Krishi Tatwa
About this text
Introductory notes
Krishi Tatwa was a monthly journal published by the Paikpara Nursery in Calcutta. The journal focused on news and practices pertaining to agriculture and farming. The Journal was edited by Bipradas Mukhopadhyay and was published by Nrityagopal Chattopadhyay on behalf of the Paikpara Nursery. The present volume of the journal was published in 1883.
The following excerpts have been made from two articles. One of the articles suggest farming methods of enhancing the sizes of vegetables. The other article discusses on the traditional "Khonar Bochon" or "Khona's maxims". These sayings popular among the rural population are ascribed to Khona- a semi-historical female astrologer. The sayings present an interesting picture of the traditional agricultural cycle and farming methods of the Bengal.
Selection details
The following excerpts have been made from two articles. One of the articles suggest farming methods of enhancing the sizes of vegetables. The other article discusses on the traditional "Khonar Bochon" or "Khona's maxims". These sayings popular among the rural population are ascribed to Khona- a semi-historical female astrologer. The sayings present an interesting picture of the traditional agricultural cycle and farming methods of the Bengal.
1. শাকসবজীর আকার বড় করিবার উপায় ।
শাকসবজী প্রভৃতি চাষাদির উন্নতে করিতে হইলে অগ্রে ভূমির অবস্থা ভাল করিতে হয় । যে পরিমাণে ভূমির পাইট করিতে পারা যায়, শাকসবজীর আকারও যে সেই পরিমাণে উত্তম হইয়া থাকে, তাহা চাষী মাত্রেই বিশেষরূপ অবগত আছে । একটু যত্নের সহিত চাষ আবাদ না করিলে কোন ক্রমেই তাহার উন্নতি হইতে পারে না এজন্য যে কোণ চাষে প্রবৃত্ত হইতে হইলে, অগ্রে চাষ ও সারাদি দিয়া ক্ষেত্রের ঊর্ব্বরাশক্তি বৃদ্ধি করিতে হয় । ঊর্ব্বরা ক্ষেত্র ভিন্ন কোন ক্রমেই শাকসবজীর আকার বড় হয় না । সচরাচর যে সকল শাক সবজী হইয়া থাকে, তদসমুদায়ের আকার তত বড় হইতে দেখা যায় না । এজন্য একটু বিশেষ মনোযোগের সহিত চাষ আবাদ করিতে হয়, আমরা পরীক্ষা করিয়া দেখিয়াছ, ক্ষেত্রে আড়াই আঙ্গুল [Page 25] পুরু করিয়া সার দিলে বিশেষ উপকার হইয়া থাকে । কিন্তু অনেকের পক্ষে এরূপ নিয়মে সায় দেওয়া ব্যয় সাধ্যা এজন্য চাষীরা প্রায়ই ততটা সার দিয়া শাকসবজীর আবাদ করে না । ঐরূপ নিয়মে সার দেওয়ার একটা বিশেষ গুণ এই যে একবার সারদিলে আবার দুই তিন বৎসর ক্ষেত্রে সার না দিলেও কোন ক্ষতি হয় না ।
শাকসবজীর আকার বড় করাই চাষীর প্রধান গুণপণা । কারণ উহাদিগের আকার যে পরিমাণে বড় হইয়া থাকে, সেই পরিমাণে মূল্যাদিও অধিক হইতে দেখা যায় । চাষের যে ক একটী অঙ্গ তাহার প্রত্যোক বিষয়েরই প্রতি বিশেষরূপ মনোযোগ না দিলে কোন ক্রমেই উন্নতি হইতে পারে না । অনেক সময় দেখা যায় উৎকৃষ্ট জাতীয় বীজ চাষ করিয়াও শাকসবজীর আকার ছোট হইয়া থাকে ।অতএব কেবল মাত্র ক্ষেত্রে সার দিলে আশানুরূপ ফল লাভ হইবার পক্ষে সম্পূর্ণ আশা করা যাইতে পারে না । ভালভাল জাতীয় বীজ সংগ্রহ করিয়া চাষ করা, ক্ষেত্রে উপযুক্ত পরিমাণে সার দেওয়া এবং যো অর্থাৎ উপযুক্ত সময় বুঝিয়া পাইট করা, এই গুলিই চাষের প্রধান অঙ্গ । কৃষকের উচিত এই কয়েকটীর প্রতি দৃষ্টি রাখিয়া আবাদ করেন ।
শাকসবজীর চাষে ভূমি অধিক গভীর করিয়া কর্ষণ করিতে হয় । এমন কি ক্ষেত্র অন্ততঃ আট নয় আঙ্গুল পরিমাণ গভীর করিয়া খনন করিলে শাকসবজীর পক্ষে অত্যন্ত সুবিধা হইয়া থাকে । ভূমি কর্ষণ বা খনন অল্প হইলে গাছপালা উপযুক্ত পরিমাণে বাড়িতে পারে না । গাছপালা ভাল রকম না বাড়িতে পাইলে তাহাদের আকার যে ছোট হইয়া থাকে, তাহা সকলে সহজেই বুঝিতে পারেন । গাছের মূল যতই বিস্তারিত হইতে পারে ততই তাহাদিগের পক্ষে উপকারী । এদেশে ভূমি খনন সম্বন্ধে অনেকেরই তাচ্ছিল্য ভাব দেখা গিয়া থাকে । আমাদের বিবেচনার ক্ষেত্র আট আঙ্গুল পরিমাণ গভীর করিয়া খনন করত তিন বা সাড়ে তিন হাত চৌড়া ও ইচ্ছানুরূপ দৈর্ঘ ভূমি খণ্ডের উভয় পার্শ্ব হইতে গুঁড় মাটি তাহার উপর তুলিয়া ভূমি অপেক্ষা আট দশ আঙ্গুল উচ্চ চৌকা প্রস্তুত করিতে হইবে । পাশের মাটি তুলিয়া দেইলে প্রত্যেক চৌকার পাশে জুলির ন্যায় হইবে । ঐ জুলির গভীরতা আট আঙ্গুল এবং চৌড়া অন্ততঃ চার আঙ্গুল হওয়া আবশ্যক [Page 26] পূর্ব্বোক্তরূপ চৌকা তৈয়ার হইলে, তাহার উপর বীজ বা চারা পুতিতে হইবে । যখন ক্ষেতে জল দেওয়ার আবশ্যক হইবে, তখন ঐ সকল জুলি জল পূর্ণ করিয়া দিলেই চৌকার মাটি সরস থাকিতে পারে । প্রতিদিন এই নিয়মে জল দেওয়া উচিত নহে । মাটির অবস্থা বুঝিয়া জল দেওয়ার নিয়ম করিলে চলিতে পারে । বোমা কিম্বা অন্য কোন যন্ত্র দ্বারা গাছে অল্প অল্প পরিমাণে জল দিলে উহা সতেজ হইয়া উঠে । ক্ষেত্রস্থ জুলি সমূহ জল পূর্ণ থাকিলে, তদ্বারা গাছের শিকড় সরস থাকে বটে , কিন্তু সাবধান হইবে যেন অধিক জল থাকিতে না পারে, কারণ শিকড়ে সর্ব্বদা জল সঞ্চিত হইলে কিম্বা শিকড় ভিজা মাটিতে থাকিলে উহা পচিয়া নষ্ট হইবার সম্ভব ।
কপি, এণ্ডামুলা প্রভৃতি শাকসবজীর চারা ঘন ঘন হইলে, পাতলা করিয়া দিতে হইবে । চৌকার উপর চারি পাঁচ হাত উচ্চ করিয়া মাচা প্রস্তুত করিয়া প্রচণ্ড রৌদ্র কিংবা অত্যন্ত বর্ষার সময় মাদুর অথবা দরমা দ্বারা মাচা ঢাকিয়া দিতে হইবে । অপর অত্যন্ত রৌদ্র ও বৃষ্টির পর মাটির আচ্ছাদনে খুলিয়া দিলে গাছের আকার অনেকটা ষড় হইয়া থাকে ।
শাকসবজী প্রভ্রিতির আকার বড় হইলে কেবল যে মূল্য অধিক হইয়া থাকে, তাহা নহে উহার বৃহৎ আকার দেখিলেও মনে অত্যন্ত আনন্দ জন্মিয়া থাকে । উপযুক্ত নিয়মে চাষ করিলে যে কোন উদ্ভিজ্জ সমূহের ফল, মূল, কাণ্ড প্রভৃতির আকার নিশ্চয়ই বৃহৎ হইয়া থাকে । এদেশের জল বায়ুর যে রূপ শক্তি তাহাতে প্রায় পৃথিবীর সকল স্থানেরেই শাকসবজী উৎপন্ন হইতে পারে । দোয়াঁশ হল্কা মাটিতেই শাকসবজী উওমরূপ জন্মিয়া থাকে । আমরা সর্ব্বদা দেখিতে পাই একরূপ বীজ রোপণ করিয়া কেহ কেহ বৃহৎ আকার বিশিষ্ট শাকসবজী উৎপাদন করিয়া থাকেন, এবং অপরে আবার সেই বীজের আবাদে ফসল ভাল করিতে সমর্থ হয়েন না ।
অনেক শাকসবজীর আকার বড় করিবার মানসে ক্ষেতে অধিক সার দিয়া থাকেন । সারের ভাগ অধিক হইলে যে ফসল ভাল হয় তাহা সম্পূর্ণ ভুল। আমরা পরীক্ষা দ্বারা দেখিয়াছি যে, আবশ্যকের অতিরিক্ত সারে শাকসবজীর আকার বড় হওয়া দূরে থাকুক বরং ফসলের পক্ষে অনিষ্ট হইয়া থাকে । ভূমির অবস্থা ও যে দ্রব্য চাষ করা হইবে এই উভয়ের প্রতি [...][Page 27] উচিত । জমির সার উদ্ভিদাদির এক প্রকার খাদ্য বিশেষ, কোন উদ্ভিদের পক্ষে কোন প্রকার সার সেই খাদ্যের কাজ করিতে পারে তাহা জানা না থাকিলে হাজার সার দিলেও কোন ফল হইবে না। মনে কর যে সকল খাদ্য দ্বারা আমাদের দেহের কোন উপকার হয় না এরূপ দ্রব্য যদি আমরা আহার করি, তবে তদ্বারা কোন উপকারই হইবে না, সেইরূপ যে সার শাকসবজীর দেহ পোষণ করিতে অসমর্থ এরূপ সায় দিয়া চাষ করিলে কিছুই উপকার হয় না । অধিকন্তু বৃথা সার দেওয়ার জন্য অনর্থক ব্যয় এবং ফসল ভালরূপ না হওয়াতে আয়েরও ব্যাঘাত হইয়া থাকে । এজন্য সার সম্বন্ধে দৃষ্টি রাখা চাষের একটী প্রধান কার্য্য ।।
অনেক চাষী অধিক লাভের আশায় ক্ষেতে ঘন ঘন করিয়া শাকসবজী আবার করিয়া থাকে, গাছ, ঘন হইলে তাহার আকার কখনোই বড় হয় না । পাতলা করিয়া বুনিলে যদিও ফসলের পরিমাপ অল্প হইয়া থাকে । কিন্তু গাছের চারিদিকে ফাক থাকাতে এবং ক্ষেত হইতে আবশ্যক মত সায় পাওয়াতে সেই পাতলা গাছ এরূপ বড় আকারের হইয়া থাকে যে তাহার এক একটী গাছ দ্বারা ঘন বুনানির পাঁচটী গাছের সমান লাভ হইতে দেখা যায় । গাছ অধিক হইলেই যে অধিক লাভ হয় তাহা নহে, ফসল অনুসারে লাভালাভ হইয়া থাকে ।
শাকসবজীর আকার বড় করিতে হইলে বড় বড় জাতীয় গায়ের বীজ বুনিতে হয় কারণ বীজ সমুদায়ের মূল, বীজ যে পরিমাণে উৎকৃষ্ট হইবে তদুৎপর শাকসবজীও সেই পরিমাণে বৃহৎ আকার বিশিষ্ট হইবে । বীজের দোষেও অনেক স্থলে ফসলের আকার ছোট হইতে দেখা যায় । এস্থলে চাষীদিগের আর একটী বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি রাখা আবশ্যক । বীজ যতই উৎকৃষ্ট হউক না কেন, কিন্তু সময় অতীত করিয়া চাষ করিলে ফসলের আকার প্রায় ছোট হইয়া থাকে । সময়ের আবাদ করিলে সেরূপ হয় না । এজন্য সময়ের প্রতি লক্ষ্য করিয়া চাষ করা উচিত । এদেশে চাষীদিগের একটী মহৎ দোষ দেখা যায় যে, তাহারা কোন প্রকার ফসলের উন্নতি পক্ষে কোন প্রকার চেষ্টা করে না । এইরূপ চেষ্টার ত্রুটি বশতঃ এ দেশে শাকসবজীর আকার ক্রমেই ছোট হইয়া আসি-[Page 28] -তেছে । অতএব শাকসবজীর আকার বড় করিবার পক্ষে যে সকল নিয়ম উল্লিখিত হইল, তদসমুদায়ের প্রতি বিশেষরূপ দৃষ্টি রাখা সর্ব্বতোভাবে কর্তব্য ।।
2. খনার বচন
কিরূপ স্থানে চাষ করিলে সমধিক লাভের সম্ভব, তদসম্বন্ধে খনার এই উপদেশটী মহোপকারী । চাষ বাড়ীর নিকটে হইলে সর্ব্বদা তত্ত্বাবধান করিতে পারা যায়। এই জন্য ক্ষেত বাড়ীর যতই নিকট হয় ততই ভাল ।ঘুজি দেখিয়া গোরু কিনিলে প্রায়ই ঠকিতে হয় না ।
ফল বৃক্ষের বাগান করিতে হইলে প্রথমে কলার আবার করা ভাল । কলার আবাদ করিয়া সেই সঙ্গে আম, কাঁঠাল ফলিতে যে সময় লাগে সেই সময়ের মধ্যে কলার পাতা, থোড় এবং কলা বিক্রয় দ্বারা লাভ হইতে পারে । নারিকেল বার হাত অন্তর এবং সুপারি আট হাত অন্তর রোপণ করা উচিত; ঘন রোপিত হইলে গাছ কাটিয়া দিয়া ফাক করা আবশ্যক । ফল-বৃক্ষ অধিক অন্তর অন্তর রোপণ করিলে গাছে ফল অধিক হয় । গাছ ঘন হইলে শিকড় ও ডাল পরস্পর ঠেকাঠেকি হওয়াতে ফলের ব্যাঘাত হইয়া থাকে । বাতাস ও রৌদ্র গাছে সকল দিকে সমান ভাবে লাগিতে পারে না এজন্য ফাক ফাক করিয়া গাছ পুঁতিতে হয় । চারা রোপণ সম্বন্ধে এদেশে একটী দোষ দেখিতে পাওয়া যায় যে অনেকে ঘন করিয়া গাছ পুঁতিয়া শেষে মায়া ক্রমে তাহা কাটিতে পারে না । ঘন[Page 40] গাছে যে ফলনের বিস্তর ব্যাঘাত হয় তাহা সকলেরই জানা আবশ্যক । গাছ ঘন করিয়া রোপিত হইলে তাহার স্বাস্থ্য ভালরূপ রক্ষিত হয় না । গাছের স্বাস্থ্যের প্রতি দৃষ্টি রাখা উদ্যানকারীর একটী প্রধান কাজ । এক স্থানে অধিক গাছ রোপিত হইলে কেবল যে ফলন কম হয় তাহা নহে, বড় বড় বৃক্ষ উপযুক্তরূপে বাড়িতে কিম্বা মোটা হইতে পারে না । গাছ মোটা হইলে কাষ্ঠ বিক্রয় দ্বারা বিস্তর আয় হইতে পারে । সকল গাছে কিছু ফল হয় না । কাষ্ঠের জন্য যে সকল গাছ রোপিত হইয়া থাকে, সেই সকল গাছ যত মোটা এবং সারবান হয় ততই মূল্য অধিক হইয়া থাকে । এক স্থানে ঘন করিয়া গাছ রোপিত হইলে গাছের গুঁড়ি মোটা না হইয়া সরু হইয়া থাকে । অতএব কি ফল বৃক্ষ কি বিক্রয় কাষ্ঠোপযোগী বৃক্ষ সমূহ ঘন করিয়া রোপণ করা উচিত নহে ।
সকল গাছের পক্ষে এক প্রকার সায় উপকারী নহে । গাছের প্রকৃতি অনুসারে সারের ব্যবস্থা করা উচিত । যেমন একরূপ খাদ্যে সকল মনুষ্যের দেহ পোষণ হয় না, ভিন্ন ভিন্ন খাদ্যের আবশ্যক হয় সেইরূপ উদ্ভিদদিগের পক্ষেও পৃথক পৃথক সার প্রয়োজন করে । সুপারি গাছের মুলে গোবর এবং বাঁশের গোড়ায় মাটি দিলে বিশেষ উপকার হয় । অফুরন্ত নারিকেল গাছের মূলের মাটি তুলিয়া চারিদিকের শিকড় কাটিয়া দিবে । গোড়ার মাটি তুলিয়া দিলে মুলে রৌদ্রে ও বাতাস লাগিয়া অত্যন্ত উপকার হয় । ওল গাছের গোড়ায় তৃণাদি পচা সার এবং মানকচুর গাছের গোড়ায় ছাই দিলে তাহারা শীঘ্র বাড়িয়া উঠে । চাষীর গাছের বৃদ্ধির পক্ষে সর্ব্বদা দৃষ্টি রাখেন । অনেক চাষী সার নির্ব্বাচন করিতে না পারিয়া যে কোন সার ক্ষেতে দিয়া থাকেন, ক্ষেতে সার দিলেই যে উপকার হইবে সে বিশ্বাস সম্পূর্ণ ভুল । কোন উদ্ভিদ কোন প্রকার সার গ্রহণ করিয়া দেহ পরিপুষ্ট করিতে সমর্থ হয় তদ্বিষয়ে জ্ঞান না থাকিলে অধিক পরিমাণে সার দিলেও কোন ফল হইবে না।