আশ্বিন গেইছে, কাত্তিকের আ'জ গেল আধেক দিন।
রাত্তির কোণা , একটুকু বা'ড়ছে, পাওয়া না যায় চিন ।।
গাদলা নাই, ঝড়ি নাই, কাশিয়া ফুল ফুটে ।
নাচিয়া বেড়ায় খঞ্জন গুলা ইত্তিউত্তি ছুটে ।।
নদীর জল টলটল দেখা যায় বালা ।
মাথার উপর আকাশ খানি খালি সব নীলা ।।
রাস্তায় ঘাঁটায় কাদো নাই খালি পায়ে যাও ।
আনিতে হৈবেনা জল ধুবার লাগেনা পাও ।।
শীত গীরিষ কিছুই নাই বড় মজার দিন ।
মাছি নাই মশা নাই করেনা পিন পিন ।।
[Page 172]
সাজের বেলা পুরূষদিগে, ঝলক দিয়া চান্দ ।
আকাশের গায় উঠে, অই কেমন তার ছান্দ ।।
গাছের উপর পড়ে জোনাক রূপার গাছ করি ।
পাতের উপরে জোনাকের খাটেনা কারিকুরি ।।
নদীর জল জোনাক পায়া করে ঝকঝক ।
বালুর চর কাশিয়ার ফুল জ্বলে চক চক ।।
জোনাকতে ভরিয়া গেল সমস্ত পিত্থিমি ।
আকাশেতে তারা গুলা করে রিমি ঝিমি ।।
সিঙ্গাহারের ফুলে ফুলে ঢাকিল সব বন ।
সুবাস পায়া ঘরে থাকির কারো না হয় মন ,
সব ঠাঁই ছড়ায় বাস ফুর ফুরা বায় ।
লাখে লাখে ভ্রমরা উড়ে যুতি ফুলের গায় ।।
এমন সময় নদীর কুলে বাঁশীত দিল শান ।
গলে মালা চিকণ কালা করে রাধা রাধা গান ।।
বাঁশীর সুরে ভাসিয়া গেল আকাশ পাতাল মাটি ।।
রুপসী যতেক ছিল ব্রজের বউরী ।
সকলে বাহির হইল নাই কেউ বৈরী ।।
সকলি মিলিল আসি নিকুঞ্জের বনে ।
ডালি ভরি তুলি ফুল আনে জনে জনে ।
ফুলের কঙ্কন পরে ফুলের নেপুর ।
ফুলের হার ফুলের তাড় সবে ভর পুর ।।
কাণে দিল ফুলের কুন্ডল মাথায় ফুলের সিঁতি ।
ফুল সাজে সাজিলা যতেক ব্রজের যুবতী ।।
সবে বলে দেখাবো আজি কেমন চিকণ কালা ।
চিনিয়া নেউক কাঁঞ তার রাধা রূপসী বালা ।।
চিনতে যদি নাই পারে মা'রমো ঠোকনা গালে ।
এই কি তোমার ভালবাসা যাও গরুর পালে ।।
[Page 173]
যার জন্যে ছাড়ি বন্ধু খাওয়া শোওয়া বইসা ।
তারে এখন চিনিনা যে কেমন ভালবাহা ।।
সে দিন যেমন দিন দুপরে ক'রচে বসন চুরি ।
আ'জ তার কাণ ধরিয়া দেখাম চাতুরী ।
বঙ্কিম তার হা দুখানি দিয়া নীল শাড়ী ।
সবার আগে ধরা চূড়া বাঁশী নিম কাড়ি ।।
হাঁসিয়া হাঁসিয়া তবে দিমো করতালি ।
নারীর হাটে নারীর হাতে কি করবেন বনমালী ।।
মাইয়া মানুষ দেখলে তার উচাটন মতি ।
ভাল করি হাউস মিটামো যতেক যুবতী ।।
মাইয়ামানুষ দেখলে তার জিভার পড়ে নাল ।
এতেক যুবতীর সনে ধরুক দেখি তাল ।।
নীল শাড়ী চুরি করি বসিছিল ঠ্যালে ।
আ'জ তার পত্তিশোধ দিমো রাত্তির কালে ।।
নীল মেঘের মত হয় কালীয়ার রং ।
নীল শাড়ী করমো তারে করমো বড় রং ।।
সবাই পরমো তাকে ছিঁড়া ছিঁড়া করি ।
দেখিমো কেমন করেন একেলা মুরারি ।।
এই যে কাচুলি গুলা বড় হইছে কশা ।
একবার দিলে আর না যায় তাক খসা ।।
এগুলা ছিঁড়িয়া ফেলাও দুষ্ক কর দূর ।
দেখিমো কালীয়া ছোঁড়ার কত বুক পুর ।।
কানু্র হাতের তলা লাল পীঠির ভিতি নীল ।
সুন্দর কাঁচুলি হৈবে না হইবে এতেক রমণী ।
দেখিমো দেখিমো কেমন করেন নীলমণি ।।
[Page 174]
একেবারে তুলমো সবে রসের তুফান ।
ঝগড়া নাই ঝাঁটি নাই সকলি সমান ।।
গাছের আওরালে থাকি সব শুনিল কাণু ।
হাসতে হাসতে আসিল কাণাই বাজাইয়া বেণু ।।
কাণাই কয় মিলিছেন যতেক যুবতী ।
আমার কারণে তোমরা কি করলেন যুকতি ।।
কাড়িয়া নিমেন পীতধড়া সাবাস সাবাস ।
পীত বরণ তোমার উরাত হৈবে পীতবাস ।।
কাণাইর কথা শুনি হাসিয়া আটখান ।
এ পড়ে উহার গায়ে ছুটি রসের বাণ ।।
যতেক গোপিনী আছিল তত হৈল কাণু ।
নাচিতে লাগিল সবে ডগ মগ তনু ।।
পায়ের নেপুর বাজে হাটের কঙ্কন ।
মধুর বাঁশরী বাজায় মদন মোহন ।।
নাচিতে নাচিতে উঠে গানের তরঙ্গ ।
গভীর শব্দে বাহে রসের মৃদঙ্গ ।।
ভুবন ভরিয়া গেল এ রসের গানে ।
ভাঙ্গিল শিবের ধ্যান উঠে দেবী সনে ।।
পঞ্চ মুখে গান গায় ডম্বরু বাজায় ।
নাচে শিব ঠ্যাস দিয়া ভবানীর গায় ।।
যত দেবি যত দেবা এ রাস হেরিয়া ।
রথের উপরে সবে পড়ে মুরছিয়া ।।
নাচিছে গোপিনী গণ নাচার নাই শেষ ।
খুলিল মাথার খোপা আউলাইল কেশ
ছরমে সবার মুখে বিন্দু বিন্দু ঘাম ।
আপন অঞ্চলে তাহা মুছাইছে শাম ।।
নাচিতে নাচিতে সবার ছিঁড়িয়া গেল ডুরি ।
খসিল কাঁচুলি তাদের খইসে যেন শাড়ী ।।
[Page 175]
সৌগ ঠাঁই কাল জল কোণ ঠাঁই নাই ।।
সমুদ্দুর হইছে আজ আপনি কাণাই ।।
আদি নাই অন্ত নাই নাই কুল কিনার ।
এ সমুদ্রে ঝাঁপ দিলে উঠে শক্তি কার ।।
গণিতে না পারি কত আশিছে কামিনী ।
সগগুলি হইছে নদী যতেক গোপিনী ।।
কামের বাতাসে সবার উঠিছে হিল্লোল ।
রাসে তরঙ্গে সবার বাড়িছে কল্লোল ।।
সকল নারীর শিরা কাণাইর সাধা ।
আপনি হইছে গঙ্গা তায় গৌরী রাধা ।।
শত শত গোপিনী গাঙেরে সঙ্গে করি ।
ভাসেয়া ভুবন ধায় গঙ্গা হরি হরি ।।
ঝম্প দিয়া পড়ি মিশে সেই কালা জলে ।
রতিরাম দাস রাস গায় কুতূহলে ।।
কাণাই ধামালি পালা এত দূরে সারা ।
বৈষ্ণবেতে গাও হরি শাক্তে গাও তারা ।।
ব্রাহ্মণের শ্রীপাদ পদ্মে করি পরিণাম ।
নিবেদন করে দাস জাতি নাম ধাম ।।
পুরব দিগেতে ব্রম্ভপুত্রের মেলানি ।
পশ্চিমে কুশাই গঙ্গা আছয়ে ছড়ানি ।।
উত্তরেতে গিরিরাজ দক্ষিণে বাঙ্গালা ।
যে দেশে কিরিপা করে কামাক্ষ্যা মঙ্গলা ।।
করতোয়া শিবের বিভার হস্তজল ।
মধ্য দিয়া বয়া যায় করি টল টল ।।
[Page 176]
করতোয়ার তীরে আছে শীলাদেবীর ঘাট ।
পরশুরামের আছে সেখানেতে পাঠ ।।
পৌষ মাঘে হয় যদি নারায়ণী যোগ ।
শতেক যোজন হ'তে আইসে কত লোকে ।।
এই সীমার মাঝে দেশ পোণ দুয়ার পিতি ।
এ দেশে আমাদের জাতির বসতি ।।
হায়রে রাজার বংশে লভিয়ে জনম ।
পরশু রামের ভয় এ বড় সরম ।।
রণে ভঙ্গ দিয়া মোরা এ দেশে আইসাছি ।
ভঙ্গ ক্ষত্রি রাজবংশী এই নামে আছি ।।
ব্রাহ্মণেরে নারায়ণে নাহি কিছু ভেদ ।।
এই দেশে ঘোড়াঘাট-রঙ্গপুর জেলা ।
যে জেলা করিছে বঙ্গদেশের উজলা ।।
এ জেলার শেষ রাজা রাজা নীলাম্বর ।
ভোট চীন ব্রমহা আদি যারে দিলা কর ।।
[Page 177]
যার তলোয়ারে প্রাণ দিয়াছিল গাজি ।
যার ভয়ে পলাইল কত কত কাজি ।।
শেষেতে কারসাজি করে সাজি নারীবেশ ।
সেই হাতে পুড়ি গেল এই পূণ্য দেশ ।।
পরে নরনারায়ণ হৈল পুনঃ রাজা ।
ভোট ব্রম্ভা আদি তার পুনঃ হইল প্রজা ।।
সেই শিব বংশে জন্ম রাজা পরীক্ষিৎ ।
রঙ্গপুরের পূর্ব্বে ভাগে যার ছিল স্থিত ।।
যে চাতুরী অন্তরে নিয়াছে ভারত ।
সেই চাতুরীতে তার কৈল হস্তগত ।।
সেই হ'তে দিল্লী বাদসাহা হৈল রাজা ।
প্রজাগুলা পূর্ব্বের মত নাহি থাকে তাজা ।।
নিজের ভগিনী দিয়া বাদসাহের কাছে ।
মানসিংহ পাইল মান এইরূপ ছাঁচে ।।
[Page 178]
রংপুরে ফতেপুর প্রকাণ্ড চাকেলা ।
রাজারায় রাজা তার আছিল একেলা ।।
ধর্ম্মে মতি রাজারায় কত কৈল দান ।
ব্রম্ভোত্তর ভূমি কত ব্রাহ্মণেতে পান ।।
দেবোত্তর আর বৈদ্যোত্তর আদি ।
কতদান করিয়াছে নাহি যে অবধি ।।
মন্থনা বামনডাঙ্গা প্রভৃতি পরগণা ।
অনুগত ব্রাহ্মণ জানিয়া কঈল দান ।
ফতেপুরের এত বড় এই জন্যে মান ।।
কোম্পানীর আমলেতে রাজা দেবীসিং ।
সে সময়ে মুল্লুকেতে হৈল বার ঢিং ।।
যেমন যে দেবতার মুরতি গঠন ।
তেমনি হইল তার ভূষণ বাহন ।।
রাজার পাপেতে হৈলো মুল্লুক আকাল ।
শিওরে রাখিয়া টাকা গৃহী মারা গেল ।।
কত যে খাজানা পাইবে তার নেকা নাই ।
যত পারে তত নেয় আরো বলে চাই ।।
দেও দেও চাই চাই এই মাত্র বোল ।
মাইরের চোটেতে উঠে ক্রন্দনের রোল ।।
মানীর সম্মান নাই মানী জমিদার ।
ছোট বড় নাই সবে করে হাহাকার ।।
সোয়ারি ত চড়িয়া যায় পাইকে মারে জোতা ।
দেবীসিংহের কাছে আজ সবে হলো ভোঁতা ।।
পারে না ঘাঁটায় চলতে ঝিউরী বউরী ।
দেবীসিংহের লোকে নেয় তাকে জোর করি ।।
[Page 179]
পূর্ণ কলি অবতার দেবীসিংহ রাজা ।
দেবীসিংএর উপদ্রবে প্রজা ভাজা ভাজা ।।
রাজারায়ের পুত্র হয় শিবচন্দ্র রায় ।
শিবের সমান বলি সর্ব্ব লোকে গায় ।।
ইটাকুমারিতে তার আছে রাজবাটী ।
দেখিতে প্রকাণ্ড বড় অতি পরিপাটী ।।
কত ঘর কত দুয়ার কত যে আঙ্গিনা ।
তার সনে কোন বাড়ীর তুলনা লাগে না ।।
বড় ঘর চণ্ডীমণ্ডপ টুঁই অতি উঁচা ,
দুই চালে ঘর খানি কোণা গুলা নীচা ।।
[Page 180]
পশ্চিম দুয়ারী মণ্ডপ আর কোন খানে নাই ।
এ ঘর হাতে যে ঘর হইবে সেটাও দেখবার পাই ।।
কত পাইক পেয়াদা আছে কত দারোয়ান ।
কত যে আমলা আছে কত দেওয়ান ।
মন্থনার কর্ত্তী জয় দুর্গা চৌধুরাণী ।
বড় বুদ্ধি বড় তেজ সকলে বাখানি ।।
শিবচন্দের কাজ কর্ম্ম তার বুদ্ধি নিয়া ।
তার বুদ্ধির পতিষ্ঠা করে সক্কল দুনিয়া ।।
আকালে দুনিয়া গেল দেবী চায় টাকা ।
মারি ধরি লুট করে বদমাইশ পাকা ।।
শিবচন্দ্রের হৃদে এই সব দুষ্ক বাজে ।
জয়দুর্গার আং্যা শিবচন্দ্র সাজে ।।
দেবীসিঙ্গের দরবারে শিবচন্দ্র গেল ।
প্রজার দুষ্কের কথা কহিতে লাগিল ।।
রজপুত কালাভূত দেবিসিং হয় ।
চেহারায় মৈষাসুর হইল পরাজয় ।।
শুনি চক্ষু কট মট লাল হৈল রাগে ।
'কৌন হ্যায় কৌন হ্যায়' বলি দেবী হাঁকে ।।
শিবচন্দ্রকে কয়েদ করে দিয়া পায়ে বেড়ি ।
শিবচন্দ্র রাজা থাকে কয়েদখানাতে পড়ি ।।
দেওয়া শুনিয়া পরে অনেক টাকা দিয়া ।
ইটাকুমারিত আনে শিবে উদ্ধারিয়া ।।
বৈদ্যবংশ চন্দ্র শিবচন্দ্র মহাশয় ,
দেবীসিঙ্গের অত্যাচার আর নাহি সয় ।।
রঙ্গপুরে আছিল যতেক জমিদার ।
সবাকে লিখিল পত্র সেঠটে আসিবার ।।
নিজ এলাকার আর ভিন্ন এলাকার ।
সক্কল প্রজাক ডাকে রোকা দিয়া তার ।।
হাতি ঘোড়া বরকন্দাজে ইটাকুমারী ভরে ।
[Page 181]
সব জমিদার আইসে শিবচন্দ্রের ঘরে ।।
পীরগাছার কর্ত্তী আইল জয়দুর্গা দেবী ।
জগমোহনেতে বৈসে একে এক সবি ।।
রাইয়ৎ প্রজারা সবে থাকা খাড়া হৈয়া ।
হাত জুড়ি চক্ষুজলে বক্ষ ভাসাইয়া ।।
পেটে নাই অন্ন তাদের পৈরণে নাই বাস ।
চামে ঢাকা হাড় কয়খান করি উপবাস ।।
শিবচন্দ্র খাড়া হইয়া কয় হাত জোড়ে ।
রাগেতে কহিতে কথা চক্ষে জল পড়ে ।।
প্রজাদেক দেখাইয়া জমিদার গণে ।
এদের দুষ্ক না ভাবিয়া অন্ন খা'ন কেনে ।।
উত্তর হাতে জল আসিয়া বড় নাগে বাণ ।
সেই বাণে খা'য়া ফেলায় যত কিছু ধান ।।
কত দিনে কত কষ্টে কত টাকা দিয়া ।
ক্যারোয়ার মুখ আমি দিয়াছি বান্ধিয়া ।
রাজার পাপে প্রজা নষ্ট দেওয়ার নাই জল ।
মাঠে ধান জ্বলিয়া গেল ঘরে নাই সম্বল ।
বচ্ছরে বচ্ছরে এলা হইতেছে আকাল ।
চালে নাই খেড় কারো ঘরে নাই চাল ।।
মাও ছাড়ে বাপ ছাড়ে ছাড়ে নিজের মাইয়া ।
বেটা ছাড়ে বেটি ছাড়ে নাই কারো মায়া ।
[Page 182]
দুষ্ট রাজা দেবীসিংহে বুঝাইতে গেলাম ।
আমার পায়ে বেড়ী দিল দেওয়ানের গোলাম ।
প্রজার অবস্থা দেখি যাক করিতে হয় ।
কর জমিদারগণ তোমরা মহাশয় ।।
কারো মুখে নাই কথা হেটমুণ্ডে রয় ।
রাগিয়া শিবচন্দ্রে রায় পুনরায় কয় ।।
যেমন হারামজাদা রজপুত ডাকাইত ।
খেদাও সর্ব্বায় তাক ঘাড়ে দিয়া হাত ।।
জ্বলিয়া উঠিল তবে জয়দুর্গা মাই ।
তোমরা পুরুষ নও শকতি কি নাই ?
মাইয়া হয়া জনমিয়া ধরিয়া উহারে ।
খণ্ড খণ্ড কাটিবারে পারোং তলোয়ারে ।।
করিতে হৈবেনা আর কাহাকেও কিছু ।
প্রজাগুলা করিবে সব হইব না নীচু ।।
রাগি কয় শিবচন্দ্র থর থর কাঁপে ।
ফ্যাণা ধরি উঠে যেমন রাগি গোঁমা সাঁপে ।।
শিবচন্দ্র নন্দী কয় শুন প্রজাগণ ।
রাজার তোমরা অন্ন তোমারই ধন ।।
রঙ্গপুরে যাও সবে হাজার হাজার ।
দেবীসিংহের বাড়ী নুট বাড়ী ভাঙ্গ তার ।।
পারিষদবর্গ সহ তারে ধরি আন ,
আপন হস্তেতে তার কাটিয়া দিমো কাণ ।।
[Page 183]
শিবচন্দ্রের হুকুমেতে সব প্রজা ক্ষ্যাপে ।
হাজার হাজার প্রজা ধায় কে ক্ষ্যাপে ।।
নাঠি নিল খন্তি নিল নিল কাচি দাও ।
আপত্য করিতে আর না থাকিল কাঁও ।।
ঘাড়েতে বাঁকুয়া নিল হালের জোয়াল ।
জাঙ্গলা বলিয়া সব চলিল কাঙ্গাল ।।
চারি ভিতি হাতে আইল রঙ্গপুরে প্রজা ।
ভদ্রগুলা আইল কেবল দেখিবার মজা ।।
ইটা দিয়া পাইটকা দিয়া পাটকেলায় খুব ।
চারি ভিতি হাতে পড়ে করিয়া ঝুপ ঝুপ ।।
ইটায় ঢেলের চোটে ভাঙ্গিল কারো হাড় ।
দেবীসিংএর বাড়ী হৈল ইটার পাহাড় ।।
খিড়িকির দুয়ার দিয়া পলাইল দেবীসিং ।
সাথে সাথে পালেয়া গেল সেই বারঢিং ।।
দেবীসিং পালাইল দিয়া গাও ঢাকা ।
কেউ বলে মুর্শিদাবাদ কেউ বলে ঢাকা ।।
[Page 184]
ইংরাজের হাতে রাজ্য দিলেন চক্রপাণি ।
সুবিচার করি গেল আপনি কোম্পানি ।।
ইংরাজ বিচার করে এজলাস করি ।
একে কে ফাটকেতে রাখে ঢিংএ ধরি ।।
সেই শিবচন্দ্র রাজা ইটাকুমারীর ।
সেই গ্রামে বাস করি জানিবেন থির ।।
[Page 185]
কুঁড়া আছে বাঁশদহ নদী আলাইকুড়ী ।
কালী আছেন জাগ্রত আরো আছেন বুড়ী ।।
ঠাকুরপাড়া বামনপাড়া আছে বৈদ্যপাড়া ।
পাড়ায় পাড়ায় গ্রামখানি সব জোড়া ।
কায়েতপাড়া গণকপাড়া, কর্ণিপাড়া আছে ।
কামারপাড়া, ছুতারপাড়া, কুমারপাড়াও আছে ।।
মালীপাড়া নাউয়াপাড়া, রাঢিরপাড়ার কাছে ।
তাঁতীপাড়া গিরস্তপাড়া, আছে গ্রামের পাছে ।।
গ্রামের দক্ষিণে আছে জোলাপাড়া বড় ।
দুসুতি তৈয়ার ক'রতে তাম্রা বড় দড় ।।
গুঁড় কিনতে চাও যদি গুঁড়াতিপাড়া যাও ।
কড়ি দিয়া যত কিনো মিলবে আরো ফাও ।।
তেলীপাড়া আছে আরো মিয়াপাড়া আছে ।
কত পাড়ার কথা কৈলে সব পাড়ায় সারা ।।
উত্তরে দক্ষিণে লম্বা ঠাকুরপাড়া খানি ।
সক্কলি পণ্ডিত তার সক্কলি বিদ্যামণি ।।
দেখিতে সুন্দর তার আগুনের মত রং ।
দেবতার মত মুর্ত্তি তাদের মুনির মত ঢং ।।
ভোরে স্নান সন্ধ্যা তর্পণ স্তব পূজা জপ ।
সমস্ত দিন পড়া শুনা সমস্ত দিন তপ ।।
সক্কলের আছে চৌপারী পড়ুয়া কত পড়ে ।
পড়ুয়া চলিলে যেন গ্রামখানি নড়ে ।।
শ্রীপঞ্চমী পূজার সমে পড়ূয়ারা মেলে ।
হর হর ধ্বনি করে গ্রাম যেন টলে ।।
নবদ্বীপে সরস্বতী আগে এক পহর ।
বসতি করেন ইহা জানে সর্ব্বত্তর ।।
[Page 186]
ইটা কুমারিতে থাকে আসি পহর বেলা ।
মাইয়া লোকের সঙ্গে হয় সরস্বতীর খেলা ।।
সেই ঠাকুর বংশের পদে করিয়া প্রণাম ।
মদন কামের জাগ গায় দাস রতিরাম ।