Jag-Gaan

About this text

Introductory notes

The district of Rangpur, in present day Bangladesh, is known for three forms of songs which were traditionally popular- Jugi songs, Bhawaiya Songs and Jag Songs. Jag Songs are also quite popular in the neighbouring districts of Coochbehar and Jalpaiguri, now in West Bengal, India. Panchanan Sarkar, the editor of Rangapur Sahitya Parisad Periodical travelled around the Rangpur District and made a compilation of Jag Songs. The songs were mostly collected from the village of Itakumari in Rangpur District. Sarkar observed that, these songs are sung during the Puja of Kamdev ie the god of love or desire during the month of March.

The Jag Songs sung during the festival of Kamdev or god of desire are known for their erotic undertones. Hence the performers are not comfortable to perform before the outsiders. Sarkar, a resident of the district had an advantage in winning the confidence of the village performers. The songs that Sarkar collected were composed by Ratiram Das, a poet from the Itakumari village. From the lyrics it can be ascertained that the songs were composed during late 18th Century. The songs highlight the struggles of Shivchandra, the local zamindar against Devi Singh. Devi Singh responsible for collecting revenues, was notorious for the extreme methods employed to exact rents during the Famine of 1770. The Jag Songs compiled also highlight the sufferings of the people during the Famine of 1770.

Selection details

The Jag Songs sung during the festival of Kamdev or god of desire are known for their erotic undertones. Hence the performers are not comfortable to perform before the outsiders. Sarkar, a resident of the district had an advantage in winning the confidence of the village performers. The songs that Sarkar collected were composed by Ratiram Das, a poet from the Itakumari village. From the lyrics it can be ascertained that the songs were composed during late 18th Century. The songs highlight the struggles of Shivchandra, the local zamindar against Devi Singh. Devi Singh responsible for collecting revenues, was notorious for the extreme methods employed to exact rents during the Famine of 1770. The Jag Songs compiled also highlight the sufferings of the people during the Famine of 1770.

[Page 86]

1. ১। রাধার শাক তোলা ।

খুঁরিয়া বতুয়া শাকে গেত গেইছে ভরি ।
রাধা যায় শাক, তুলিতে নয়া ডালি ধরি ।।
সরু কাপড়া প'রছে রাধা কেবুম নয়া পোপ ।
নচপচা শাক দেখিয়া রাধার হইল নোভ ।।
বাছের বাছ তোলে রাধা ক্ষেতের ভিতর যা'য়া ।
কোচা ভরিয়া তুলি শাক থোয় ডালি ভরিয়া ।।
দেওয়ানীয়া ভাল বাসে খুঁরিয়া শাকের ভাজা ।
শাক তুলতে তুলতে মোক কইল্লে ভাজা ভাযা ।।
নাজ নাই নজ্জা নাই গাবুর বউরী ।
শাক তুলিতে এমন বউকে দেয় কেমন করি ।।
ঐ যা আইসে নন্দের বেটা জুয়ান জাওয়ান কানু ।
কেনে আইসে আইলে আইলে বুঝিরে না পানু ।।
কেমন করি চৌকে চায় গিলিয়া যেমন থায় ।
জুয়ান বউরী দেখি এই ভিতি দায় ।।
চিটুল চাউনী তার মুখে মুচকে হাসি ।
রাস্তায় ঘাটার পাইলে আগে আঞ্চল ধরে আসি ।।
[Page 87]
কোন দিকে যায় এখন এ বড় বালাই ।
যে দিকে পালাই এখন সেই দিকে কাণাই ।।
বজ্জর আটুনি ফস্কা গিরো ঘরে মোর তালা ।
যেটেসেটে পটেয়া দেয় রাস্তার পায় কালা ।।
কালার জ্বালার মোর অঙ্গ হৈল কালী ।
পালাইতে পারিলে বাঁচ্যেঙ পাকুক পড়ি ডালি ।।
আলুর ক্ষেতে যায়া রাধা হৈল আলু থালু ।
যে দিকেতে যায় রাধা সে দিকে যায় কানু ।।
রাধা কয় উহু উহু পায়েঁ লাগিল কাটা ।
এমন ভাঙ্গা কপাল মোর কপালে মারোঁ ঝাঁটা ।।
পাও পাতিতে পারোঁ না মুই কেমন করি যাইম ।
নিচ্চয় ননদীর মুই ঝাঁটা নাতি খাইম ।।
খুড়িয়া খুড়িয়া আনু খুরিয়ায় বন হাতে ।
আর তো পারোনা মুই এত পন্থ যাইতে ।।
কে আছে এমন বন্ধু কাঁটা খুলিইয়া দেয় ।
জনমের মত বিনা মূলে রাধাক কিনি নেয় ।।
বাঁশী থুইয়া হাঁসি হাঁসি রাধার কাছে আসি ।
ক্ষেতের মাঝত বসি কাণাই সুকখে যায় ভাসি ।।
কোমল করে কোমল চরণ বুকে ধরে তুলি ।
রাধার চরণ ধরিয়া কাণাই সব যায় ভুলি ।।
কাণাই বলে ওগো মামী তোমার পায়ের কাটা ।
দাত দিয়া তুলিম মুই নন্দ রাজার বেটা ।।
কোন ভয় নাই মামী আমি আছি কাচে ।
রাধা কয় শীগগির তোল কেউবা দেখে পাচে ।।
রাধার রঙ কাঁচা সোণা নাল পায়ের তলা ।
দেখিয়া দেখিয়া কাণাই হয়া গেল ভালা ।।
কানু কয় মামী তোমাকে কাঁটা কই পাও ।
যেমনকার তেমনি তোমার আছে মামী পাঁও ।।
[Page 88]
কি কাঁটা ফুটিছে তোমার বুঝিতে নারি আমি ।
হৃদদের কাঁটা তুলতে পারঙ যদি কও মামী ।।
ঢুড়িয়া ঢুড়িয়া দেখনু খুরিয়ার কাটা নাই ।
এমন চরণ পাইলাঙ যদি হৃদে রাখতে চাই ।।
রাধা কর ওরে কাণাই একে কাঁটার জ্বালা ।
পচ্চিয়া বাতাসে আরো চৌকে পড়িল বালা ।।
পাঁও ঘাড়ে রাখিয়া কাণু চৌকে দিল ফুক ।
এ পালা হইল সারা রাধার কত সুখ ।।
[Page 88]

2. ২। কৃষ্ণের ধোরে মাছ মারা ।

আষাঢ় মাসে ভর বরিষা উজাই নাগিল মাচ ।
মাচ ধরিতে যায় রাধা কাণাই নাগিল পাচ ।।
বড় দিঘির বড় ধোরে বড় দিচে নেটা ।
নন্দের বেটার সঙ্গে রাধার সেই খানেতে নেটা ।।
কাণাই বলে মেগে বর্ষে কেমন জলের ধার ।
আকাশ হাতে পরে যেমন রূপার শতেক তার ।।
দেওয়া চিলকে মাটিত পড় ডাকে ঐ দেওয়া ।
ধরাশ করি চমকি উঠে আমার কোমল হিয়া ।।
তারাশে কাঁপিছে হিয়া হাতাশ খানু মামী ।
বুকে চাপি ধরো আসি তবে বাঁচি মানি ।।
ফাঁক নাই ফুক প'রজে জলের ধারা ।
আকাশে পাতাল ঢাঁকছে মেগে চাঁন সুরুজ তারা ।।
খাল বিল দিঘী নদী সব একাকার ।
তবে কেনে করেন মামী সম্বন্ধ বিচার ।।
[Page 89]
রাধা কয় কিবা কইস নন্দের ছাওয়াল ।
মাছ মারিতে আসিয়া কেনে ঘটাই'সে জঞ্জাল ।।
ধোরের ধারে যায়া রাধা ভাবে সাত পাঁচ ।
হাটের বাঁশী ভূমে থুইয়া কাণাই মারে মাচ ।।
রাধার মুখের দিগে কাণাই এক দৃষ্টে চায় ।
ডাঙ্গর ডুঙ্গর চক্ষু দুটী পলক নাহি তায় ।।
হাঁসিয়া কইছে রাধা এ কেমন চাউনি ।
এমন চাউনিতে সাপে ধর‍্য়ে পক্ষিনী ।।
চক্ষু দিয়া দংশ কেনে তুমি কালা সাপ ।
মামীক দংশিয়া কেনে কর মহাপাপ ।।
কাল সাপের বিষে আমার অঙ্গ জর জর ।
কোন মতে দাঁড়ায়া আছি অঙ্গে দিয়া ভরা ।।
যমুনার জলে থাকে কালীয়া সাপ ।
দংশিয়া দংশিয়া মোকে বড় দেয় তাপ ।।
দেওয়ানিয়া সাপের রোজা চারি দিকে ডাক ।
দেখাইবে তায় যদি পায় কালা সাপের নাগ ।।
এ সাপ বিষম সাপ কদমের ডালে ঝুলে ।
পাছে পাছে ফিরে সাপ যমুনার কূলে কুলে ।।
সারা রা'ত পড়িয়া থাকে ঘরের ছাইঞ্চায় ।
বাহির হৈলে পাঁও বেড়িয়া মুখের চুমা খায় ।।
কাণাই বসে ভয় নাই আমি সাপের ওঝা ।
কত মন্তর জানি ঔষধ বোজা বোজা ।।
গাঙের জল পড়িয়া দেই কর তায় সিন্নান ।
বিষ নামিবে কাদো ধুবে বাচিবে তোমার জান ।।
মাছ ধরিতে সব্ব অঙ্গে লাগিয়া গেইছে কাদা ।
ঝক ঝক করুক অঙ্গ যেমন চকচকিয়া চান্দা ।।
রাধা কয় মুচকি মুচকি হাসিয়া ।
কেমন তুমি সাপের ওঝা সাপের সাপুড়িয়া ।।
সাপুড়িয়া বাঁশীর সুরে সাপ বাহির হয়া আ'সে ।
তোমার বাঁশীর সুরে সাপ জাগিয়া উঠিয়া বইসে ।।
[Page 90]
তোমার বাঁশীর সুরে সাপ কাণের ছিদ্দির দিয়া ।
বসত বাড়ী করলে সাপ হৃদের গত্তে গিয়া ।।
ঘুমায় না ঘুমায় সাপ জাগিয়া থাকে সোজা ।
তোমার বাঁশীর সুরে সাপ খায় মোর কলিজা ।।
আর কিছু মাঙ্গিনা কানু আর কিছু মাঙ্গিনী ।
সাপ বাহির করিয়া ফেনা ও গুণের ভাগিনা ।।
কাণাই কয়(ওরে) মামী কেনে কথার কাটাকাটি ।
সিন্নান করিয়া উঠযাই আপন বাটী ।।
এ উজান বয়সে মামী উজান বয়া যাই ।
তোমার অঙ্গে অঙ্গ দিয়া একবার সাঁতার খাই ।।
ভরা যৌবন তোমার ভরা পুরা বাণ ।
ইরাত যাঁয়ে সাঁতার দেয় সেই তো ভাগ্যবান ।।
গলা জলে নামিল রাধা করিতে সিন্নান ।
আউলাইল মাথার কেশ যে ছিল বিনান ।।
লম্ফ দিয়া পড়ে কানাই অতল জলের মাঝে ।
রাধাকে না হেরি কানুর মনে কেমন বাজে ।।
দূরে ডুবে আসে কাণাই ভাসিয়া গেল জ্বলের মাঝে ।
রাধাকে না হেরি কানুর মনে কেমন বাজে ।।
দূরে ডুবে আসে কাণাই ভাসিয়া গেল জলে ।।
মনের সুখে হাঁসি রাধা কয় হাত তুলে ।
কেউকি আছেন দরদিয়া দরিয়ার কূলে ।।
ননদিরে শাশুড়ীকে কইমেন বিচারি ।
কুম্ভীরে লইল তোমার যুয়ান বউরী ।।
ঝাইল ভরা গয়না আছে সেই গুলা দিয়া ।
ধুম ধামে ক বাক এখন দেওয়ানিয়ার বিয়া ।।
অকূল দরিয়ার ভাসিল কলঙ্কিনী রাই ।
এ পালা হইল সারা এখন বাড়ী চলি যাই ।।

3.

[Page 171]
আশ্বিন গেইছে, কাত্তিকের আ'জ গেল আধেক দিন।
রাত্তির কোণা , একটুকু বা'ড়ছে, পাওয়া না যায় চিন ।।
গাদলা নাই, ঝড়ি নাই, কাশিয়া ফুল ফুটে ।
নাচিয়া বেড়ায় খঞ্জন গুলা ইত্তিউত্তি ছুটে ।।
নদীর জল টলটল দেখা যায় বালা ।
মাথার উপর আকাশ খানি খালি সব নীলা ।।
রাস্তায় ঘাঁটায় কাদো নাই খালি পায়ে যাও ।
আনিতে হৈবেনা জল ধুবার লাগেনা পাও ।।
শীত গীরিষ কিছুই নাই বড় মজার দিন ।
মাছি নাই মশা নাই করেনা পিন পিন ।।
[Page 172]
সাজের বেলা পুরূষদিগে, ঝলক দিয়া চান্দ ।
আকাশের গায় উঠে, অই কেমন তার ছান্দ ।।
গাছের উপর পড়ে জোনাক রূপার গাছ করি ।
পাতের উপরে জোনাকের খাটেনা কারিকুরি ।।
নদীর জল জোনাক পায়া করে ঝকঝক ।
বালুর চর কাশিয়ার ফুল জ্বলে চক চক ।।
জোনাকতে ভরিয়া গেল সমস্ত পিত্থিমি ।
আকাশেতে তারা গুলা করে রিমি ঝিমি ।।
সিঙ্গাহারের ফুলে ফুলে ঢাকিল সব বন ।
সুবাস পায়া ঘরে থাকির কারো না হয় মন ,
সব ঠাঁই ছড়ায় বাস ফুর ফুরা বায় ।
লাখে লাখে ভ্রমরা উড়ে যুতি ফুলের গায় ।।
এমন সময় নদীর কুলে বাঁশীত দিল শান ।
গলে মালা চিকণ কালা করে রাধা রাধা গান ।।
বাঁশীর সুরে ভাসিয়া গেল আকাশ পাতাল মাটি ।।
রুপসী যতেক ছিল ব্রজের বউরী ।
সকলে বাহির হইল নাই কেউ বৈরী ।।
সকলি মিলিল আসি নিকুঞ্জের বনে ।
ডালি ভরি তুলি ফুল আনে জনে জনে ।
ফুলের কঙ্কন পরে ফুলের নেপুর ।
ফুলের হার ফুলের তাড় সবে ভর পুর ।।
কাণে দিল ফুলের কুন্ডল মাথায় ফুলের সিঁতি ।
ফুল সাজে সাজিলা যতেক ব্রজের যুবতী ।।
সবে বলে দেখাবো আজি কেমন চিকণ কালা ।
চিনিয়া নেউক কাঁঞ তার রাধা রূপসী বালা ।।
চিনতে যদি নাই পারে মা'রমো ঠোকনা গালে ।
এই কি তোমার ভালবাসা যাও গরুর পালে ।।
[Page 173]
যার জন্যে ছাড়ি বন্ধু খাওয়া শোওয়া বইসা ।
তারে এখন চিনিনা যে কেমন ভালবাহা ।।
সে দিন যেমন দিন দুপরে ক'রচে বসন চুরি ।
আ'জ তার কাণ ধরিয়া দেখাম চাতুরী ।
বঙ্কিম তার হা দুখানি দিয়া নীল শাড়ী ।
সবার আগে ধরা চূড়া বাঁশী নিম কাড়ি ।।
হাঁসিয়া হাঁসিয়া তবে দিমো করতালি ।
নারীর হাটে নারীর হাতে কি করবেন বনমালী ।।
মাইয়া মানুষ দেখলে তার উচাটন মতি ।
ভাল করি হাউস মিটামো যতেক যুবতী ।।
মাইয়ামানুষ দেখলে তার জিভার পড়ে নাল ।
এতেক যুবতীর সনে ধরুক দেখি তাল ।।
নীল শাড়ী চুরি করি বসিছিল ঠ্যালে ।
আ'জ তার পত্তিশোধ দিমো রাত্তির কালে ।।
নীল মেঘের মত হয় কালীয়ার রং ।
নীল শাড়ী করমো তারে করমো বড় রং ।।
সবাই পরমো তাকে ছিঁড়া ছিঁড়া করি ।
দেখিমো কেমন করেন একেলা মুরারি ।।
এই যে কাচুলি গুলা বড় হইছে কশা ।
একবার দিলে আর না যায় তাক খসা ।।
এগুলা ছিঁড়িয়া ফেলাও দুষ্ক কর দূর ।
দেখিমো কালীয়া ছোঁড়ার কত বুক পুর ।।
কানু্র হাতের তলা লাল পীঠির ভিতি নীল ।
সুন্দর কাঁচুলি হৈবে না হইবে এতেক রমণী ।
দেখিমো দেখিমো কেমন করেন নীলমণি ।।
[Page 174]
একেবারে তুলমো সবে রসের তুফান ।
ঝগড়া নাই ঝাঁটি নাই সকলি সমান ।।
গাছের আওরালে থাকি সব শুনিল কাণু ।
হাসতে হাসতে আসিল কাণাই বাজাইয়া বেণু ।।
কাণাই কয় মিলিছেন যতেক যুবতী ।
আমার কারণে তোমরা কি করলেন যুকতি ।।
কাড়িয়া নিমেন পীতধড়া সাবাস সাবাস ।
পীত বরণ তোমার উরাত হৈবে পীতবাস ।।
কাণাইর কথা শুনি হাসিয়া আটখান ।
এ পড়ে উহার গায়ে ছুটি রসের বাণ ।।
যতেক গোপিনী আছিল তত হৈল কাণু ।
নাচিতে লাগিল সবে ডগ মগ তনু ।।
পায়ের নেপুর বাজে হাটের কঙ্কন ।
মধুর বাঁশরী বাজায় মদন মোহন ।।
নাচিতে নাচিতে উঠে গানের তরঙ্গ ।
গভীর শব্দে বাহে রসের মৃদঙ্গ ।।
ভুবন ভরিয়া গেল এ রসের গানে ।
ভাঙ্গিল শিবের ধ্যান উঠে দেবী সনে ।।
পঞ্চ মুখে গান গায় ডম্বরু বাজায় ।
নাচে শিব ঠ্যাস দিয়া ভবানীর গায় ।।
যত দেবি যত দেবা এ রাস হেরিয়া ।
রথের উপরে সবে পড়ে মুরছিয়া ।।
নাচিছে গোপিনী গণ নাচার নাই শেষ ।
খুলিল মাথার খোপা আউলাইল কেশ
ছরমে সবার মুখে বিন্দু বিন্দু ঘাম ।
আপন অঞ্চলে তাহা মুছাইছে শাম ।।
নাচিতে নাচিতে সবার ছিঁড়িয়া গেল ডুরি ।
খসিল কাঁচুলি তাদের খইসে যেন শাড়ী ।।
[Page 175]
সৌগ ঠাঁই কাল জল কোণ ঠাঁই নাই ।।
সমুদ্দুর হইছে আজ আপনি কাণাই ।।
আদি নাই অন্ত নাই নাই কুল কিনার ।
এ সমুদ্রে ঝাঁপ দিলে উঠে শক্তি কার ।।
গণিতে না পারি কত আশিছে কামিনী ।
সগগুলি হইছে নদী যতেক গোপিনী ।।
কামের বাতাসে সবার উঠিছে হিল্লোল ।
রাসে তরঙ্গে সবার বাড়িছে কল্লোল ।।
সকল নারীর শিরা কাণাইর সাধা ।
আপনি হইছে গঙ্গা তায় গৌরী রাধা ।।
শত শত গোপিনী গাঙেরে সঙ্গে করি ।
ভাসেয়া ভুবন ধায় গঙ্গা হরি হরি ।।
ঝম্প দিয়া পড়ি মিশে সেই কালা জলে ।
রতিরাম দাস রাস গায় কুতূহলে ।।
কাণাই ধামালি পালা এত দূরে সারা ।
বৈষ্ণবেতে গাও হরি শাক্তে গাও তারা ।।
ব্রাহ্মণের শ্রীপাদ পদ্মে করি পরিণাম ।
নিবেদন করে দাস জাতি নাম ধাম ।।
পুরব দিগেতে ব্রম্ভপুত্রের মেলানি ।
পশ্চিমে কুশাই গঙ্গা আছয়ে ছড়ানি ।।
উত্তরেতে গিরিরাজ দক্ষিণে বাঙ্গালা ।
যে দেশে কিরিপা করে কামাক্ষ্যা মঙ্গলা ।।
করতোয়া শিবের বিভার হস্তজল ।
মধ্য দিয়া বয়া যায় করি টল টল ।।
[Page 176]
করতোয়ার তীরে আছে শীলাদেবীর ঘাট ।
পরশুরামের আছে সেখানেতে পাঠ ।।
পৌষ মাঘে হয় যদি নারায়ণী যোগ ।
শতেক যোজন হ'তে আইসে কত লোকে ।।
এই সীমার মাঝে দেশ পোণ দুয়ার পিতি ।
এ দেশে আমাদের জাতির বসতি ।।
হায়রে রাজার বংশে লভিয়ে জনম ।
পরশু রামের ভয় এ বড় সরম ।।
রণে ভঙ্গ দিয়া মোরা এ দেশে আইসাছি ।
ভঙ্গ ক্ষত্রি রাজবংশী এই নামে আছি ।।
ব্রাহ্মণেরে নারায়ণে নাহি কিছু ভেদ ।।
এই দেশে ঘোড়াঘাট-রঙ্গপুর জেলা ।
যে জেলা করিছে বঙ্গদেশের উজলা ।।
এ জেলার শেষ রাজা রাজা নীলাম্বর ।
ভোট চীন ব্রমহা আদি যারে দিলা কর ।।
[Page 177]
যার তলোয়ারে প্রাণ দিয়াছিল গাজি ।
যার ভয়ে পলাইল কত কত কাজি ।।
শেষেতে কারসাজি করে সাজি নারীবেশ ।
সেই হাতে পুড়ি গেল এই পূণ্য দেশ ।।
পরে নরনারায়ণ হৈল পুনঃ রাজা ।
ভোট ব্রম্ভা আদি তার পুনঃ হইল প্রজা ।।
সেই শিব বংশে জন্ম রাজা পরীক্ষিৎ ।
রঙ্গপুরের পূর্ব্বে ভাগে যার ছিল স্থিত ।।
যে চাতুরী অন্তরে নিয়াছে ভারত ।
সেই চাতুরীতে তার কৈল হস্তগত ।।
সেই হ'তে দিল্লী বাদসাহা হৈল রাজা ।
প্রজাগুলা পূর্ব্বের মত নাহি থাকে তাজা ।।
নিজের ভগিনী দিয়া বাদসাহের কাছে ।
মানসিংহ পাইল মান এইরূপ ছাঁচে ।।
[Page 178]
রংপুরে ফতেপুর প্রকাণ্ড চাকেলা ।
রাজারায় রাজা তার আছিল একেলা ।।
ধর্ম্মে মতি রাজারায় কত কৈল দান ।
ব্রম্ভোত্তর ভূমি কত ব্রাহ্মণেতে পান ।।
দেবোত্তর আর বৈদ্যোত্তর আদি ।
কতদান করিয়াছে নাহি যে অবধি ।।
মন্থনা বামনডাঙ্গা প্রভৃতি পরগণা ।
অনুগত ব্রাহ্মণ জানিয়া কঈল দান ।
ফতেপুরের এত বড় এই জন্যে মান ।।
কোম্পানীর আমলেতে রাজা দেবীসিং ।
সে সময়ে মুল্লুকেতে হৈল বার ঢিং ।।
যেমন যে দেবতার মুরতি গঠন ।
তেমনি হইল তার ভূষণ বাহন ।।
রাজার পাপেতে হৈলো মুল্লুক আকাল ।
শিওরে রাখিয়া টাকা গৃহী মারা গেল ।।
কত যে খাজানা পাইবে তার নেকা নাই ।
যত পারে তত নেয় আরো বলে চাই ।।
দেও দেও চাই চাই এই মাত্র বোল ।
মাইরের চোটেতে উঠে ক্রন্দনের রোল ।।
মানীর সম্মান নাই মানী জমিদার ।
ছোট বড় নাই সবে করে হাহাকার ।।
সোয়ারি ত চড়িয়া যায় পাইকে মারে জোতা ।
দেবীসিংহের কাছে আজ সবে হলো ভোঁতা ।।
পারে না ঘাঁটায় চলতে ঝিউরী বউরী ।
দেবীসিংহের লোকে নেয় তাকে জোর করি ।।
[Page 179]
পূর্ণ কলি অবতার দেবীসিংহ রাজা ।
দেবীসিংএর উপদ্রবে প্রজা ভাজা ভাজা ।।
রাজারায়ের পুত্র হয় শিবচন্দ্র রায় ।
শিবের সমান বলি সর্ব্ব লোকে গায় ।।
ইটাকুমারিতে তার আছে রাজবাটী ।
দেখিতে প্রকাণ্ড বড় অতি পরিপাটী ।।
কত ঘর কত দুয়ার কত যে আঙ্গিনা ।
তার সনে কোন বাড়ীর তুলনা লাগে না ।।
বড় ঘর চণ্ডীমণ্ডপ টুঁই অতি উঁচা ,
দুই চালে ঘর খানি কোণা গুলা নীচা ।।
[Page 180]
পশ্চিম দুয়ারী মণ্ডপ আর কোন খানে নাই ।
এ ঘর হাতে যে ঘর হইবে সেটাও দেখবার পাই ।।
কত পাইক পেয়াদা আছে কত দারোয়ান ।
কত যে আমলা আছে কত দেওয়ান ।
মন্থনার কর্ত্তী জয় দুর্গা চৌধুরাণী ।
বড় বুদ্ধি বড় তেজ সকলে বাখানি ।।
শিবচন্দের কাজ কর্ম্ম তার বুদ্ধি নিয়া ।
তার বুদ্ধির পতিষ্ঠা করে সক্কল দুনিয়া ।।
আকালে দুনিয়া গেল দেবী চায় টাকা ।
মারি ধরি লুট করে বদমাইশ পাকা ।।
শিবচন্দ্রের হৃদে এই সব দুষ্ক বাজে ।
জয়দুর্গার আং্যা শিবচন্দ্র সাজে ।।
দেবীসিঙ্গের দরবারে শিবচন্দ্র গেল ।
প্রজার দুষ্কের কথা কহিতে লাগিল ।।
রজপুত কালাভূত দেবিসিং হয় ।
চেহারায় মৈষাসুর হইল পরাজয় ।।
শুনি চক্ষু কট মট লাল হৈল রাগে ।
'কৌন হ্যায় কৌন হ্যায়' বলি দেবী হাঁকে ।।
শিবচন্দ্রকে কয়েদ করে দিয়া পায়ে বেড়ি ।
শিবচন্দ্র রাজা থাকে কয়েদখানাতে পড়ি ।।
দেওয়া শুনিয়া পরে অনেক টাকা দিয়া ।
ইটাকুমারিত আনে শিবে উদ্ধারিয়া ।।
বৈদ্যবংশ চন্দ্র শিবচন্দ্র মহাশয় ,
দেবীসিঙ্গের অত্যাচার আর নাহি সয় ।।
রঙ্গপুরে আছিল যতেক জমিদার ।
সবাকে লিখিল পত্র সেঠটে আসিবার ।।
নিজ এলাকার আর ভিন্ন এলাকার ।
সক্কল প্রজাক ডাকে রোকা দিয়া তার ।।
হাতি ঘোড়া বরকন্দাজে ইটাকুমারী ভরে ।
[Page 181]
সব জমিদার আইসে শিবচন্দ্রের ঘরে ।।
পীরগাছার কর্ত্তী আইল জয়দুর্গা দেবী ।
জগমোহনেতে বৈসে একে এক সবি ।।
রাইয়ৎ প্রজারা সবে থাকা খাড়া হৈয়া ।
হাত জুড়ি চক্ষুজলে বক্ষ ভাসাইয়া ।।
পেটে নাই অন্ন তাদের পৈরণে নাই বাস ।
চামে ঢাকা হাড় কয়খান করি উপবাস ।।
শিবচন্দ্র খাড়া হইয়া কয় হাত জোড়ে ।
রাগেতে কহিতে কথা চক্ষে জল পড়ে ।।
প্রজাদেক দেখাইয়া জমিদার গণে ।
এদের দুষ্ক না ভাবিয়া অন্ন খা'ন কেনে ।।
উত্তর হাতে জল আসিয়া বড় নাগে বাণ ।
সেই বাণে খা'য়া ফেলায় যত কিছু ধান ।।
কত দিনে কত কষ্টে কত টাকা দিয়া ।
ক্যারোয়ার মুখ আমি দিয়াছি বান্ধিয়া ।
রাজার পাপে প্রজা নষ্ট দেওয়ার নাই জল ।
মাঠে ধান জ্বলিয়া গেল ঘরে নাই সম্বল ।
বচ্ছরে বচ্ছরে এলা হইতেছে আকাল ।
চালে নাই খেড় কারো ঘরে নাই চাল ।।
মাও ছাড়ে বাপ ছাড়ে ছাড়ে নিজের মাইয়া ।
বেটা ছাড়ে বেটি ছাড়ে নাই কারো মায়া ।
[Page 182]
দুষ্ট রাজা দেবীসিংহে বুঝাইতে গেলাম ।
আমার পায়ে বেড়ী দিল দেওয়ানের গোলাম ।
প্রজার অবস্থা দেখি যাক করিতে হয় ।
কর জমিদারগণ তোমরা মহাশয় ।।
কারো মুখে নাই কথা হেটমুণ্ডে রয় ।
রাগিয়া শিবচন্দ্রে রায় পুনরায় কয় ।।
যেমন হারামজাদা রজপুত ডাকাইত ।
খেদাও সর্ব্বায় তাক ঘাড়ে দিয়া হাত ।।
জ্বলিয়া উঠিল তবে জয়দুর্গা মাই ।
তোমরা পুরুষ নও শকতি কি নাই ?
মাইয়া হয়া জনমিয়া ধরিয়া উহারে ।
খণ্ড খণ্ড কাটিবারে পারোং তলোয়ারে ।।
করিতে হৈবেনা আর কাহাকেও কিছু ।
প্রজাগুলা করিবে সব হইব না নীচু ।।
রাগি কয় শিবচন্দ্র থর থর কাঁপে ।
ফ্যাণা ধরি উঠে যেমন রাগি গোঁমা সাঁপে ।।
শিবচন্দ্র নন্দী কয় শুন প্রজাগণ ।
রাজার তোমরা অন্ন তোমারই ধন ।।
রঙ্গপুরে যাও সবে হাজার হাজার ।
দেবীসিংহের বাড়ী নুট বাড়ী ভাঙ্গ তার ।।
পারিষদবর্গ সহ তারে ধরি আন ,
আপন হস্তেতে তার কাটিয়া দিমো কাণ ।।
[Page 183]
শিবচন্দ্রের হুকুমেতে সব প্রজা ক্ষ্যাপে ।
হাজার হাজার প্রজা ধায় কে ক্ষ্যাপে ।।
নাঠি নিল খন্তি নিল নিল কাচি দাও ।
আপত্য করিতে আর না থাকিল কাঁও ।।
ঘাড়েতে বাঁকুয়া নিল হালের জোয়াল ।
জাঙ্গলা বলিয়া সব চলিল কাঙ্গাল ।।
চারি ভিতি হাতে আইল রঙ্গপুরে প্রজা ।
ভদ্রগুলা আইল কেবল দেখিবার মজা ।।
ইটা দিয়া পাইটকা দিয়া পাটকেলায় খুব ।
চারি ভিতি হাতে পড়ে করিয়া ঝুপ ঝুপ ।।
ইটায় ঢেলের চোটে ভাঙ্গিল কারো হাড় ।
দেবীসিংএর বাড়ী হৈল ইটার পাহাড় ।।
খিড়িকির দুয়ার দিয়া পলাইল দেবীসিং ।
সাথে সাথে পালেয়া গেল সেই বারঢিং ।।
দেবীসিং পালাইল দিয়া গাও ঢাকা ।
কেউ বলে মুর্শিদাবাদ কেউ বলে ঢাকা ।।
[Page 184]
ইংরাজের হাতে রাজ্য দিলেন চক্রপাণি ।
সুবিচার করি গেল আপনি কোম্পানি ।।
ইংরাজ বিচার করে এজলাস করি ।
একে কে ফাটকেতে রাখে ঢিংএ ধরি ।।
সেই শিবচন্দ্র রাজা ইটাকুমারীর ।
সেই গ্রামে বাস করি জানিবেন থির ।।
[Page 185]
কুঁড়া আছে বাঁশদহ নদী আলাইকুড়ী ।
কালী আছেন জাগ্রত আরো আছেন বুড়ী ।।
ঠাকুরপাড়া বামনপাড়া আছে বৈদ্যপাড়া ।
পাড়ায় পাড়ায় গ্রামখানি সব জোড়া ।
কায়েতপাড়া গণকপাড়া, কর্ণিপাড়া আছে ।
কামারপাড়া, ছুতারপাড়া, কুমারপাড়াও আছে ।।
মালীপাড়া নাউয়াপাড়া, রাঢিরপাড়ার কাছে ।
তাঁতীপাড়া গিরস্তপাড়া, আছে গ্রামের পাছে ।।
গ্রামের দক্ষিণে আছে জোলাপাড়া বড় ।
দুসুতি তৈয়ার ক'রতে তাম্রা বড় দড় ।।
গুঁড় কিনতে চাও যদি গুঁড়াতিপাড়া যাও ।
কড়ি দিয়া যত কিনো মিলবে আরো ফাও ।।
তেলীপাড়া আছে আরো মিয়াপাড়া আছে ।
কত পাড়ার কথা কৈলে সব পাড়ায় সারা ।।
উত্তরে দক্ষিণে লম্বা ঠাকুরপাড়া খানি ।
সক্কলি পণ্ডিত তার সক্কলি বিদ্যামণি ।।
দেখিতে সুন্দর তার আগুনের মত রং ।
দেবতার মত মুর্ত্তি তাদের মুনির মত ঢং ।।
ভোরে স্নান সন্ধ্যা তর্পণ স্তব পূজা জপ ।
সমস্ত দিন পড়া শুনা সমস্ত দিন তপ ।।
সক্কলের আছে চৌপারী পড়ুয়া কত পড়ে ।
পড়ুয়া চলিলে যেন গ্রামখানি নড়ে ।।
শ্রীপঞ্চমী পূজার সমে পড়ূয়ারা মেলে ।
হর হর ধ্বনি করে গ্রাম যেন টলে ।।
নবদ্বীপে সরস্বতী আগে এক পহর ।
বসতি করেন ইহা জানে সর্ব্বত্তর ।।
[Page 186]
ইটা কুমারিতে থাকে আসি পহর বেলা ।
মাইয়া লোকের সঙ্গে হয় সরস্বতীর খেলা ।।
সেই ঠাকুর বংশের পদে করিয়া প্রণাম ।
মদন কামের জাগ গায় দাস রতিরাম ।
This is a selection from the original text

Keywords

অত্যাচার, অন্ন, মাছ, লুট, শাক

Source text

Title: Rangpurer Jager Gaan, Rangapur-Sahitya-Parishat Patrika Vol.3, Rangapur Sahitya Parishat Patrika

Editor(s): Sri Panchanan Sarkar, Sri Haragopal Das Kundu

Publisher: Metcalfe Press

Publication date: 1908

Original compiled c.late 18th century

Place of publication: Calcutta

Provenance/location: This text was transcribed from images available at the Digital Library of India: http://www.dli.ernet.in/. Original compiled c.late 18th century

Digital edition

Original author(s): Ratiram Das

Original editor(s): Panchanan Sarkar

Language: Bengali

Selection used:

  • 1 ) pages 86 to 90
  • 2 ) pages 171 to 186

Responsibility:

Texts collected by: Ayesha Mukherjee, Amlan Das Gupta, Azarmi Dukht Safavi

Texts transcribed by: Muhammad Irshad Alam, Bonisha Bhattacharya, Arshdeep Singh Brar, Muhammad Ehteshamuddin, Kahkashan Khalil, Sarbajit Mitra

Texts encoded by: Bonisha Bhattacharya, Shreya Bose, Lucy Corley, Kinshuk Das, Bedbyas Datta, Arshdeep Singh Brar, Sarbajit Mitra, Josh Monk, Reesoom Pal

Encoding checking by: Hannah Petrie, Gary Stringer, Charlotte Tupman

Genre: India > poetry

For more information about the project, contact Dr Ayesha Mukherjee at the University of Exeter.

Acknowledgements