাটে বীর চলে
দূর হইতে দেখয়ে বনিতা ।
বীরে দেখি শুন্যপাণি কপালে আঘাত হানি
করে রামা দেব স্মঙরন
বিধাতা আমারে দণ্ডী জিয়ন্ত ভারে রাণ্ডী
কৈল দৈবে দুঃখের ভাজন ।
কপালে আঘাত হানি কান্দে ব্যাধনন্দিনী
নিশ্বাসে মলিন মুখচন্দে
দারুণ দৈবের গতি সকলে দরিদ্র পতি
পড়িনু সম্বলচিন্তা ফাঁদে ।
অন্ন বস্ত্র নাহি ঘরে বিভা দিল হেন বরে
কর্ণবেদ জাত্যর বেভারে
হরিদ্রা চন্দন চুয়া কুমকুম কস্তুরি গুয়
পাইআছিলাঙ বিভার বাসরে ।
ফুল্লরা করুণ ভাসে আল্য বীর সকাশে
প্রিয়ভাসে বলেন বচন
রচিয়া ত্রিপদী ছন্দ গান কবি শ্রীমুকুন্দ
চক্রবতী শ্রীকবিকঙ্কন ।।
[Page 55]

4. ৯২

ফুল্লরা বলেন বাসি মাংস না বিকায়
আজি মহাবীর বল সম্বল উপায় ।
আছয়ে তোমার সই বিমলার মাতা
সেআড়ি লইআ ভেট জাহ তুমি তথা ।
খুদ কিছু ধার নিহ সয়ার ভবনে
কাঁচড়া খুদের কাঁজি রান্ধিবে জতনে ।
রান্ধিবে মুড়্যাতি সাক হাঁড়ী দুই তিন
লবেণর তরে চারি কড়া করা রিন ।
সইকে দেহ গিআ তন্ডুলের ভার
তোমার বদলে আমি করিব পসার ।
গোধিকারে বাঁন্ধিয়াছি রাখি জালদড়া
ছাল খসাইআ প্রিয়ে কর‍্য সিকপোড়া ।
সম্ভ্রমে ফুল্লরা গেল সইয়ের দুয়াব
সেআড়ি ভেট দিআ সয়ে কৈল নমস্কার ।
আইস আইসবলিআ ডাকেন তাঁরে সই
দেখিতে লাগয়ে সাদ এতদিন বই ।
বিধাতা করিল মোরে দরিদ্র কান্তা
চারি প্রহর করি সই উদরের চিন্তা ।
শিরে তৈল দিআ তাঁর বাঁধিল কবরী
সরস সিন্দুর ভালে দিল সহচরী ।
আঁটল ভরিআ সই দিল খই মুড়ি
চাপিআ বসিল দোঁহে চৌখণ্ডি পিড়ি ।
ফুল্লরা দুকাঠা ছালু মাগিল উধার
কালি দিহ বল্যা সই কৈল অঙ্গীকার ।
আইসহ প্রাণের সই বৈস গো বহিনি
মর মাথে গোটা কথো উকিনি ।
দুই সয়ে কথায় মজিয়া গেল চিত
ভগবতী লইআ কীছু শুনিব১০ সঙ্গীত ।
অভয়াচরণে মজুক নিজ চিত
শ্রীকবিকঙ্কন গান মধুর সঙ্গীত ।
[Page 61]

5. ১০১

বৈশাখে বসন্ত ঋতু খরতর খরা
তরুতল নাহি মোরে করিতে পসরা ।
পা পোড়ে খরতর রবির কিরণ
শিরে দিলে নাই আঁটে খুঞার বসন ।
বৈশাখ হইল মোরে বিষ
মাঁস না বিকায় সভে করে নিরামীষ । ১ ।
পাপিষ্ঠ জইষ্ঠ মাহ প্রচণ্ড তপন
খণ্ড খণ্ড হইল মোরে খুঞার বসন ।
পসরা এড়িয়া জল খাইতে না পারি
দেখিতে দেখিতে চিলে লয় এক সারি ।
পাপিষ্ঠ জইষ্ঠ মাস পাপিষ্ঠ জইষ্ঠ মাস
বেঙচের ফল খাইআ করি উপবাস । ২ ।
আষাঢ়ে পুরল আসি নব মেঘ জল
ভাল গেরস্তের নাঞি জোড়এ সম্বল ।
মাঁসের পসরা লৈয়া ভ্রমি ঘরে ঘরে
কিছু খুদ কুড়া মিলে উদর না পুরে ।
বড় অভাগ্য মনে গুনি বড় অভাগ্য মনে গুনি
কত কত খায় জোঁক নাঞি খায় ফণী । ৩ ।
শ্রাবণে বরিখে ঘন দিবস রজনী
সিতাসিত দুই পক্ষ একোই না জানি ।
ভুবন তরিল আসি নব মেঘ জলে
হেন কালে মৃগ মারে পাপ কর্ম ফলে ।
দুখে কর অবধান দুখে কর অবধান
নাঞি ঝড় বীরের কুড়্যায় আল্য বান । ৪ ।
ভাদ্রপদ মাসে রামা দুরন্ত বাদল
নদনদী একাকার আট দিকে জল ।
মাঁসের পসরা লৈয়া ফিরি ঘরে ঘরে
আনলে পোড়এ অঙ্গ ভিতরে বাহিরে ।
কত নিবেদিব দুঃখ কত নিবেদিব দুঃখ
বিপথি হইল স্বামী বিধাতা বিমুখ । ৫ ।
আশ্বিনে অম্বিকা-পুজা প্রতি ঘরে ঘরে
মহিষ ছাগল মেষ দিআ উপাচারে ।
উত্তমবসন বেশ করয়ে বনিতা
অভাগি ফুল্লরা করে সম্বলের চিন্তা ।
মাঁস কেহ না আদরে মাঁস কেহ না আদরে
দেবীর প্রসাদ মাঁস সবাকার ঘরে । ৬ ।
কার্তিক মাসেতে হৈল হিমের জনম
জগ-জনে কৈল শীতনিবারণ বসন ।
নিযুক্ত করিল বিধি সবার কাপড়
অভাগি ফুল্লরা পরে হরিণের ছড় ।
দুঃখ কর অবধান দুঃখ কর অবধান
জানু ভানু কৃশানু শীতের পরিত্রাণ । ৭ ।
মাঁস মধ্যে মাইসর আপনে ভগবান
হাটে মাঠে গৃহে গোঠে সভাকার ধান ।
উদর পুরিআ অম্ল দৈবে দিল যদি
যম সম শীত তথি নিরমিল বিধি ।
কত অভাগ্য মনে গুনি কত অভাগ্য মনে গুনি
পুরাণ দোপাটা গায় দিতে করে টানি ১ । ৮ ।
পৌষে প্রবল শীত সুখ জগজন
তুলি পাড়ি পাছুড়ি শীতের নিবারণ ।
হরিণ বদলে পাইল পুরাণ খোসলা
উড়িতে ২ সকল অঙ্গে বরিসএ ধূলা ।
বৃথা বনিতা জনম বৃথা বনিতা জনম
ধুলিভয়ে নাঞি মেলি শয়নে নয়ন । ৯ ।
নিদারুণ মাঘ মাসে সদায় কুজ্ঝটি
আন্ধারে লুকায় মৃগ না পায় আক্ষটি ।
[Page 62]
ফুল্লরার আছে কত কর্মের বিপাক
মাঘ মাসে কিনিতে তুলিতে নাঞি ৩ শাক ।
নিদারুণ মাঘ মাস নিদারুণ মাঘ মাস
সর্বজন নিরামিষ করে উপবাস । ১০ ।
ফাল্গুনে দুগুনে শীত খরতরা খরা
খুদ সেরে বান্ধা দিল মাটিয়া পাথরা ।
ফুল্লরার আছে কত কর্মের ফল
মাটিয়া পাথরা বিনে নাহি অন্য স্থল ।
দুঃখে কর অবধান দুঃখে কর অবধান
আমানি খাবার গর্ত দেখ বিদ্যমান ৪ । ১১ ।
মধুমাসে মলয়মারুত মন্দ মন্দ
মালতিয়ে মধু পান করে মকরন্দ ।
বনিতা পুরুষ অঙ্গ উদর দহন ।
দুঃখ কহিব কাহারে দুঃখ কহিব কাহারে
স্বামী সনে একশয্যা কোসেক অন্তরে । ১২ ।
ফুল্লরা কোথা শুনি বলেন পার্বতী
আজি হৈতে আমার ধনে আছে তোমার অংশ
শ্রীকবিকঙ্কন গান গীত ভৃগুবংশ ।।
[Page 74]

6. ১২২

শুন শুন মেঘগণ কর ঝড়-বরিষণ
কলিঙ্গে হইআ প্রতিকুল
মোর মখভঙ্গকালে আকুল করিলে জলে
জেন নন্দ-গোপের গোকুল ।
পান লেহ মোর দ্রোণ শুধিবে আমার লোন
শীঘ্র চল চন্ডিকার সঙ্গে
পুন্ড্ররীকে ঐরাবতে দুই গজ লৈয়া সাথে
বিষ্টি করি ডুবাবে কলিঙ্গে ।
চল রে পুষ্কর মেঘ দুষ্কর তোমার বেগ
সঙ্গে ছল কুমুদ বামন
তুমি যদি মন কর প্রলয় করিতে পার
কলিঙ্গের কোথাই গণন ।
আবর্ত ১ মেঘরাজ করহ চণ্ডীর কাজ
লইবে অঞ্জন পুস্পদন্ত
ঝনঝনা বৃষ্টি শিলা সঙ্গে লৈয়া কর লীলা ২
করিঙ্গপুরের কর অন্ত ।
সম্বরত করহ হিত কর গিয়া যথোচিত
সার্বভৌম সংহতি ৩ লইআ
মোর কারযে দেহ দৃষ্টি কলিঙ্গে করহ বৃষ্টি
জেমন বলেন মহামায়া ।
গজ জোগাইবে বারি বরিষ মুষলধারি
ঝাঁট জাহ কলিঙ্গনগর
প্রলয়কালের মত ঝড়বৃষ্টি অবিরত
কলিঙ্গের না রাখিহ ঘর ।
চণ্ডীর আদেশ পাই লঘুগতি মেঘ ধাই
পঞ্চাশ পবন করি ভর
খেনেকে বায়ুর বেগে গগন জুড়িল মেগে
চৌঘাড়ে ৪ কলিঙ্গনগর ।
মহামিশ্র জগন্নাথ হ্রদয়মিশ্রের তাত
কবিচন্দ্র হ্রদয়নন্দন
তাহার অনুজ ভাই চণ্ডীর আদেশ পাই
বিরচিল শ্রীকবিকঙ্কন ।।
[Page 74]

7. ১২৩

ঈশানে উরিল মেঘ সঘনে চিকুরই
উত্তর পবনে মেঘ দাকে দুরদুর ।
[Page 75]
নিমিষেকে জড়ে মেঘ গগনমণ্ডল
চারি মেঘে বরিষে মুষলধারে জল ।
কলিঙ্গে রহিআ মেঘ ডাকে ঘোর নাদ
প্রলয় গুনিয়া প্রজা ভাবয়ে বিষাদ ।
হুড়হুড় দূরদূর বিপরীত ঝড়
বিপাকে চতুর প্রজা উঠ্যা দিল রড় ।
ধুলি আচ্ছাদিত হইল চারিভিত
উলটিয়া পড়ে ঘর প্রজা চমকিত ।
চারি মেঘে জল দেই অষ্ট গজরাজ
সঘনে চিকুর পড়ে বেঙ্গ-তড়কা বাজ ।
করিকর-সমান বরিষে জলধারা
জলে একাকার মহী পুখুর হইল হারা ।
ঘন বাজ-ধ্বনি চারি মেঘের গর্জন
কার কোথা শুনিতে না পাই কোন জন ।
পরিচ্ছেদ নাহি সন্ধ্যা দিবসরজনী
স্মঙরে সকল লোক জনক জননি ১ ।
গর্ত ছাড়ি ভুজঙ্গ ভাসিআ বুলে জলে
নাহীক নির্জল ২ স্থল কলিঙ্গ-মন্ডলে ।
সাত দিন জলবৃষ্টি হয় নিরন্তর
আছুক শস্যের কাজ হাজ্যা গেল শর ।
মাঝ্যায় পড়িল শিল বিদারিআ চাল
ভাদ্রপদ মাসে জেন পড়ে পাকা তাল
চণ্ডীর আদেশে ধায় বীর হনুমান
মট হুদ্রা ভাঙ্গযা করে খানখান ।
চারিদিকে ধায় ঢেউ পরবতবিশাল
উঠে পড়ে ঘরগুলা করে দল্মাল ।
ছন্দির আদেশে ধায় নদনদীগণ
অভয়ামঙ্গল গান শ্রীকবিকঙ্কন ।।
[Page 75]

8. ১২৪

চণ্ডীর আদেশে ধায় নদনদীগণ
কলিঙ্গ দেশের ১ সঙ্গে করিতে মিলন ।
আজ্ঞা দিল ভবানী চলিলা মন্দাকিনী
ছাড়িয়া গগন-স্থিতি
সঙ্গে মকরজাল ছাড়িআ পাতাল
চলিলা ভোগবতী ।
প্রবলতরঙ্গা ধাইল গঙ্গা
সঙ্গে দিনকর-সুতা ২
ধাইল দ্রুতপদ ষোল শয় মহানদ
সরযূ ধায় বেগজুতা ।
আমোদর দামোদর ধাইল দারুকেশ্বর
সিলাই চন্দ্রভাগা
কুবাই দাবাই ৩ ধাইল দুই ভাই
বাগটীর খাল ধায় বগা ।
ধাইল ঝুমঝুমি করিআ দামাদামি
ঘিআই মুণ্ডাই সঙ্গে
ধাইল তারাজুলি গুস্কারা কুতহলী
রত্না ৫ চলিলা রঙ্গে ।
খরতর-লহরী ধাইল গোদাবরী
কালা ধায় দামোদর
খালি জুলি সঙ্গে চলিলা রঙ্গে
বুড়া মন্তেশ্বর ।
ধাইল বরুণা গঙ্গা যমুনা
অজয় সরস্বতী
ধাইল কুন্তী কালা ধায় গোমতী
সরমা কংসাবতী ।
ধাইল কাঁসাই মহানদী বিড়াই
খরস্রোতা বামন্যার ৬ খানা
চারিদিগে জল হইল ধ্বল
কলিঙ্গ জুড়িআ ফেনা ।
বাজাইআ দণ্ডি মাকড়া ৭ চণ্ডী
নড়িলা সত্বর হইআ
সঙ্গে কালাঘাই চলিলা মহা নই
সুবর্ণরেখা লইআ ।
[Page 76]
নদনদী দেখিআ কৌতুকে অভয়া
উঠিল কেশরি-যানে
ললিত ছন্দে দ্বিজবর মুকুন্দে
পাচালী প্রবন্ধে ভনে ।।
[Page 76]

9. ১২৫

দুঃখিত কলিঙ্গরায় হাথি ঘোড়া ভ্যাসা যায়
অট্টলায় উঠে রামাগণ
মহলে প্রবেশে জল রহিতে নাহিক স্থল
খাট পালঙ্গ ভাসে নানা ধন ।
দেখিয়া জলের স্থিতি চিন্তিত কলিঙ্গপতি
সাজন করিআ আনে নায়
পরিবার সহিত রাজা করিআ তরির পুজা
আরহণ করে দণ্ডরায় ।
দেখিআ তোমার দোষ কোন দেব কৈল রোষ
মজিল তোমার জনপথ
কলধৌত দেহ দান সাধিবে দ্বিজের মান
বাড়িবেক তোমার সম্পদ ।
দ্বিজের বচন শুনি নরপতি মনে গুনি
কঙ্ক-অঞ্জলি দিল জলে
নদনদী পাইয়া মান রাজা সুস্থিরমতি
দ্বিজগণে দিল নানা ধন
রচিআ ত্রিপদী ছন্দ পাঁচালী করিআ বন্দ
বিরচিল শ্রীকবিকঙ্কন ।।
[Page 76]

10. ১২৬

বিষাদ ভাবিআ প্রজা করে ক্রন্দন
দুই চক্ষু হইল সভার ধারা শ্রাবণ ।
বুলন মণ্ডল বলে শুন মোর ভাই
হাজিল বিলের শস্য তারে না ডরাই ।
মহসাত করিল রাজা দিআ খাটদড়ি ১
প্রথম আঘনে ২ চাহি তেন তেহাই কড়ি ।
কেহ কেহ বলে ধন থুইয়াছিলাম চালে
চালের সহিত ধন ভাস্যা গেল জলে ।
দেশমুখ বলে ভাই শুন মোরে বোল
সভে ভাস্যা গেল মোর কাপাস সাত ডোল ।
ভান্ডু ৩ দত্ত বলে মোর কর্মের ফল
আমার দুআরে জল হইল অথল ৪ ।
উঠানে ডুবিআ মরি না জানি সাঁতার
জটে ধরি মাগু মোর করিল উদ্ধার ৫ ।
বুলন মণ্ডল গেল বীরের নগর
গাহিল পাচালী মুকুন্দ কবিবর ।।
[Page 76]

11. ১২৭

শুন ভাই বুলন মণ্ডল
আইস আমার পুর সন্তাপ করিব দূর
কানে দিব হেমকুন্ডল ।
আমার নগরে বৈস জত ভূমি চাষ চষ
সাত সন বৈ দিয় কর
হাল পীছে এক তঙ্কা না করিহ কারে শঙ্কা
পাটায় ২ নিসান মোরে ধর ।
নাঞি দিল বাউড়ি রয়্যা বস্যা দিহ কড়ি
ডিহিদার নাহি দিব দেশে
সেলামী বাঁশগাড়ী নানা বাবে জত কড়ি
নাহি দিব গুজরাট দেশে ।
পার্বণী পঞ্চক-জাত ওড়া-লোন সানা-ভাত
ধানকাটী কলম-কসুরে
জত বেচ চালু ধান তার নাহি নিব দান
অঙ্ক নাহী বাড়াইব পুরে ।
[Page 77]
জত বৈসে দ্বিজবর তার নাহি নিব কর
চাষভূমি বাড়ি দিব দান
হইআ ব্রাম্ভণের দাস পূরিব সভার আশ
জনে জনে সাধিব সম্মান ।
ভান্ডু ৩ দত্ত হেন কালে আসিআ মধুর বলে
মোর আগে কেবা পাব মান ৪
দামিন্যা-নগরবাসী সঙ্গীতে অভিলাষী
শ্রীকবিকঙ্কন রস গান ।।
[Page 112]

12. ১৮৮

উজানি নগর অতি মনোহর
বিক্রমকেশরী রাজা
শোল উপাচারে নিত্যে পুজা করে
কৃপা কৈল দশভুজা ।
[Page 113]
জেন রঘু রাজা হেন পালে প্রজা
কর্ণের সমান দাতা
যুধিষ্ঠির বাণী শুকদেব জ্ঞানী ১
প্রসন্ন মঙ্গলা মাতা ।
উজানির কোথা গড় চারিভিতা
চৌদিকে বেউড় বাঁশ
রাজার সামন্ত না পায় অন্ত
যদি ফিরে এক মাস ।
পাথরের গড় উচ্চতর বড়
কাঁঙ্গুরা পুরট-শোভা
পাথর খিচনি জেন দিনমুনি
চৌদিকে মানিক-আভা ।
নগরে নাগরি জেন বিদ্যাধরী
ভূষণভূষিত গায়
জতেক পুরুষ মনোহর-বেশ
পীড়িত বসন্ত-রায় ।
বিক্রমকেশর মহা ধনুধর ২
তথা আছে সদাগর
রাজার আদেশে ধনপতি বৈসে
জারে সুখী নৃপবর ।
লয্যা শিশুগণ বনিকনন্দন
পায়রা উড়াতে জায়
সঙ্গে শিশু শত লইআ পারাবত
শ্রীকবিকঙ্কন গায় ।।
[Page 119]

13. ২০২

শিব স্মঙরিয়া কৈল দুই আচমন
লহনা কনক থালে জোগায় ওদন ।
সুবর্ণের বাটিতে দুব্লা দেই ঘি
হাসিআ পরিষে বালা বানিআর ঝি ।
স্মঙরিল জগন্নাথ পরমপুরুষ
সুরনদীর জলে সাধু করিল গণ্ডূষ ।
প্রথমে শুকুতা ঝোল দিল ঘণ্ট সাক
প্রশংসা করএ সাধু বেঞ্জনের পাক ।
ঘৃতে জবজব খায় মীন মাংস বড়ি
বাদ কর‍্যা খায় ভাজা কৈ দুই বুড়ি ।
[Page 120]
অশ্বল খাইআ পিঠা জল ঘটী ঘটী
দধি খায় ফেনি তায় শুনি মটমটী ।
হাসিআ পরষে রামা করে হেম থালা
ললিত গমনে চলে বৈদগধি বালা ।
কটাক্ষে সাধুর হরিল লহনা
ভোজন করিআ সাঙ্গ কৈল আচমন
কর্পূর তাম্বুলে কৈল মুখের শোধন ।
চরণে পাউড়ি দিআ করিল গমন
বিনোদ মন্দির মাঝে করিল শয়ন ।
নিত্যকৃত্য করি রামা চলে পতিস্থানে
রতিরসে সদাগর ধরিল বসনে ।
লহনার হৃদে সাধু বিদ্ধে পঞ্চবাণ
হেনকালে লহনা করেন অভিমান ।
মনদুঃখে তারে রামা করে নিবেদন
অভয়ামঙ্গল গান শ্রীকবিকঙ্কন ।।
[Page 121]

14. ২০৫

ফাল্গুনে উত্তম মাস নিয়োজিত অধিবাস
আনন্দিত হৈল সদাগর
পুলকে পূর্ণিত মতি কহে সাধু ধনপতি
প্রিয়ভাষে কহেন উত্তর ।
সাধু করে আয়োজন চারিদিকে ধায় জন
কীনে বেচে হাটে নানা ধন
সাধুর আদেশ পায় ইছানি নগর জায়
ঘটক পন্ডিত জনার্দন ।
অধিবাসের লইআ সাজ চলিল ঘটকরাজ
কুলীন পন্ডিত পুরোহিত
আগু পাছু সারি সারি সজ্জ লয়ে জায় ভারি
গায়নে মঙ্গল গায় গীত ।
তৈল সিদ্দুর পান গুয়া বাটি ভর‍্যা গন্ধ চুয়া
বিদ দাড়িম্ব পাঁচ কাঠা
পাট ভর‍্যা নিল খই ঘড়া ভরা ঘৃত দই
সাজিআ সুরঙ্গ নিল বাটা ।
খিরপুলি গঙ্গাজল কান্দি কান্দি নারিকল
চিনির পুরিআ নিল গছ
চালুডালি মৎস্যরাশি জোড়ে জোড়ে নিল খাসী
সাঁজড়িআ ভারে নিল মাছ ।
সরষব পুটলি ভরা বান্ধ্যা নিল কল সরা
সুতা নিল নাটাই সহিত ।
সুরঙ্গ পাটের সাড়ি লইল রংন-কড়ি
বিদমালা সুবর্ণে জড়িত ।
চিনী-চাঁপা মর্তমান কড়ি লয় দিতে দান
হরিদ্রায় রঞ্জিত বসন
গোরোঢ়না দিল শঙ্খ চামর চন্দনপঙ্খ
ফুলমালা কজ্জল দর্পণ ।
কপালে জুড়িআঁ ফোঁটা বসিল পণ্ডিতঘটা
সগল্লাথ পামরি কম্বলে
কিথা কথুবায় ১ বান্ধা উপরে টানায় চাঁদ্দা
ধূপে আমোদিত কৈল স্থলে ।
[Page 122]
মহামিশ্র জগন্নাথ হৃদয়মিশ্রের তাত
কবিচন্দ্র হৃদয়নন্দন
তাহার অনুজ ভাই চন্ডীর আদেশ পাই
বিরচিল শ্রীকবিকঙ্কন ।।
[Page 156]

15. ২৬৯

মোর হাথ দিআ শিরে সমরপিয়া খুল্লনারে
গৌড় গেলে গড়াতে পঞ্জর
তোমার চরণ সত্য জননি সমান নিত্য
পালিলাঙ এক সম্বৎসর ।
নাহী রান্ধে নাহী বাড়ে শিরে দিআ আমলকি
আপনি উহার করি বেশ ।
[Page 157]
হরিদ্রা কুমকুম লয়্যা ঘরে ঘরে বুল চায়্যা
করিতে অঙ্গের মলা দূর
হিরা নিলা মুতি পলা কলধৌত কন্ঠমালা
আপুনি পরাই কর্ণপুর ।
জবে বেলা দন্ড দশ হেম-থালে ছয় রস
জুত অন্নে সাধি বহুমান ১
ভুঞ্জায়ি মৎস্যের ঝোলে শয়ন করাই কোলে
আপুনি জোগাই গুয়া-পান ।
খিরখন্ড কলা দধি ভেট পাই নানা বিধি
পুনর্বার না করিত বাস
সুখে থাকে মোর ঠাঞি নাহি গনে বাপ ভাই
নাঞি গেল বাপের নিবাস ।
আপনি ভাঙ্গায় তঙ্কা কাহারে না করে শঙ্কা
জত ইচ্ছা ২ তত করে ব্যয়
আমি [তারে] দেখি প্রাণ খায় পরে করে দান
কার তরে নাহী করে ভয় ।
একেলা ঘরে কৃত্য আপনি কঁরিহে ৩ নিত্য
খুল্লনার দুবলা কিঙ্করী
চিআইয়া খাওয়াই ভাত শুনহে পরাননাথ
কেবল তোমার ভয় করি
[Page 158]

16. ২৭২

হাটের কড়ি লেখা একে একে দিব বাপা
চোর নহে দুবলার প্রাণ
লেখা পড় নাহি জানি কহিব হৃদএ গনি
এক দণ্ড কর অবধান
হাটমাঝে পরবেশি আসি হরি মহঁজসি
ডাকে মীন-রাশ্যের কল্যাণ
আসিআ আমারে গঞ্জি শ্রবণ করাল্য পঞ্জি ১
তারে দিল কাহনেক দান ।
কান্ধেতে কুশের বোঝা আসিআ কুসাই ওঝা
বেদ পড়ি করিল আশীষ
ইছিআ তোমার যশ তারে পণ দশ
দক্ষিণা ধারিল বহু দিস ।
[Page 159]
বাজারে কর্পূর নাহী চাং্যা বুলি ঠাঞি ঠাঞি
জতনে পাইল পাঁচ তোলা
পাঁচ কাহনের দর পঁচিশ কাহন ধর
চারি কাহনের নিল কলা ।
আলু কচু সাক পাত আদি নানা বস্তুজাত
নিল চারি কাহন আষ্ট পণে
তৈল ঘি লবণ ছেনা পাঁচ কাহনের কিন্যা
খাসী নিল আষ্ট কাহনে ।
প্রবেশ করিতে হাট আমি তথা রাজভাট
কায়বার পড়ে উভহাথ
ইছিআ তোমার যশ তারে দিল পণ-দশ
কানা পড়িল পণ সাত ।
হাটে ফিরে অনুদিন সেক ফকীর উদাসীন
ব্যয় তথি সপ্তদশ বুড়ি
সঙ্গে ভারি দশ জন তারে দিল দশ পণ
আমি খাইনু চারি পণ কড়ি ।
প্রাণভয় দুয়া ২ কয় সাধু বলে নাঞি হয়
দুবলা করিল প্রাণপণ
জদি মিথ্যা হয় ভাষা কাটিহ দুয়ার নাস্য
বিরচিল শ্রীকবিকঙ্কন ।।
[Page 160]

17. ২৭৪

পতির আদেশ ধরি রান্ধেন খুল্লনা নারী
স্মঙরিআ সর্বমঙ্গলা
লোন ঘৃত তৈল ঝাল আনি নানা বস্তু হার
অনুচরী জোগায় দুবলা ।
বাগ্যন কুমড়া কছা কাঁচকলা তাহে মচা ২
বেসারি পিঠালি ঘন কাঠি
ঘৃতে সন্তলন তধি দিআ হিঙ্গু জিরা মেথি
শুক্তার রন্ধন পরিপাটি ।
ঘৃতে ভাজে পলাকড়ি নত্যা সাকে ফুলবড়ি
চিঙ্গড়ি কাঁঠালবিচি দিআ
ঘৃতে নালিতার সাক কটু তৈলে বাথুয়া পাক
খণ্ডে পেলে ফুলবড়ি ভাজিয়া ।
দুগ্ধ লাউ দিআ খণ্ড জ্বাল দিল দুই দণ্ড
সাঁতলন মহুরির বাসে
মুগসুপে ইক্ষুরস কৈ ভাজে গন্ডা দশ
মরিচ গুড় দিআ আদারসে ২ ।
মুসরিমিশ্রিত মাষ রান্ধে দিআ রসবাস
হিঙ্গ জীরা বাসে সুবাসিত
ভাজ্যা চিতলের কোল কাতলা মাছের ঝোল
মান বড়ি মরিচ ভূষিত ।
বোদালি হিলিঞ্চা সাক কাঠি দিআ ঘন পাক
সান্তনল কৈল কটু তৈলে
কিছু ভাজে বালিকড়া চিঙ্গিড়ার তোলে বড়া
খুরসালা পুঞ্জি দশ তোলে ।
করিআ কণ্টকহীন আম্রেতে শকুল মীন
খর লোন দিআ ঘন কাঠি
রান্ধএ পাকাল ঝষ দিআ তেঁতুলের রস
খিরী-রান্ধে জাল কারি ভাটি ।
কল-বড়া মুগ-সাঙলি খিরোসা খিরের পুলি
নানা পিঠে রান্ধে অবশেষে
অন্ন রান্ধে অবশেষে শ্রীকবিকঙ্কন ভাষে
পণ্ডিত রন্ধন-উপদেশে ।।
[Page 160]

18. ২৭৫

বিংশতি বেঞ্জন অন্ন করিআ রন্ধনে
দুবলা জানায় গিআ সাধু সন্নিধানে ।।
আইস আইস বলে তাঁরে চেড়ি দুবলা
বিদ্গদ সদাগর করে কিছু ছলা ।
চারি দণ্ড হব মোর আছে স্তবপাঠ
বান্ধবে ভুজায় আগে জাব দূরবাট ।
অবশেষে গৃহস্থের উচিত ভোজন
তার বোলে দুবল্য ভুঙ্গায় বন্ধুগণ ।
প্রশংসা করএ তারা সকল বেঞ্জনে
শুনি লহনার ভাসে লোচন-অঞ্জনে ।
সমপি ভোজন তারা করিল বিদায়
তাম্বুল বসন হেম সাধু গৃহে পায় ।
বান্ধবে বিদায় দিতে হইআ গেল সন্ধ্যা
খুল্লনা রূপসী অথা বসি আছে রান্ধ্যা ।।
[Page 161]
সন্ধ্যা সাঙ্গ করিআ করিল বহু স্তুতি
শালগ্রাম শিলা-জল পিল ধনপতি ।
দুবলা জোগায় জল পাখালিল পা
ভোজনমন্দিরে সাধু তুল্যা দিল গা ।
শিব স্মঙরিআ কৈল দুই আঁচমন
খুল্লনা কঙ্ক-থালে জোগায় ওদন ।
স্মঙরিল জগন্নাথ প্রধান পুরুষ
সুরনদীর জলে সাধু করিল গন্ডুষ ।
প্রথমে সুক্তা ঝোল ঘন্ট সাক সুপ
মীন মাংস ভজনে আপনা বাসে ভুপ ,
ঘৃতে জব জব খায় মীন মাংস বড়ি
বাদ কর‍্যা ভাজা কৈ খায় তিন কুড়ি ।
অম্বল খাইআ পিলা জল ঘটী ঘটী
দধি খায় ফেনি তার করে মটমটী ।
মঁনে ভোজনে সাধু করে বার মাস
ভোজন করিআ সাধু করে উপহাস ।
জতেক বেঞ্জন খাইল প্রীত নাহী তথি
টাবা হইতে পাইল প্রিয়ে বড়ই পিরীতি ।
হাস্যা হাস্যা দিল রামা নিজ অঙ্গ তোলা
ভূম্যে গড়াগড়ি দিআ হাসএ দুবলা ।
হেট মুখে ধনপতি রহিল বিমনা
হরিদ্রা গুলিআ অঙ্গে দিলেন খুল্লনা ।
হরিদ্রা পাইআ সাধু কর অনুমান
হেন কালে মনে পড়ে অভিধান ।
রজনি পর্যায় জানি হরিদ্রা আখ্যান
হেন বুঝি ছলে রামা দিল নিশা দান ।
ভোজন সঙ্কলি আচমন কুতূহলে
কর্পূরতাম্বুল খায় হাসে খলখলে ।
সাধুর ইঙ্গিত দাসী বঝিল সত্বরে
শয্যা বিছাইতে গেল বিনোদ মন্দিরে ।
অভয়াচরণে মজুক নিজ চিত
শ্রীকবিকঙ্কন গায় মধুর সঙ্গীত ।।
[Page 162]

19. ২৭৭

চরশে পাউড়ি সাধু করিল গমন
বিনোদ মন্দিরে গিআ দিল দরশন ।
কর্পূরতাম্বুলে কৈল মুখের শোধন
অঙ্গে আরোপিল সাধু কুমকুম চন্দন ।
পদ্মনাভ স্মঙরিআ করিল শয়ন
ভোজন করএ এথা দাসদাসীগণ ।
রন্ধনে খুল্লনা আছে রসইর শালে
সাধু সম্ভষিতে বাঁজি জায় হেন কালে ।
সদাগর জানি তারে মাগে আলিঙ্গন
এই হেতু হরে চণ্ডী সাধুর জীবন ।
ভোজন করিতে দুয়া ডাকে লহনারে
গঞ্জিআ লহনা কিছু বলে উচ্চস্বরে ।
জে কালে রান্ধিতে ঢাঁটী নিল গুয়া পান
বচনেক নাঞি মোরে কৈলে অবধান ।
আমা সনে বিচার না কৈল গর্ব করি
এখন খাইব ভাত পেটে পারা মারি ।
বাসি পান্ত ভাত ছিল সরা দূর তিন
তাহা খায়্যা লহনা কিনিঞা আছে দিন ।
ঘরের প্রধান তুমি বড় সভাকারে
তোমার সকল তুমি মান কর কারে ।
চারি পাঁচ দুঃখ মোর হইআা গেল জড়
তিলকে অধিক ছোট কিসে আমি বড় ।
লহনা দুবলা মেলি জত কিছু ভনে
কপাটের আহড়ে খুল্লনা সব শুনে ।
সম্ভ্রমে আসিআ তার ধরিল চরণ
ঘুচিল কন্দল দুহেঁ করিল ভোজন ।
এক জন সইলে কন্দল জায় দূর
বিশেষে জানএ চক্রবর্তী ঠাকুর ।।
[Page 167]

20. ২৮৯

প্রথম জৈষ্ঠে গেলা প্রভু গড়াতে পঞ্জর
প্রবলা সতিনী ঘরে হইল সতন্তর ।
ছাগল রাখিতে পত্র আইল জেই দণ্ডে
আকাশ ভাঙ্গিয়া পড়ে খুল্লনার মুণ্ডে ।
কত করিব মিনতি কত করিব মিনতি
কেশে ধর‍্যা লহনা মারিল কিল লাথি ১ ।
প্রভু শুন সদাগর প্রভু শুন সদাগর
জানায়্যা তোমার পদে মুঞি জাইব নাইয়র ।
আষাঢ়ে গর্জএ ঘন নাচএ ময়ূর
নবজল মদে মত্ত ডাকএ দাদুর ।
বড় অভাগ্য মনে গুনি বড় অভাগ্য মনে গুনি
ছাগল চরাত্যে স্থান নাহীক অবনি ।
[Page 168]
শ্রাবণে বরিষে ঘন দিবস রজনি
সিতাসিত দুই পক্ষ একই নয়া জানি ।
কাননে রাখিএ ছেলি শিরে বৃক্ষপাতা
ফিরি একাকিনী কারে কর দুঃখকথা ।
ছাগল চরাই লয়্যা পখুরের পাড়ে
দারুণ ছাগল নাহী থাকএ নিয়ড়ে ।
প্রচণ্ড বাদল ঝড় ভাদ্রপদ মাসে
নদনদী একাকার কত বান আইসে ।
আছএ শুখান শুধু সরোবর-আড়া
শতেক পসলা তাহে আইসে ছাগ-তাড়া ।
ভাদ্র-মাসের বৃষ্টিধারা বাজে জেন শেল
তিন দিন বই জে লহনা দেই তেল ।
আশ্বিনে করিল নাথ বড় মনোরথে
শুনিল পঞ্জর লয়্যা তুমি আইস পথে ।
অন্বেষণ ২ ব্রতে আরাধি ভগবতী
অভাগ্যর ফলেতে নয়া আইসে প্রাণপতি ।
লহন পরএ প্রভু নানা অলঙ্কার
বিনু তৈলে কেশ মোর হইল জটাভার ।
কার্তিক মাসেতে হৈল হিমের প্রকাশ
জগজন কৈল শীত নিবারণ বাস ।
ছয় মাষ খুঞা বাস হয়্যা গেল গুড়া
লহনা প্রসাদ কৈল একখানি মুড়া ।
দুঃখে কর অবধান দুঃখে কর অবধান
জানু ভানু কৃশানু শীতের পরিত্রাণ ।
মাস মধ্যে মাইশ্র আপনে ভগবান
হাটে মাঠে গোঠে গৃহে সভাকার ধান ।
উদর পুরিআ অন্ন দৈবে দিল জদি
যম সম শীত তথি নিয়োজিল বিধি ।
অজাশালে আমার শয়ন অজাশালে আমার শয়ন
অঙ্গে দিতে নাহী বাস খোসলা ওড়ন ।
পৌষে করএ লোক নানা উপভোগ
সভার বসন বিধি করিল সংযোগ ।
লহনা প্রসাদ কৈল পুরান খোসলা
উড়িতে সকল অঙ্গে বরিসএ ধূলা ।
কত দুঃখ মনে গুণী কত দুঃখ মনে গুণী
ধুলিভএ শয়নে নয়ন নাহী মেলী ।
মাঘমাসে অনিবার সদাই কুঝটী
তৃণ লোভে ধায় ছেলি নয়া আইসে নেউটী ।
দৈবযোগে এক পাঁটি ৩ খাইল শৃগালে
অবনি বিদরে জদি প্রবেশি পাতালে ।
কত করিনু মিনতি কত করিনু মিনতি
কেশে ধর‍্যা লহনা মারিল কীল লাথি ।
ফাল্গুনে দীঘল শীত মলয় পবন
খণ্ড খণ্ড হইলে মোরে খুঞার বসন ।
কাষ্ঠ কুড়াইয়া আনি গহন কাননে
বিহান বিকাল জায় অগ্নির সেবনে ।
প্রভু শয়ন ঢেঁকিশালে প্রভু শয়ন ঢেঁকিশালে
নিদ্রা নাহি খুদ্যা ৪ পিপীলিকার জালে ।
চৈত্রে চাতক জল মাগে জলধরে ৫
কমলে লোটএ মধু ভ্রমরী ভ্রমরে ।
বনিতাপুরুষ-অঙ্গ পিড়ে মদন
আমার পীড়িত অঙ্গ উদরদহন ।
নিদারুণ কর্মদোষে নিদারুণ কর্মদোষে
বিধাতা বঞ্চিল মোরে তুমি নাহী বাসে ।
শুভচন্দ্র হইল মোরে প্রবেশে বৈশাখ
চণ্ডীর কৃপায় দূর হইল বিপাক ।
তোমার আগতি-বার্তা পাইআ লহনা
দিন দুই চারি মোর করিল মাননা ।
এবে আমি ছাগীগণ নাহি রাখি এবে আমি ছাগীগণ নাহি রাখি ৬
দিন কথ লহনা আমারে হইল সুখী ।
সাধু সঙ্গে খুল্লনা জতেক কিছু ভনে
কপাটের আহড়ে লহনা সব শুনে ।
সাধু ভরৎসিতে রামা সাম্ভাইল ঘড়
বারমাসী গাইল মুকুন্দ কবিবর ।।
[Page 190]

21. ৩২৮

পঞ্চাশ বেঞ্জন অন্ন করিল রন্ধনে
দুবলা জানায় গিআ সাধু সন্নিধানে ।
ভোজনে বসিল জত জ্ঞাতিবন্ধু জন
খুল্লনা কনকথালে জোগায় ওদন ।
[Page 191]
সুবর্ণের গাড়ুতে লহনা দেই ঘি
হাসিআ পরসে রামা বানিঞার ঝি ।
প্রথমে সুকুতা ঝোল সুপ ঘন্ট সাক
প্রশংসা করএ সভে রন্ধনের পাক ।
ভাজা মীন ঝোল ঘন্ট মাংসের বেঞ্জন
গন্ধে আমোদিত হইল সাধুর ভবন ।
প্রশংসা করএ সভে সকল বেঞ্জন
শুনি লহনার খসে লোচনে অঞ্জন ।
দধি পিঠা খান সভে মধুর পায়স
ভোজন করিআ সভে লাজে হৈল বশ ।
ভোজন করিআ সভে সাঙ্গ কৈল আচমন
কর্পূর-তাম্বুলে কৈল মুখের শোধন ।
হব্যঋষি পাইল মান সায়বনি দোলা
চন্দন চৌখুরী দিল ১ ঝারি কন্ঠমালা ।
কাশ্যপ পাইল মান পাটের পাছড়া
দূর্বারিসী পাইল মান চড়নের ঘোড়া ।
কৌসিখি পাইল মান সুবর্ণের ঝারি
সাতগাঁয়ের বান্যা পাইল বিচিত্র পামরি ২।
অঙ্গে অঙ্গে প্রতি সঙ্গে পাইল কাপড়
বিরতি বার্তান লিখ্যা দিলেন গৌরব ।
বিদায় করিআ সাধু জ্ঞাতিবন্ধুগণে
প্রভাতে চলিল সাধু রাজসম্ভাষণে ।
বিপদসাগরে সদাগর হয়্যা পার
রাজসম্ভাষণে চলে রাজার দুয়ার ।
ভার দশ দধি কল চাঁপা মর্তমান
দোখণ্ড সরস গুয়া বিড়বিন্ধা পান ।
গছে বান্ধ্যা নিল ভেট ঘৃত দশ ঘড়া
সগল্লাথ খা দুই খান দশ গড়া ।
কান্দি দশ নিলেন বাঙন নারিকল
ঘড়ায় পুরিআ নিল নাড়ু গঙ্গাজল ।
ভেট দিআ নৃপবরে করিল প্রণতি
হেন কালে পুরাণ শুনেন নরপতি ।
পাঠক পুরাণ গায় জ্যৈষ্ঠমহিমা
জ্যৈষ্ঠে চন্দনদান সুকৃতির সীমা ।
মহাযোগ করি [কহে] জ্যৈষ্ঠ পূর্ণিমাশী
ইহাতে পূজিলে হরিহর স্বর্গবাসী ।
ইন্দ্র আদি দেব আইসে আগুবাড়ান
দিব্য গায়নে তার গায় সন্নিধান ।
জেই জন চন্দনে করে হরিসঙ্কীর্তন
ভারথমন্ডলে তার সফল জীবন ।
জেই জন চন্দনে করএ হরিপূজা
সাতদিন অবনিতে সেই হৈ রাজা ।
শিবের দুয়ারে জেবা করে শঙ্খধ্বনি
অভিমত বরদানে শিব তার রিনি ।
চামর ঢুলায় জেবা হরি সন্নিধানে
স্বর্গলোকে জায় সেই চাপিআ বিমানে ।
অধ্যয়ন সমাধান দ্বিজে বান্ধে পুথি
ভান্ডারি চন্দন আন বলে নরপতি ।
চন্দনের তরে রাজা ভান্ডারি ডাকিআ
আরতি দিলেন তার হাথে পান দিআ ।
জে কিছু চন্দন ছিল ভান্ডার ভিতর
ভান্ডারি আনিঞা দিল রাজার গোচর ।
ভান্ডারি আসিআ নৃপে করে নিবেদন
পাচালি রচিল দ্বিজ শ্রীকবিকঙ্কন ।।
[Page 202]

22. ৩৪৯

ঈশানে উরিল মেঘ সঘনে চিকুর
উত্তরে পবনে ১ মেঘ ডাকে দুরদুর ।
নিমিষেকে জোড়ে মেঘ গগনমন্ডল
চারি মেঘ বরিসে মুসলধারে জল ।
নদী খালে বৃষ্টি জলে উথলে মগরা
কুল জুড়্যা বহে জল একাকার ধারা ।
ঝনঃঝন বৃষ্টি শিলা সঘনে বিজুলী
দেহারা পাতিল আঠার খালি জুলী ।
চারি মেঘে জল দেই অষ্ট গজরাজ
সঘনে চিকুর পড়ে বেঙ্গতড়কা বাজ ।
করিকর সমান বরিষে জলধারা
জলে মহী একারার পুরী হইল হারা ।
পরিচ্ছিন্ন ২ নাহী সন্ধ্যা দিবস রজনী
নায়ের জতেক লোক স্মঙরে জৈমুনি ।
রইঘরে পড়ে শিল বিদারিআ চাল
ভাদ্রপদে মাসে জেন পড়ে পাকা তাল ।
চন্ডীর আদেশে বীর ধায় হনুমান
ডিঙ্গার ছাওনি ভাং্যা করে খানখান ।
ডিঙ্গায় ডিঙ্গায় বীর করে ডুসডুসি
কৌতুকে হাসেন মাতা সিংহরথে বসি ।
নদনদী সব জত করিল পয়ান
অভয়ামঙ্গল কবিকঙ্কন গান ।।
[Page 202]

23. ৩৫০

চণ্ডীর আদেশে ধায় নদনদীগণ
মগরা নদীর সাথে করিতে মিলন ।
আজ্ঞা দিল ভবানী চলিলা মন্দাকিনী
ছাড়িয়া গগনস্থিতি
সঙ্গে মকরজাল ছাড়িআ পাতাল
চলিলা ভোগবতী ।
প্রবলতরঙ্গা ধাইল গঙ্গা
ভৈরবী কর্মনাশা
ধাইল দ্রুতপদ সোল সয় মহানদ
ধাইল বাহুদা বিপাশা ।
আমোদর দামোদর ধাইল দারুকেশ্বর
সিলাই চন্দ্রভাগা
কুবাই দনাই ৩ ধাইল দুই ভাই
বগাড়ির খাল বগা ।
ধাইল ঝুমঝুমি করিআ দামাদামি
ঘিআই মুণ্ডাই সঙ্গে
ধাইল তারাজুলি গুস্কারা কুতহলী
রত্না ২ চলিলা রঙ্গে ।
খরতর-লহরী ধাইল গোদাবরী
কানা ধায় দামোদর ৩
খালি জুলি সঙ্গে চলিলা রঙ্গে
বুড়া মন্তেশ্বর ।
ধাইল বরুণা গঙ্গা যমুনা
অজয় সরস্বতী
ধাইল কুন্তী কালা ধায় গোমতী
সরজূ কংসাবতী ।
[Page 203]
ধাইল কাঁসাই মহানদী বিড়াই
খরস্রোতা বামন্যার খানা
চারিদিগে জল হইল ধ্বল
মগরা জুড়্যা বয় ফেনা ৭ ।
বাজাইআ দণ্ডি মাকড়া চণ্ডী
নড়িলা সত্বর হইআ
সঙ্গে কালাঘাই লইয়া সাতভাই
স্বর্ণরেখা লৈয়া ৮ ।
ভাটীর নদীগণ ধাইল একমন
নাকে জেন দিআছে সুত্র
চন্ডীর আদেশে পাইলে প্রবেসে
জুড়্যা ধায় ব্রম্ভপুত্র ৯ ।
কৌতুকে অভয়া নদনদী দেখিয়া
রহিলা কেশরিযানে
ললিত ছন্দে দ্বিজবর মুকুন্দে
পাঁচালি প্রবন্ধে ভনে ।।
[Page 203]

24. ৩৫১

কান্ডার ভাই রাখ জেথা পাও স্থল
ঐরি হইল দেবরাজ বেঙতড়কা পড়ে বাজ
বরিষে মুষলধারে জল ।
ডিঙ্গা ফিরে জেন চাক বারেক জীবন রাখ
নাহি জানি কিবা গ্রহফল
নাহি জানি দিবা রাতি ঝড়ে ডিঙ্গা হয়ে কাটি
ঝলকে ঝলকে লয় জল ।
শিল বাজে জেন গুলি ভাঙ্গিল মাথার খুলি
বেগে জল জেন বাজে কাঁড়
বিষম জলের ভয় ঝড়ে প্রাণ স্থির নই
ডাঁড়িয়া ধরিতে নারে ডাঁড় ।
দুঃসহ ১ বিষম ঝড়ে উপাড়িয়া গাছ পড়ে
দুকুল হানিঞা বয় খানা ২ ।
আট্মুখে বহে বায়ু পর্বতসমান ঢেউ
রাশি রাশি কত বহে ফেনা ।
দেখরে ডিঙ্গার পাশে মকর কুম্ভির ভাসে
গিরিগুহা-বিকট দশন
বিষম জলের ভয় তৃণ দুইখান হয়
আজি দেখি সঙ্কট জীবন ।
ঝড়ে আচ্ছাদন উড়ে বিষ্টি জলে ডিঙ্গা বুড়ে
নাইয়া পাইক জড় হইল শীতে
কহ কর্ণধার ভাই কেমনে নিস্তার পাই
জলে অহি ভাসে শতে শতে ।
ডুবু ডুবু করে ডিঙ্গা স্মঙরণ করহ ৩ গঙ্গা
অন্তকালে ভজ পশুপতি
দারুণ দৈবের ফলে হইনু বন্দি মায়াজালে
পশুপতি বিনে নাহি গতি ।
পড়িআ বিষম ফন্দি মহেশ বলিআ কান্দে
ঊরধ্ববাহু সাধু ধনপতি
চন্ডিকা শুনিতে পান শ্রীকবিকঙ্কন গান
দামুন্যায় জাহার বসতি ।।
[Page 203]

25. ৩৫২

পদ্মা কেন আনাইলাঙ নদ নদী
ডুবাইলে সাধুর নায় শঙ্কর ধরিব দায়
তখন করিবে কোন বুদ্ধি ।
হইআ সাধু শুদ্ধমতি নিত্য পুজে পশুপতি
একভাবে সেবকবৎসলে
সাধু সনে কৈল বাদ হইল বড় পরমাদ
কেন বা ডুবাই ডিঙ্গা জলে ।
[Page 204]
শুন্যাছি শঙ্কর স্থানে দেবগণ বিদ্যমানে
আগে ধনপতির গণন
শিলাবিষ্টি বাজ পড়ে সাধু জদি মরে ঝড়ে
দূর হব আমার মানন ।
জেই পুজা করে হর তারে মোর লাগে ডর
ব্রম্ভবধ সম তার বধ
সদাগরে দিলে দুঃখ প্রভু না চাহিব মুখ
পদে পদে আমার বিপদ ।
জাকু নদনদীগণ মেঘে দেহ বিসর্জন
মন্দিরে চলুক হনুমান
শিবপদে দিআ মতি সুখে জাকু ধনপতি
অবিলম্বে জাউক পাটন ১ ।
মহামিশ্র জগন্নাথ হৃদয়মিশ্রের তাত
কবিচন্দ্র হ্রদয়নন্দন
তাহার অনুজ ভাই চন্ডির আদেশ পাই
বিরচিল শ্রীকবিকঙ্কন ।।
[Page 230]

26. ৪০৩

দেবত্বষ্টা ১ বিশ্বকর্ম তার পুত্র দারু ব্রম্ভ
শিরে ধরি চণ্ডিকার পান
চারি প্রহর রাতি জ্বালিয়া রত্নের বাতি
সাত ডিঙ্গা করএ নির্মাণ ।
হনুমন্ত মহাবীর নখে করে দুই চির
কাঁঠাল পিয়াল তাল সাল ২
গাঁম্ভারি তমাল ডহু নখে চির‍্যা রাখে বহু
দারুব্রম্ভে জোগায় গজাল ।
শিলায় সানায়্যা বাশি পাটি চাঁছে রাশি রাশি
নানা ফুলের বিচিত্র কলস
পিতা পুত্রে দোঁহে আঁটি গজালে গাঁথিয়া পাটী
গড়ে ডিঙ্গা দেখিতে রুপস ।
প্রথমে করিল সজ দিঘে ডিঙ্গা শত গজ
আড়ে গজ বিংশতি প্রমাণ
মকর-আকার মাথা গজেক অন্তরে বাতা
মানিকে করিল চক্ষুদান ।
গড়ে ডিঙ্গা মধুকর মধ্যে জার রইঘর
পাশে গুড়া বসিতে গাবর
দিসারু বসিতে পাট উপরে মালুম-কাট
পাছে গড়ে মানিক-ভান্ডার ।
গড়ে ডিঙ্গা সিংহমুখী নামে ডিঙ্গা গুয়ারেখি
আর ডিঙ্গা নামে রণজয়া
অপরূপ রূপসীমা গড়ে ডিঙ্গা রণভীমা
গড়নি পঞ্চনি ৩ মহাঁকায়া ।
গড়ে ডিঙ্গা সর্বধরা হিরামুনী চন্দ্রতারা ৪
আর ডিঙ্গা নামে নাটশালা
বাছিআ কাঁঠাল শাল গড়ে দণ্ড-কেরুয়াল
ডিঙ্গাশিরে বাঁন্ধিল মুড্যালা ।
সাত ডিঙ্গা করি সাঁঙ্গে আনে ভ্রমরার গাঁঙ্গে
কোলে কাখে কর‍্যা হনুমান
নিশা হইল অবসান সভে গেল নিজস্থান
শ্রীকবিকঙ্কন রস গান ।।
[Page 231]

27. ৪০৬

বদল আশে ১ নানা ধন নায়ে দেয় ভরা
আট দিগে হইতে আনে কর‍্যা বড় ত্বরা ।
কুরঙ্গ বদলে তুরঙ্গ পাব নারিকেল বদলে শঙ্খ
বিড়ঙ্গ বদলে লবঙ্গ পাব সুন্টের বদলে টঙ্ক ।
কুরঙ্গ ২ বদলে মাতঙ্গ পাবি পায়রার বদলে শুয়া
গাছফল বদলে জায়ফল পাব বয়ড়ার বদলে গুয়া ।
সিন্দুর বদলে হিঙ্গুল পাব গুঞ্জার বদলে পলা
পাটশণ বদলে ধবল চাঁমর কাঁচের বদলে নিলা ।
চিনির বদলে দানা-কর্পূর আলতার বদলে নাটি
সগল্লাথ পামরি কম্বল পাব বদল করিআ পাটি ।
হরিদ্রা বদলে গোরোচনা পাব পাগের বদলে গড়া
সুক্তার বদলে মুক্তা পাব ভেড়ার বদলে ঘোড়া ।
আকন্দ বদলে মাকন্দ পাব হরিতাল বদলে হীরা ।
মাস মুসুরি বদলে তন্ডুল বরবটি যব গোম মাড়ুয়া ছোলা
তৈল ঘি ঘটে বলদে শকটে লবণের ভাঙ্গিল গোলা ।
জগদবতংসে পালধি বংশে নৃপতি রঘুরাম
শ্রীকবিকঙ্কন করে নিবেদন চন্ডী পুর তার কাম ।।
[Page 231]

28. ৪০৭

শুভক্ষণে নানা ধন নাএ দিআ ভরা
রাজসম্ভাষণে হইল্য শ্রীমন্তের ত্বরা ।
ভার দশ দধি কলা চাঁপা মর্তমান
দোখণ্ডি সরস গুয়া বিড়াবিন্ধা পান ।
গছে বান্ধ্যা নিল ভেট ঘৃত দশ ঘড়া
সগল্লাথ খান দুই খান দশ গড়া ।
কিঙ্কর করিআ দিল দোলার সাজন
আগে পাছে নায়্যা পাকি ধায় শত জন ।
আশ-গাড়ু পাশ-গাড়ূ সিয়রে মেচলা
পতুনি পাত্যাছে তায় পামরি আঁচলা ।
বিচিত্র দোলায় সাধু হেলিআ চলে গা
আশে পাশে পড়ে শ্বেত চাঁমরের বা ।
জোগানিআ পাইক চলে সাধুর জোগানে
ডানি বাঁমে সিঙ্গা কাড়া টমক নিশানে ।
রাজসভায় সাধু হইল উপনীত
প্রণাম করিআ ভেট এড়ে চারি ভিত
অভয়াচরণে মজুক নিজ চিত
শ্রীকবিকঙ্কন গায় মধুর সঙ্গীত ।।
[Page 253]

29. ৪৩৮

কান্দি কান্দি লইল বায়ন-নারিকল
ঘড়ায় পুরিআ চিনি লাড়ু গঙ্গাজল ।
জোড়ে জোড়ে নিল খাসী জুঝারিআ ভেড়া
পর্বতিআ টাঙ্গন তাজি নিল দিব্য ঘোড়া ।
ভার দশ দধি কলস চাঁপা মর্তমান
দোখণ্ড সরস গুয়া বিড়বিন্ধ্যা পান ।
গছে বান্ধ্যা ফেট নিল ঘৃত দশ ঘড়া
খান দশ সগল্লাথ খান দশ গড়া ।
কিঙ্কর করিআ দিল দোলার সাজন
তুরিত গমনে সাধু করিল গমন ।
বরুণের সাঁজকুড়া কনক আকুড়া
হিরামুখি নামে জায় চন্দের পুড়া ।
উপরের ছাওনি দিল পাটের পাছড়া
চারিদিকে শোভে গজমুকুতার ঝারা ।
ময়ূরপাখের তায় লাগিছে ছাওনি
বেনন পাটের খোপ রসের দাপনি ।
দোলার উপরে সদাগর হেলে গা
ডানি বামে লাগে শ্বেত চামরের বা ।
নানা দ্রব্য ভেটে লৈয়া করিল গমন
আগে পাছে ধায় পাইক শতশত জন ।
রাজার সভায় গিআ হইল উপনিত
প্রণাম করিআ ভেট এড়ে চারি ভিত ।
বামদিগে এড়ে সাধু বদলের সাজ
পরিচয় চাহেন নৃপতি মহাঁরাজ ।
অভয়াচরণে মজুক নিজ চিত
শ্রীকবিকঙ্কন গায় মধুর সঙ্গীত ।।
[Page 253]

30. ৪৩৯

কর অবগতি শুন নরপতি
গৌড় দেশে মোর বাস
বিক্রমকেশরী সাজি সাত তরি
পাঠাইল তব পাশ ।
[Page 254]
চামর চন্দন শঙ্খ আদি ধন
নাহিক রাজভান্ডারে
রাজ-আজ্ঞা পায়্যা আইনু সিন্ধু বায়্যা
তোমার এই সফরে ।
গন্ধবান্যা জাতি উজবনি স্থিতি
দত্তকুলে উৎপতি
অজয়ের তটে গঙ্গার নিকটে
বসি নাম শ্রীয়পতি ।
রাজা মহাশয় চাপে ধনঞ্জয়
প্রজার পালনে রাম
প্রতাপে নির্মল জেন গঙ্গাজল
সদাই কৃষ্ণ ধেয়ানে
শুনেন অভিরথ পুরাণ ভারথ
দ্বিজে-দেই হেমদানে ।
বিদ্যাবিশারদ দন্তীর সম্পদ
অশ্বের শিক্ষায় নল
সর্বজন সুখী কেহ নহে দুখী
রাজ্যে নাহি তার ছল ।
সাধুর ভারথি শুনি নরপতি
দ্রব্যের জিজ্ঞাসে কথা
রচিআ সুছন্দ গাইল মুকুন্দ
চণ্ডীর মঙ্গলগাথা ।।
[Page 254]

31. ৪৪০

বদলাশে নানাধন আন্যাছি সিংহলে
জে দিলে জে বদল হয় শুন কুতুহলে ।
কুরঙ্গ বদলে তুরঙ্গ দিবে নারিকেল বদলে শঙ্খ
বিড়ঙ্গ বদলে লবঙ্গ দিবে সুন্ঠের বদলে টঙ্ক ।
কুরঙ্গ বদলে মাতঙ্গ দিবে, পায়রার বদলে শুয়া
গাছফল বদলে জায়ফল দিবে বয়ড়ার বদলে গুয়া ।
সিন্দুর বদলে হিঙ্গুল দিবে গুঞ্জার বদলে পলা
পাট-শণ বদলে ধবল চামর কাঁচের বদলে নীলা ।
লবণ বদলে সৈন্ধব ১ দিবে জয়ানি বলদে জিরা
চঞের বদলে চন্দন দিবে পাগের বদলে গড়া
মাষ মুসরি তণ্ডুল বদরি বরবটী বাটুলা চিনা
বলদে শকটে ঘি ঘটে সদাগর আনিঞাছে কিন্যা ।
গোধূম খুড়্যা মুগমাষ মাড়ূয়্যা তিল যব আন্যাছি ছোলা
কিনিঞা বহুতর আনিঞাছে সদাগর লবণের পাতিআ গোলা ।
জগদবতংশে পালধিবংশে নৃপতি রঘুরাম
শ্রীকবিকঙ্কন করএ নিবেদন অভয়া পুর তার কাম ।।
[Page 292]

32. ৫০৪

বৈশাখে দুরন্ত রিতু সুখের সময়
প্রচণ্ড তপনতাপ তনু নাহী সয় ।
চন্দনাদি তৈল অঙ্গে সুশীতল ধারি
সাঙলি ১ গামছা দিব ভুষিত ২ কস্তরি ।
[Page 293]
পুণ্য বৈশাখ মাস পুণ্য বৈশাখ মাস
দান দিআ পুরিবে দ্বিজের অভিলাষে ।
নিদারুণ জ্যৈষ্ঠ মাসে প্রচণ্ড তপন
পথ পোড়ে খরতর রবির কিরণ ।
শীতল চন্দন শ্বেতচামরের বা
বিনোদমন্দিরের থাক নয়া চড়িহ না ।
নিদাঘ জ্যৈষ্ঠ মাসে নিদাঘ জ্যৈষ্ঠ মাসে
পুরিব উদর মিস্ট আম্রের রসে ।
আষাড়ে গর্জএ ঘন নাচএ মউর
নবজলমদ-মত্ত ডাকএ দাদুর ।
আমার মন্দিরে থাক না চলিহ পুর
শালি-অন্ন মধু খণ্ড ভুঞ্জাব প্রচুর ।
আষাড়ের সুখহেতু আষাড়ের সুখহেতু
নিদাঘ বরিষে হিম একা তিন রিতু ।
সঙ্কট সময় বড় ধারা শ্রাবণ
সাধ লাগে অঙ্গে দিতে রবির কিরণ ।
জলধর বরিষয় আট দিগে বায়
বিনোদ মন্দিরে থাক না চড়িহ নায় ।
পুরিব তোমার অভিলাষ পুরিব তোমার অভিলাষ
নিউরিষ শুখানা মন্দিরে নাথ বাস ।
ভাদ্রপদ মাসে বড় দুরন্ত বাদল
নদনদী একাকার আট দিগে জল ।
ডাঁস-মশা নিবারণে পাটের মসারী
চামর বাতাস দিব হয়্যা সহচরী ।
প্রাণনাথ সৌধ ৩ ঘরে কর বাস প্রাণনাথ সৌধ ৩ ঘরে কর বাস
আর না করিহ দূর বাণিজ্যর আশ ।
আশ্বিনে অম্বিকাপূজা করিবে হরিষে
শোলো উপাচারে ছাগ মেষ মহিষে ।
তত ধন দিব আমী জত দেহ দান
সিংহলের লোক জত সাধিবে সম্মান ।
আমী বুঝাব রাজায় আমী বুঝাব রাজায়
আনাইব জননি তব সত্ত-মায় ।
বিষ্টি টুটাইআ আইল কার্তিক মাসে
দিবসে দিবসে হয়ে হিমের প্রকাশে ।
তুলি পাড়ি পাছুড়ি করিব নিয়োজিত
অর্ধরাজ্যে দিব বাপে করায়্যা ইঙ্গিত
পুণ্য কার্তিক মাস পুণ্য কার্তিক মাস
দান দিআ পুরিবা মনে অভিলাশ
সকল নূতন শস্য অগ্রহায়ণ মাস
ধান চালু সরিসাতে পুরিবে আওবাস ।
রাজাকে মানিআ দিব শতেক খামার
ধান চালু সরিসাতে পুরিবে হামার ।
পুণ্য মাইসর মাস পুণ্য মাইসর মাস
বিফল জনম তার জার নাহী চাষ ।
[ তুলি তুলবটি তৈল তাম্বুল তপনে
তরুণী তপন তোয় তসর বসনে । ৪]
পৌষে গোঙাইব নাথ অষ্ট প্রকারে
মৎস্য মাংস মধু মূলা নানা উপহারে ।
সুখে গোঙাইব হিম সুখে গোঙাইব হিম
উজানি নগর জেন বাসিবে নিম ।
মাঘ মাসে প্রভাতে করিআ স্নানদান
সুপাঠক আন্যা দিব সুনিবে পুরাণ ।
মিষ্ট অন্ন পায়স জোগাবে দিসদিস ৫
আনন্দে করিবে মাঘ মাসে নিরামিষ ।
মাঘ মাসে রহিবে কুতূহলে মাঘ মাসে রহিবে কুতূহলে
শীতল জোগাব আমী বিহানবিকালে ।
ফাল্গুনে ফুটিল নাথ মম উপবনে
তথি দোলমঞ্চ নাথ করিব নির্মাণে ।
হরিদ্রা কুমকুম চুয়া করি সুবসিত ৭
ফাগুদোলে আনন্দে গোঙাব নিতে নিতে ।
[Page 294]
সখি মেলি গাইব গীত সখি মেলি গাইব গীত
আনন্দে শুনিবে নাথ ৮ শ্রীকৃষ্ণচরিত ।
মধুমাসে মলয়মারুত মন্দ মন্দ
মালতীএ মধুকর পীয়ে মকরন্দ ।
মালতি মল্লিকা চাঁপা বিছায়্যা শয়নে
মধুমাসে গোঙাইব মুদিত রাত্রিদিনে ।
মোহন মধুমাসে মোহন মধুমাসে
মদনমন্দিরে বেশ মদন-আওআসে ।
সুশীলার বিনয় শুনিঞা সদাগর
হেট মুখে শ্রীয়পতি দিলেন উত্তর ।
সর্ব উপভোগ মোর মায়ের চরণ
বায়মাসী গিত গান শ্রীকবিকঙ্কন ।।

This text is in its original language, and has an English translation:
Translation

This is a selection from the original text

Keywords

অন্ন, চাষ, ঝড়, ডিম, দধি, ধান, বৃষ্টি, ভূমি, ভূমি, ভূমি, মাছ

Source text

Title: Chandimangal

Author: Kabikankan Mukunda

Editor(s): Sukumar Sen

Publisher: Sahitya Akademi

Publication date: 2013

Original compiled 1700

Edition: 6th edition

Place of publication: New Delhi

Provenance/location: Original compiled 1700

Digital edition

Original author(s): Kabikankan Mukunda

Original editor(s): Sukumar Sen

Language: Bengali

Selection used:

  • 1 ) page 39
  • 2 ) page 44
  • 3 ) page 54
  • 4 ) page 55
  • 5 ) pages 61 to 62
  • 6 ) pages 74 to 77
  • 7 ) pages 112 to 113
  • 8 ) page 121
  • 9 ) pages 156 to 161
  • 10 ) pages 167 to 168
  • 11 ) pages 190 to 191
  • 12 ) pages 202 to 204
  • 13 ) pages 230 to 231
  • 14 ) pages 253 to 254

Responsibility:

Texts collected by: Ayesha Mukherjee, Amlan Das Gupta, Azarmi Dukht Safavi

Texts transcribed by: Muhammad Irshad Alam, Bonisha Bhattacharya, Arshdeep Singh Brar, Muhammad Ehteshamuddin, Kahkashan Khalil, Sarbajit Mitra

Texts encoded by: Bonisha Bhattacharya, Shreya Bose, Lucy Corley, Kinshuk Das, Bedbyas Datta, Arshdeep Singh Brar, Sarbajit Mitra, Josh Monk, Reesoom Pal

Encoding checking by: Hannah Petrie, Gary Stringer, Charlotte Tupman

Genre: India > poetry

For more information about the project, contact Dr Ayesha Mukherjee at the University of Exeter.

Acknowledgements