Shibayan

About this text

Introductory notes

Shibsankirtan or Shibayan authored by Rameshwar Bhattacharya in the 18th Century, was published by Calcutta University in 1957. Jogilal Haldar, the professor of Bengali, at Amta College in Howrah district was the editor of the book. Rameshwar Bhattacharya is remembered in the history of Bengali literature chiefly for two works, 'Satyanarayaner Kotha' and 'Shibayan' or 'Shibsankirtan'. Scholars like Dinesh Chandra Sen have determined that Shivayan was composed around 1750s. It had also been possible to determine that Rameswar Bhattacharya was a subject of the zamindar of Karnagarh, located in present day district of East Midnapore, West Bengal. Among the other poets like Ramkrishna Ray, Dwija Kalidas and Dwija Maniram, who have composed epic poems on Shiba, Rameshwar's acquired greater popularity among the readers.

The Shibayan kavya offers a detailed description of the agrarian practices that was followed in the first half of eighteenth century in Bengal. The author even highlights the various challenges faced by an agriculturist during the period.

Selection details

The Shibayan kavya offers a detailed description of the agrarian practices that was followed in the first half of eighteenth century in Bengal. The author even highlights the various challenges faced by an agriculturist during the period.

[Page 221]

1. চাষের উদ্যোগ

বলে শিবা বুড়ার বিলম্ব আর কেন ।
শিব বলে বাপু নন্দী বৃষ সাজ্যা আন ।।
ঘরে বস্যা পরকে প্রার্থনা ভাল নয় ।
একবার আশ্রমে অবশ্য যাত্যে হয় ।
কার কোন কর্ম্ম আমি না কর‍্যাছি কবে ।
ভুতনাথ ভব্য লোক ভালবাসে সবে ।।।
তবে যদি না দিবেক কি করিব তাকে ।।
গৌরব করিব আস্যা গণেশের মা ।।।
ভাল ভাল বল্যা ভব ভব করে ঈশ্বরে ।।
বৈশে গীয়া বিনোদিয়া বৃষভের পরে ।।।
চলিল চঞ্চল বৃষ চণ্ডী রণ চায়্যা ।।
হরষেতে যান হর হরিগুণ গায়্যা ।।।
প্রথমে প্রবেশে প্রভু পুরন্দর পুরী ।।
ধূর্জ্জটির ধ্বনি শুন্যা ধায় সুরনারী ।।।
[Page 222]
ঢল ঢল হৈল হর হরিগুণ গানে ।।
যত দেব জীবন সফল করি মানে ।।।
শুন্যা ইন্দ্র আনন্দে বিভোল হয়্যা ধায়।।
বন্দনা করিয়া নিজ বাসে লয়্যা যায় ।।।
বরাসনে বসাইয়া বলে শুভ দিন ।।
পুটাঞ্জলি হৈয়া পুনঃ পুনঃ প্রদক্ষিণ ।।।
পাখালিয়া পাদপদ্ম পাদোদক লয় ।।
পুলোমজা সহ পূজা দিয়া জয় জয় ।।।
আত্মসমর্পণ কৈল অভয় চরণে ।।
শতমুখে সকল সফল কর‍্যা মানে ।।।
শিব-শোভা সহস্রলোচন দেখে চায়্যা ।।
প্রেমধারা পড়িছে সকল অঙ্গ বায়্যা ।।।
কহে কহ কৃপানিধি কি করিয়া মনে ।।
দেবদেব দরশন দিলে অকিঞ্চনে ।।।
প্রভু কোন পাঠায়্যাছে গণেশের মা ।।
শুন্যা ইন্ত্র উদ্দেশ্যে বন্দিলা তান পা ।।।
ধন্য উমা আমাকে করিতে পরিত্রাণ ।।
প্রাণনাথে পাঠাইলা আমি ভাগ্যবান ।।।
কহে প্রভু পার্ব্বতীর প্রীত হয় যায় ।।
প্রাণ সঙ্গে মস্তক প্রস্তুত তুয়া পায় ।।।
চতুর্দ্দশ ভুবন ভরণকর্ত্তা কন ।।
দশাহীন দোষে দুঃখ পায় পরিজন ।।।
তুমি ভূমি দিলে আমি চষি গিয়া চাষ ।।
পূর্ণ হয় তবে পার্ব্বতীর অভিলাষ ।।।
হরের বচন শুন্যা হরিহর হাসে ।।
দ্বিজ রামেশ্বর বলে দয়া কর দাসে ।। ।
[Page 223]

2. চাষ-ভূমির পাট্টা

ইন্দ্র বলে আজি হতে অর্থ দিব আমি ।।
কাজ নাই চাষে বাসে বস্যা থাক তুমি ।।।
ধূর্ত বলে ধরা বিনা ধনে কাজ নাই ।।
ভবের ভরম রাখ ভবানীর ঠাঁঞি ।।।
বুঝিলেন ইন্দ্র ইনি আত্মবশ নন ।।
ঠাকুরাণীর হটেতে ঠাকুর ঠেক্যাছেন ।।।
ভৃত্যে তুমি কেন মাগ ভূমিস্বামী হয়্যা ।।
যত পার জোত কর কাজ নাই কয়্যা ।।।
শিব বলে শত্রু কিছু চক্র বক্র আছে ।।।
ক্ষেতে খন্দ দেখ্যা তুমি দ্বন্দ্ব কর পাছে ।।।
বিষয়ীর বচনে বিশ্বাস বিধি নয় ।।
পাটাটুকি হল্যা পর কাল শুদ্দ্ব হয় ।।।
হর বাক্যে হাস্যা হরিহর কয় তবে ।।
আজ্ঞা কর কোনখানে কত ভূমি লবে ।।।
মাগে হর তেপান্তর কোচ পাশে পাড়া ।।
দেববৃত্তি গোবৃত্তি বিপ্রের বৃত্তি ছাড়া ।।।
একত্রে শঙ্কর-চক চষতের স্থান ।।
দেবী-চক দ্বীপ দেহ করিতে বিশ্রাম ।।।
চষতের তরে তায় ঠাঁঞি কতখানি ।।
আয় ব্যয় বুঝিয়া কহিছে শূলপাণি ।।।
গণেশের ষোল বাটী বিশাখের বার ।।
অতিথির দশ দাসদাসীদের তের ।।।
[Page 224]
শঙ্করের পঞ্চশত শঙ্করীর শত ।।
ঠিক দিয়া দেখহ একুনে হয় কত ।।।
হলাহল উপরে বিরাজমান শশী ।।
শত্রুমুখে শুনিয়া শঙ্কর হৈল খুসী ।।।
মসীপত্র হাতে লয়্যা কশ্যপের বেটা ।।
লেখ্যা দিল দেবদেবে দেবোত্তর পাটা ।।।
বিশ্বনাথ বলে বাপু এই কালে কই ।।
দেখ আমি দুঃখী চাষী ডাট ডোট নাই ।।।
অতিবৃষ্টি অনাবৃষ্টি হবে সাবধান ।।
অঙ্গীকার কঈল ইন্দ্র তবে নিল দান ।।।
ডম্বরুর ডোরে পাটা বান্ধ্যা দিগম্বর ।।
ইন্দ্রকে আশিস কর‍্যা আল্যা যমঘর ।।।
সূর্য-সুত সমাদরে শিব সেবা কর‍্যা ।।
আজ্ঞামাত্র মহেশে মহিষ দিল ধর‍্যা ।।।
তুষ্ট হৈয়া ত্রিলোচন তারে দিল বর ।।
বিষাণ বাজায়্যা বৃষধ্বজ আল্যা ঘর ।।।
বৈসে বৃষে মহিষে বান্ধিয়া বেল গাছে ।।
কৃতকীর্ত্তি কৃত্তিবাস কুমুদার কাছে ।।।
হরান্তিকে হরষিতা হেমন্তের ঝি ।।
রামেশ্বর বলে আর অনির্ব্বাহ কি ।।।
[Page 227]

3. চাষের সজ্জা প্রস্তুত

বৈষ্ণবী বিচার‍্যা বিষ্ণু কৈলা মূল ।।
দেবদেব দ্রবে যাতে দ্রব হয় শূল ।।।
কিন্নরী গন্ধর্ব্বে গান পঞ্চাননে বেড়্যা ।।
কৃপাময়ী কৃষ্ণের কীর্ত্তন দিল যূড়্যা ।।।
দেবগণ দোহার গণেশ গান মূল ।।
কিন্নর গন্ধর্ব্ব গান হৈল অনুকূল ।।।
যশোদা লইয়া কৃষ্ণে উদূখলে বান্ধে ।।
গোবিন্দের লীলা শুন্যা গঙ্গাধর কান্দে ।।।
[Page 228]
বিশাই বুঝিয়া কায কৈল সাবধান ।।
লাঙ্গল-জোয়াল-ফাল করিল নির্ম্মাণ ।।।
হলধর পাশা মার‍্যা পুরাইল ফাল ।।
আড় চাল লাঙ্গলের যূড়্যা রাখে আল ।।।
[Page 229]
বাটা দিল কোদালে জোয়ালে দিয়া সলি ।।
পুরস্কার পায়্যা বিশ্বকর্ম্মা গেল চলি ।।।
শুধু হাড়ি পাত বান্ধ্যা কথা পাত্যা ফান্দ ।।
হাতে আন্যা দিতে হয় আকাশের চান্দ ।।।
সে ধনের সময়ে শাসন আছে কাছে ।।
ভূতনাথ আনন্দে মগন হয়্যা নাচে ।।।
গর্ব্ব রিণে বিষয়ে কুক্কুর-রতি রসে ।।
প্রবেশে পরম সুখ প্রাণ যায় শেষে ।।।
ধর্ম্ম গিলে ধুর্ত্ত লোক ধারি নাই ধার ।।
পরিণামে নরকে নিস্তার নাই তার ।।।
ভিখ মাগ্যা খায়্যা আমি বুড়াইল তবু ।।
কি বল্যা করজ করে জানি নাই কভু ।।।
ধরাধর-সুতা ধান্য ধার কর তুমি ।।
পার্ব্বতী বলেন প্রভু পারি নাই আমি ।।।
চাষে বাসে কাজ নাই মাগ্যা খাব ভিখ ।।
মায়্যার করজ করা মরণ অধিক ।।।
মদ্দ যায় গোঠে মাঠে মায়্যা থাকে ঘরে ।।
ভাঁড়াবার দায় নাই নিত্য দায় ধরে ।।।
মদ্দের করজ হৈলে মায়্যা দেয় টাল্যা ।।
কোণে থাকে কুলবধূ কথা কয় ছাল্যা ।।।
কুবেরের কাছে পূর্ব্বে লেঠা আছে মোর ।।
কতবার ক্রোধিয়া বল্যাছে ঋণচোর ।।।
[Page 230]
তেঞি পাকে বলি প্রভু তুমি গেলে ভাল ।।
ভোলানাথ ভোলায়ে ভার্জ্যারে যাত্যে বল ।।।
রাম রচে তার কাছে শিব আছে সাঁচা ।।
প্রাণনাথে পাঠাইল পর্ব্বতের বাছা ।।
[Page 230]

4. বীজধান্য সংগ্রহ

কল্পতরু কেবল কুবের পায়্যা ঘরে ।
ভীমে সহিতে শিবে সমাদর করে ।।
শিবের সংবার শুন্যা সুখী হৈল মনে ।
সবিনয় বলিলেক শিবের চরণে ।।
ব্রহ্মার সম্বন্ধে বলে দয়া কর আজা ।
দিকপাল দিয়া মোরে কর‍্যাছিলে রাজা ।।
পিতামহ কত কৈল আল্য কোন কাজে ।
সুবর্ণের পুরী গেল সমুদ্রের মাঝে ।।
দুষ্ট দশানন ভাই দিলে দূর কর‍্যা ।
লঙ্কাপুরী সহিত পুষ্পক নিল হর‍্যা ।।
কোথা বা সকল সে রাক্ষস মহাতেজা ।
শুদ্ধমতে আজি তাতে বিভীষণ রাজা ।।
দুষ্টের ঐশ্বর্য দিন দশ বই নয় ।
উত্তমের উন্নতি অনেক কাল হয় ।।
কোথা গেল রাবণ রাজা কোথা গেল বাণ ।
কোথা গেল দুর্য্যোধন করিয়া গুমান ।।
[Page 231]
শঙ্কর বলে বাপু সব কতদিনে
ধর্ম্ম কর ধূর্জ্জটিকে ধান্য দেহ ঋণ ।।
উপস্থিত তুন্মেদ আমার নাই ডর ।
সাধু রাজা সকল শুধিব অতঃপর ।।
হাসিয়া কুবের কহে শুন শুন তুমি ।
যক্ষরাজে দয়া কর‍্যা রাখ্যা আছ তুমি ।
যক্ষরাজে রক্ষা কর‍্যা আছ নিজ ধনে ।
যত ধান্য চাও নেও ধার মাগ কেনে ।।
ধূর্জ্জটি বলেন ধান্য ধার চাই কেন
ধারিয়া শুধিব ধার রহে নাই যেন ।।
যক্ষরাজ বলে ভাল বুঝিবে পশ্চাৎ ।
ভীম পায়্যা ভরসা ভাণ্ডারে দিল হাত ।।
ধান্য ঘর বিস্তর দেখিল বুড়া বুড়া ।
বার বুড়ি বাখারে বাধিঁল এক পুড়া ।।
পর্ব্বত প্রমাণ পুড়া হাত নাড়া কর‍্যা ।
বলে হরে চল ঘরে আশীর্ব্বাদ কর‍্যা ।।
কুবের মানেন ভয় ভীমের আস্ফালনে ।
হাস্যা হর কুবেরে আশিস কর‍্যা চলে ।।
আস্যা ঘরে যাত্রা করে যোত্র কর‍্যা সব ।
মোহ করে মোহিনী মধুর মুখরব ।।
[Page 232]

5. শিবের চাষ ভূমিতে যাত্রা

গদগদ স্বরে গৌরী গঙ্গাধরে কহে ।
বসনে ভিজিয়া গেল লোচনের লোহে ।।
কত কার্য কটাক্ষে করেছ বসি ঘরে ।
আপনি অবনী যাবে কোন কার্য তরে ।।
কত চাষ চষিবে চাকরে দিবে চষ্যা ।
ভার দিয়া আপনি ভবনে থাক বস্যা ।।
একটা মায়্যা রাখ্যা যাবে ছাওয়ালের ঠাঞি ।
আপনি যে লাজকে কাপড় পর নাই ।।
ভাল যদি চাও মোরে লয়্যা যাও সাথে ।
বাপ নেওট ছাল্যা আমি নারিব পাত্যাতে ।।
ছটফট্যা ছাল্যা সব ছাড়্যা গেল্যা ঘর ।
দশ হাতে ধুমধাম দিবে অতঃপর ।।
বিশ্বনাথ বলে আমি বুঝিলাম ভাবে ।
কৈলাস করিয়া শূন্য কাত্যায়নী যাবে ।।
ভগবতী কহ অতি অনুচিত কথা ।
গৃহস্থ থাকিলে ঘরে পরে চাষ বৃথা ।।
আঁতে পুতে ভাল চাষ অভাবে সোদর ।
অন্যথা হা-ভাত হাল্যা বিকায় সত্বর ।।
ভবে রাখ্যা ভীম দিয়া চাষ চষ তবে ।
পেট ভর‍্যা ঢের কর‍্যা দশ হাতে খাবে ।।
অন্নপূর্ণা বলে আমি অন্ন হেতু ঝুরি ।
ভুরিভঙ্গে ভাত দিয়া ভাসাইতে পারি ।।
[Page 233]
শিব বলে তোমার এমন গুণ বটে ।
কি বুঝ্যা আমার সনে লাগিয়াছ হটে ।।
ত্রিপুরা বলেন তাহা তুমি কিনা জান ।
লোকের নিন্তার হেতু বলি পুনঃ পুনঃ ।।
শুনিয়া তোমার লীলা তরিব সংসার ।
তার মত তবে বুঝ্যা কর ব্যবহার ।।
ত্রিপুরা বলেন তবে আস গিয়া প্রভু ।
ছাল্যা দুটীর তত্ত্ব লইও কভু কভু ।।
শিব বলে সম্প্রতি সে কথা রাখ হাতে ।
আকাশ ভাঙ্গিল শুন্যা অম্বিকার মাথে ।।
সম্বরিতে নারে শিবে শঙ্করের মোহ ।
চঞ্চল হইল চিত্ত চক্ষে বহে লোহ ।।
যদুরায় যেন যায় ছাড়িয়া গোকুল ।।
চলে বৃষে চন্দ্রচূড় চণ্ডী রন চায়্যা
পাছে ভীম চলিলা চাষের সজ্জা লয়্যা ।।
পদ্মাবতী পার্ব্বতীকে প্রবোধিয়া আনে ।
প্রাণনাথে প্রকারে ভেটিব সেইখানে ।।
জলহীন যেন মীন শিবহীন শিব ।
রামেশ্বর ভণে ভবে ভাবে রাত্রি দিবা ।।
[Page 233]

6. চাষ আরম্ভ

পৃথিবীতে প্রবেশ করিলা পশুপতি ।
দেবীচক দ্বীপের উপরে উপনীতি ।।
মনে জান্যা মঘবান মহেশের লীলা ।
মহীতলে মাঘশেষে মেঘ বরষিলা ।।
[Page 234]
দিন সাত বরষিয়া দিলেক ঈশানে ।
হৈল হাল-প্রবাহ শিবের শুভক্ষণে ।।
আরম্ভে উগাল্যা গেল একশত কুড়া ।
পড়্যা গেল পাড় যেন পর্ব্বতের চুড়া ।।
দুদণ্ডে ছাড়িয়া হাল হাল্যা গেল ঘরে ।
বান্ধ আলি বৈকালে বান্ধিল একপরে ।।
চোট মার‍্যা হুহুঙ্কারে হালিয়া তুলে চাপ ।
শঙ্কর সাবাসি দেন ভেল মোর বাপ ।
হেল্যা চরাইয়া হাল্যা বান্ধিলেক ছাড়ি ।
লোকালোক পর্ব্বত প্রমাণ কৈল আড়ি ।।
মধ্যখানে খানিক ঘুচায়্যা দিল চেলা ।
দক্ষিণে মোহানা রাখে জল যাত্যে নালা ।।
শর আরোপিয়া পগারের চারিপাশে ।
সাজে শিব সেবক সহিতে আল্য বাসে ।।
বাঘছাল বিছায়্যা বসিল বৃষকেতু ।
ভীমের ভাবন হৈল ভক্ষণের হেতু ।।
ক্ষেতে খাট্যা ক্ষুধা বড় খাব কিহে মামা ।
বিশ্বনাথ বলে বাপু আজি কর ক্ষমা ।।
শিববাক্য শুনিয়া সর্ব্বাং গেল জ্বল্যা ।
ডাক্যা বলে ডাকাত্যে মাল্যেক মোকে বল্যা ।।
সর্ব্বকাল সারাদিন কর্ম্ম করি তবু ।
পেট ভর‍্যা ভাত মোর দিলে নাই কভু ।
[Page 235]
মামীর সহিতে মামা যুক্তি কর‍্যা পরে ।
ভুখে মোকে মারিতে আন্যাছে তেপান্তরে ।।
জঠর অনল যেন জিউ যায় মোর ।
তেমনি প্রস্তুত খন্দ পুড়্যা যাকু তোর ।।
বিশ্বনাথ বলে বাপু বাড়ী হৈতে আস্য ।
ভাত খায়্যা প্রভাতে ভাল কও কথা ।
সারাদিন খাট্যা খুট্যা খাত্যে যাব সেথা ।
মামী জিজ্ঞাসিলে আমি কহিব যে ভাল ।
কোঁচনীকে লয়া মামা পলাইয়া গেল ।।
বিশ্বনাথ বলে বাপু বস্যা থাক তুমি ।
আর যত এই খানে খাওয়াইব আমি ।।
অর্দ্ধভাগ বীজ রাখ বুনিবার তরে ।
পুড়া ভাঙ্গা ফেল্যা রাখ পড়্যা থাক ঘরে ।।
চাকরের চারা নাই যে করেন নাথ ।
রামেশ্বর বলে হর খাওয়াইবে ভাত ।।
[Page 237]

7. শস্যোত্‍পত্তি

এইরূপে প্রতিদিন যায় রাত্রিকাল ।
ভীম কর‍্যা ভোজন প্রভাতে ধরে হাল ।।
চারি দণ্ড চষে চন্দ্রচূড় থাকে বস্যা ।
উড়ায় লাঙ্গল যেন উড়ু যায় খস্যা ।।
পাঁচ পাঁচ কুড়া তার পড়্যা যায় পাকে ।
পাশে গেলে পায় বল্যা ঠায় হাল্যা রাখে ।।
আয়ুধের কটমটি জুয়াল্যের মাঝে ।
হুঙ্কারে হাঁকারে ঘন মেঘ যেন গাজে ।।
হাল ছাড়্যা হাল্যা যবে করে জলপান ।
হেল্যাকে চরান শিব হয়্যা সাবধান ।।
দিন দশে দু হেল্যার কান্ধ গেল রস্যা ।
ধুতুরার রস তাতে শিব দিল ঘস্যা ।।
হেল্যার দেখিয়া দুঃখ হরে হল্য মো ।
কালে কালে কৈল হাল কামাঞের যো ।।
সেই সেই কালে যার হয় হল-যোগ ।
ধরা শস্য হরে ধান্যে ধরে নানা রোগ ।।
বৃষ কান্দে বাসব বরিষে নাই বাড়া ।
তেঞি হাভাতিয়া চাষী হয় লক্ষ্মীছাড়া ।।
চৈত্র মাস গেল সব চাষ হল্য পূর্ণ ।
মাঠ কর‍্যা মই দিয়া মাটী কৈল চুর্ণ ।।
উচু নিচু ঢালিয়া সকল কৈল সম ।
উত্তরে উন্নত কৈল দক্ষিণ দিগভ্যম ।।
[Page 238]
বৈশাখে বিছাতি কৈল শুভক্ষণ দিনে ।
সার দিয়া সার‍্যা সব ভূমি বাতে বুনে ।।
ভূমি বনে ভূতনাথ ভাজা পোড়া ছাড়্যা ।
কলমীর শাক খায়্যা উজাড়িল গাড়্যা ।।
ব্যর্থ নাই গেল বীজ বার‍্যাইল হেন ।
হন হন করে ধান বলাহক যেন ।।
সময়ে সড়কা তুল্যা মার‍্যা দিল খড় ।
তাতে বাতে পাটী পায়্যা লাগ্যা গেল গড় ।।
হর্ষ হৈয়া হর ধান্য দেখে অবিরাম ।
কালিন্দীর কূলে যেন নবঘনশ্যাম ।।
হাপুতের পুত যেন নির্ধনের ধন।
ধান্য দেখ্যা রহিল পাসর‍্যা পরিজন ।।
প্রাবৃট প্রবর্ত্ত হৈল ইন্দ্র আল্য সাজ্যা ।
যুবজন উপরে মদন উঠে গাজ্যা ।।
তড়িত্মান মহামেঘ সমীরণ-সখা ।
আষাড়ের প্রথম দিবসে দিল দেখা ।।
ঈশানে ঊরিয়া আর একবার ডাক্যা ।
চপ কর‍্যা চাক্ষুষে আকাশ আল্য ঢাক্যা ।।
রাত্র দিন ব্যাপ্ত কর‍্যা বৃষ্টি করে বার ।
সোম সূর্য সহিত সাক্ষাৎ নাহি আর ।।
পথে পঙ্ক সঙ্কোচ পৃথিবী পয়ময় ।
নদী নালা পূর্ণ হৈয়া মহাবেগে বয় ।।
চিরকাল গাঢ়ে থাকি বার‍্যাইল ব্যাঙ্গ ।
লাফে লাফে নর্ত্তন কীর্ত্তন সদা সাঙ্গ ।।
[Page 239]
মহামেঘ মাঝে শত্রুধনু দিল দেখা ।
শ্যাম শিরে সাজে যেন শিখিপুচ্ছ রেখা ।।
অশনির শব্দ যেন দামার নিশান ।
বিরহণী বধে কামদেবের প্রয়াণ ।।
তড়িত পতাকা বুঝি বৃষ্টি যত হয় ।
ফুলধনু বাণ বুঝি বলাহক নয় ।।
চলা বুলা গেল নদী নালা আল্য বান ।
প্রাণনাথ প্রবাসে পার্ব্বতী মোহ পান ।।
শিব শিব রটে সদা উঠে পরিতাপ ।
রামের নিমিত্ত যেন সীতার বিলাপ ।।
পদ্মাবতী পার্ব্বতীকে পরিবোধ করে ।
উদ্ধব বুঝান যেন ব্রজ-বনিতারে ।।
কিসে কান্ত আস্যে এই যুক্তি-নিরন্তর ।
নারদ সাজিল এথা ঢেঁকির উপর ।।
রামেশ্বর রচিল রসিক রসোদয় ।
হরপ্রীতে হরি বল হকু পাপক্ষয় ।। [১১০]
[Page 285]

8. ঝড়-বৃষ্টি

ঈশানে ঊরিয়া সকল পূরিয়া
জলধর ধাইল বেগে ।
কুল কুল করিয়া অম্বর ঢাকিয়া
আন্ধার করিল মেঘে ।।
পড়িল তরুবর উড়িল বড় ঘর
উৎপাত হৈল ঝড়ে ।
চড় চাড় চড় করিয়া গড় গড়
বড় বড় পাষাণ পড়ে ।।
[Page 286]
ঘন ঘন গর্জ্জন বজ্র বিসর্জ্জন
বরিখে মুষলধারা ।
জীবন সংশয় সর্ব্বলোকে কয়
প্রলয় হৈল পারা ।।
গুহ লম্বোদর ভাবিয়া শঙ্কর
আক্ষেপে করিল মায় ।
কহে রামেশ্বর ছাড়্যা হর ঘর
কি কাজ করিলে হায় ।। [১৩৩]
[Page 345]

9. পৃথিবীর শস্য বৃদ্ধি

প্রণমিয়া বিশ্বনাথে বৃকোদর নামে ক্ষেতে
হাতে লয়্যা দুমণের দায় ।
[Page 346]
নিড়ায়্যা চলিল ধায়্যা দু'দণ্ডে ফেলিল দায়্যাই
হইল আড়াই হালা তায় ।।
দেবীচকে ধান্য তুল্যা শিব সন্নিধানে আল্যা
নিবেদিল শঙ্করের পায় ।
শুনিয়া আড়াই হালা শিব অনুমতি দিলা
আগুণ মেটায়্যা দিতে তায় ।।
হইল চাষের লাভ ভাবিলা ভবের ভাব
জানিয়া শিবের লীলা যত দেব বন্ধু ছিলা
চলিল ভীমের পিছু পিছু ।।
দক্ষিণ পবন বয় ধরাইলা ধনঞ্জয়
যিঁহো সর্ব্বদেবতার মুখ ।
হুতি দ্রব্য যত পাল্য অনল প্রবল হল্য
বৃকোদর তাতে দিল ফুঁক ।।
আকাশ আচ্ছাদিল ধূমে ধান্য পোড়ে যত ক্রমে
দেখি ভীম হল্য মহামোহ ।
ধান্য পোড়া গন্ধ পায়্যা শিবান্তিকে মাল্য ধায়্যা
অনিবারর্‍্য লোচনের লোহ ।।
কিবা করে প্রভু লয়্যা পড়িল মুর্চ্ছিত হয়্যা
হর-পার্ব্বতীর পদতলে ।
শিব দিলা অনুমতি প্রবোধিলা পার্ব্বতী
ভকতবত্‍সলা কিছু বলা ।।
[Page 347]
বৃথা বাছা কর মনস্তাপ
কৃষির সার্থক হল্য অনলে সঁপিয়া দিল
সত্য হ'ল সেবকের শাপ ।।
সদাশিব সদানন্দময় ।
ইন্দ্রপদ কার বরে অষ্টসিদ্ধি আছে করে
কটাক্ষে অশেষ সিদ্ধি হয় ।।
আমি চষাইলাম চাষ পুরিতে জীবের আশ
অনল ভুবন অনুকূল ।
তাতে কি করিব আমি সাক্ষাতে দেখিবে তুমি
শিবপদ সবাকার মূল ।।
শুন্যা ভীম সুখী হল্য দ্বাদশ দিবস(?) পথে
পর্ব্বত সমান বহুদূর ।।
ভীমে জিজ্ঞাসিল ভগবান ।
বৃকোদর নিবেদিল দ্বাদশ বৎসর গেল
অদ্যাবধি পূজে সেই ধান ।।
দেখিতে আইল গৌরীহর ।
শিবদুর্গা দৃষ্টিমাত্র তৃপ্ত হৈল [...]
[...] হয়্যা দিল বর ।।
[Page 348]
এক শস্য দিল মোকে নানা শস্য দিব লোকে
দগ্ধ সে শঙ্খ ভগবতী ।
বল্যা অগ্নি অন্তর্ধান দ্বিজ রামেশ্বর গান
যে যে শস্য জন্মিল তথি ।।[১৬৪]
This is a selection from the original text

Keywords

অন্ন, চাষ, বীজধান, ভাত, ভূমি, ভূমি, ভূমি, শাক

Source text

Title: Shibsankirtan or Shibayan

Author: Rameswar

Editor(s): Yogilal Haldar

Publisher: Calcutta University

Publication date: 1957

Original compiled c.1750-1759

Edition: 1st Edition

Place of publication: Calcutta

Provenance/location: This text was transcribed from print at the National Library of India. Original compiled c.1750-1759

Digital edition

Original author(s): Rameswar

Original editor(s): Yogilal Haldar

Language: Bengali

Selection used:

  • 1 ) pages 221 to 224
  • 2 ) pages 230 to 239
  • 3 ) pages 285 to 286
  • 4 ) pages 345 to 348

Responsibility:

Texts collected by: Ayesha Mukherjee, Amlan Das Gupta, Azarmi Dukht Safavi

Texts transcribed by: Muhammad Irshad Alam, Bonisha Bhattacharya, Arshdeep Singh Brar, Muhammad Ehteshamuddin, Kahkashan Khalil, Sarbajit Mitra

Texts encoded by: Bonisha Bhattacharya, Shreya Bose, Lucy Corley, Kinshuk Das, Bedbyas Datta, Arshdeep Singh Brar, Sarbajit Mitra, Josh Monk, Reesoom Pal

Encoding checking by: Hannah Petrie, Gary Stringer, Charlotte Tupman

Genre: India > poetry

For more information about the project, contact Dr Ayesha Mukherjee at the University of Exeter.

Acknowledgements