Mangalchandi Geet

About this text

Introductory notes

Mangalkabya is a popular genre in Bengali, influenced by regional cults such as that of Chandi, Manasa, Dharma, or Vaishnav songs, flourished from the thirteenth century to the eighteenth. The poems are typically written in the form of songs (panchalika) meant for performance by professional singers (mangal gayak) backed by a male chorus (dohar) during ritual worship of the particular deity who was the subject of the poem. Chandimangal by Dwija Madhav was published in book form by Calcutta University in 1952. Sudhibhusan Bhattacharya was the editor of the book.

Besides Mukundaram, Dwija Madhav or Madhavacharya was the other noted poet of Mangalkavya. Scholars have suggested, Dwija Madhav was a contemporary of Mukundaram and the text was composed in later half of the 16th Century, between 1579-1600. Dwija Madhav is believed to have been a resident of modern day West Bengal, however his text is more popular in the districts Noakhali, Chittagong in present day Bangladesh. Manuscripts of Dwija Madhav's Chandimangal have been found in Noakhali, Chittagong and Sandwip region, all in modern day Bangladesh.

Selection details

Besides Mukundaram, Dwija Madhav or Madhavacharya was the other noted poet of Mangalkavya. Scholars have suggested, Dwija Madhav was a contemporary of Mukundaram and the text was composed in later half of the 16th Century, between 1579-1600. Dwija Madhav is believed to have been a resident of modern day West Bengal, however his text is more popular in the districts Noakhali, Chittagong in present day Bangladesh. Manuscripts of Dwija Madhav's Chandimangal have been found in Noakhali, Chittagong and Sandwip region, all in modern day Bangladesh.

[Page 1]

1. প্রথম পালা বন্দনা রাগ ধানশী* সুর্য্য-বন্দনা

বন্দম দিঙ্কর-নাথ কশ্যপ-তনয়ে।
যাহার স্মরনে মাত্র বিঘ্ন বিনাশয়ে।।
উদয়-অচলে ১ প্রভু প্রথমে প্রকাশ।
ভ্রামিয়া অখিলের দুঃখ করহ বিনাশ।।
বিনতা-নন্দন প্রভুর রথের সারথি।
ত্বরিতে চালায়ে ৩ রথ পবনের গতি ৪।।
অরুন সারথি রথ সপ্ত অশ্বে বহে।
দিনকৃত পাপ-তাপ দরশনে যায়ে।।
দ্বিজ মাধবে গায়ে মনে ভাবি দেবী।
নায়কেরে তার ৫ দুর্গা কর চিরিজিবী।।
[Page 2]

2. মঙ্গলচন্ডীর গীত রাগ মল্লার গনেশ-বন্দনা

হেরম্ব মহাশয় হইয়া সদয়
ঘটেতে কর অধীষ্ঠান।
বিঘ্ন করয়ে নাশ রক্ষয়ে নিজ দাস
সুচারু হঊক মোর গান।।
পীন কুম্ভস্থল সিন্দুরে উজ্জল ১
সুগন্ধ পুস্প তথি শোভে।
অলি লাখে লাখ বিস্তারিইয়া পাখ ২
ভ্রমিয়া পড়ে মধুলোভে।।
খর্ব্ব কলেবর সুন্দর ছারি কর
রত্ন অলঙ্কার সাজে।
সুচারু গজবক্তে লহিতবরণ ৩ রক্তে
[Page 39]

3. কালকেতু ( রাগ শ্রী কালকেতু ও ফুল্লরার বিয়ে

বাজেরে ঢেমসি বাদ্য বীরের উহারি।
কালকেতু বিহা করে ফুলরা সুন্দরী।।
দুলি খুলি পেলি আহি সাজে ১ তার ঘরে।
মৃগচর্ম্ম পরিধান দুর্গন্ধ শরীরে।।
কন কন আহিয়ে দউহার ছাল খায়ে।
বদন করিয়া রাঙ্গা ব্যাধের ঘরে যায়ে।।
হাসিয়া বিকল বীর আহিগণের সাজে।
বরন করিতে আইল ছাপ্নার মাঝে।।
দ্বিজ মাধবে গায়ে ভাবিয়া ভবানী।
কালকেতু ফুলরার পুস্পের সাজনী।।
ভাল বিহা করে ব্যাধ সুন্দর।
যেমত ফুলরা রামা তেমত বীরবর।। ধু।
দুহাকারে তুলাইল যথ বন্ধুগণে।
সভামধ্যে ২ বৈসাইল মৃগচর্ম্মের আসনে।।
দুহাকার কর দ্বিজ করি একওর।
কুশ ৩ দিয়া তখনে বান্ধিল দ্বিজবর।।
সম্প্রদানের বাক্য বিপ্র উচ্চারে বদনে।
দানের সজ্জা আনিয়া দিলেন বিদ্যমান।।
দম্পতি গৃহেত গেল ব্যাধের নন্দন।
কর্কশ জননী গিয়া করিল রন্ধন।।

4.

[Page 40]
পাবক জ্বালয়ে রামা হ'রা হরম্বিত।
পাকা কলার মূল রান্ধে লবণ-বর্জিত।।
পাকা পুইর শাক রান্ধে পিথালের মেলে।
সম্ভারি তুলাইল তাহা শূকরের তৈলে।।
কৃষ্ণসারের মাংস রান্ধে হরমিত মন।
ক্ষুদ্র তণ্ডুলের অন্ন জোগায়ে ১ তখন।।
ভোজন করিল তথা ব্যাধের নন্দন।
সেই নিশি বঞ্চে বীর রমণীর সঙ্গে।
প্রভাত সময়ে মাত্র শুচি হইল অঙ্গে।।
শ্বশুর শাশুড়ী স্থানে করিয়া মেলানি।
আপনার গৃহেত চলিল বীরমণি।।
এথায়ে নিদয়া রামা মন হরম্বিত।
বধূ লইয়া ঘরে আইল তনয়সহিত।।
সারদার চরণে সরোজ-মধু-লোভে।
দ্বিজ মাধবে তথি অলি হইয়া শোভে।।
[Page 43]

5. স্বর্ণ-গোধিকা পাহি রাগ কালকেতুর খেদ অ ফুলরার প্রবোধ

(ফুলরা রামা) কি দিয়া পুঘিমু তোমা তরে। ধু।।
বিধি মোরে বাদী হইল অকালেতে পিতা মৈল
সেরের সম্বল নাই ঘরে।।
অন্নেরে ১ পোড়ে সর্ব্ব গা শুন প্রিয়া ফুলরা
সকল দেখম শুন্যাকারে।
দুইজন শিশুমতি কেমনে হইনু স্থিতি
রক্ত মোর শোঘয়ে শরীরে।।
প্রভুর বচন শুনি ফুলরায়ে কহিল পুনি
চিন্তা মনে না ভাবিয় আর।
চিন্তা কঐলে বল টুটে বুদ্ধি না রহে ঘটে
দুঃখ সুখ আছে সভাকার।।
বিধাতা সৃজয়ে যাহে আউগে ২ আহার হয়ে
তবে তার সৃজয়ে শরীর।।
গর্ভে জন্মে শিশু সবে দেখিতে আছয়ে ভবে
স্তনে পূণিত হয়ে ক্ষীর।।
স্ত্রীর বচন শুনি হরঘিত বীরমণি
গন্ডী শর তুলি লইল করে।
চিন্তিতে চিন্তিতে মনে চলিল গহন বনে
মৃগপশু খেদায়ে বহুতরে।।
জনমে জনমে যেন দুর্গার চরণধন
বিস্মারণ না হউক আমার।।
দ্বিজ মাধবে বোলে দেবি-পদ-কমলে
করষোড়ে করি পরিহার।।
[Page 44]
ব্যাঘ্র মহিষ গন্ডা মারে এক শরে।
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পশু সব বাঁশে চাপি ধরে।।
শুকরের ঠাঁট বীর উফারিয়া মারে।
হরিণ যে কৃষনসার বাঁশে চাপি ধরে।।
চামরিয়া আদি করি জত পশু হয়ে।
কাল্কেতুর তরে ১ তার জীবন সংশয়।।
উত্তম অধম পশু বধিল সকল।
শুকনা কাননে যেন অনন্ত অনল।।
বনবাসী পশুগনে পাইয়া যন্ত্রনা।
একত্র হইয়া সবে করয়ে মন্ত্রনা ২।।
দয়ার নিদান ভাবে দেবী ভগবতী।
তাহান চরণ বিনে অন্য নাহি মতি।।
মন্ত্রণা করিয়া তবে যথ পশগণ।
কংসনদীর তটে গিয়া দিল দরশন।।
অপর্ণা অগ্রেত পশু গদ গদ ভাঘে।
সদয় হইয়া দুর্গা ঈষৎ যে হাসে।।
[Page 44]

6. রাগ করুণ ভাটিয়াল

দেবীর নিকট পশুগনের বিলাপ ও
দেবীর আশ্বাস দান
জয় গোপাল করুণাসিন্ধু।
এহলোকে পরলোকে তুম্মি দীন-বন্ধু।। ধু।
সিংহে কান্দিয়া কহে ভবানী চরণ।
বিনি অপরাধে কেতু বধয়ে জীবন।।
ব্যাঘ্রে কান্দিয়া কহে ভবানীর পায়ে।
প্রানে বধিয়া কেতু চর্ম্ম লইয়া চরণ।
চর্ম্মশৃঙ্গ নিমিত্তে বধয়ে জীবন।।
শশকে কান্দিয়া কহে আমরা হীনবল।
পুত্রপরিবারে কেতু বধিল সকল।।

7.

[Page 45]
গন্ডা গয়েয়ালে মিলি করয়ে রোদন।
খড়েগর কারণে কেতু বধয়ে জীবন।।
দেবী বোলে পশুগ্ণ শুনহ উত্তর।
সুখে বাস কর গিয়া অরণ্য ভিতর।।
কালকেতুর তরে তোরা না ভাবিয়া ভর।
মহাবীরের তরে আক্ষি দিতে যাই বর।।
[Page 45]

8. পয়ার কালকেতুর ভোজন ও বনযাত্রা

কালকেতু বোলে শুন পুষ্পকেতুর ঝি।
মৃগেরে যাইতে বনে ২ ঘরে আছে কি।।
ফুলরা রন্ধন করে বীরে খাইতে ভাত।
তরাত্রি আনিলেক মানকচুর পাত।।
পাত লইয়া ভোজনে বসিল বীরমণি।
অন্ন পরিবেশন করে ফুলরা ব্যাধিনী।।
বারে বারে ফুলরায়ে অন্ন দিয়া যায়ে।।
ফিরিয়া চাহিতে নারে খাইয়া ফেলায়ে।।
ক্রোধ করিয়া তবে ফুলরা রমণী।
পাতিলা ধরিয়া পাতে দিলেন পালনী।।
যে কিছু রুচিল বীরে করিল ভোজন।
ভাজা নারিকেল জলে কৈল আচমন।।
মহাবীরে বোলে শুন ফুলরা সুন্দরী।
এমত ভোজন প্রিয়া কভু নাহি করি।।
এমত ভোজন যদি নিত্য করাও মোরে।
বাম করে ধরিতে পারি মত্ত করিবরে।।
ফুলরায়ে বোলে কভু মিথ্যা১ কহ বাত।।
মৃগেরে না গেলে কেমনে খাইবা ভাত।।
ফুলরার বচনে বীর গহনেতে যায়ে।
পন্থে স্বর্ণ-গোধিকার দরশন পায়ে।।
[Page 47]

9. রাগ ভাটিয়াল কালকেতুর অন্নচিন্তা

এহার করণে খঞ্জন দেখিলু কমলে।
সব ব্যার্থ হইল মর পাপ কর্ম্ফলে।।
বিদার ২ হও পৃথিবী বীরেরে দেয় ঠাঞি।
খন্ডউক সকল দুঃখ রসাতলে যাই।।
এই ত কাননে পশু পাম চিরকাল।
আজিকে ৩ বধিতে পশু না পাইলু পাঞ্জার।।
কথাকারে পাইমু পশু যাইমু কথাকারে।
কি লইয়া দাঁড়াইমু গিয়া ফুলরার গোচরে।।
সারদার চরণে সরোজ-মধু-লোভে।
দ্বিজ মাধবে তথি অলি হইয়া শোভে।।
[Page 48]
ঘরেতে যাইমু কি না ধিন লইয়া।
কানুরে দেখিতে আইলু প্রাণী বান্ধা দিয়া।। ধু।।
বহু আশা করি আমি বানিজ্যে আসিনুঁ।
আছক লাভের কাজ মুলে হারাইলুঁ।।
উপায় না দেখম ভাই কি বুদ্ধি করিমু।
না পাইলে বানিজ্যের ভাও কিরুপে তরিমু।।
দ্বিজ মাধবে কহে বাণিজ্যের ভাও।
বাণিজ্য করিবা যদি সাধুসঙ্গ লও।।
[Page 51]

10. রাগ সুহি

ফুলরার মাংস বিক্রয়ের ক্লেশ
অতি মৃদু-গামিনী বাজারে চলিল ধনী
মাংসের প্স্রি লইয়া মাথে।
বেড়ল বায়সগ্ণ ধন করে নিবারণ
স্থাবর ১ পল্লব লইয়া হাতে।।
তরণীতে তেজোময় দেখিতে লাগয়ে ভয়
পন্থেতে তাপিত খর বালি।
বারাইতে নারে পাও ললাটেতে মারে যাও
কাঁদিয়া বিধিরে পারে গালি।।
ক্ষুদায় আকুল হইয়া ভ্রমে রামা মাংস লইয়া
কটিদেশে দিয়া বাম পাণি।
রুক্ষ কুতীল কেশ জুনা মলিন বেশ
লাগিয়াছে মাংসের ঝরনি।।
প্রথমেত গিয়া হাটে তুলিল আপনা বাটে
প্রথমেত বেচিলও মাংস বাসি।
জত ইতি বিপ্রবর্গ কিনিল গ্নডার খড়্গ
দ্বীপি-চর্ম কিনিল স্নন্যাসী।।
জ্ঞানপথে সুখ-ভগা আসিয়াছে যত যোগী
ফুলরারে কহিছে তৎকাল।
কপর্দ্দ ২ গনিয়া লও কৃষনষারের চর্ম্ম দেয়
কেহ বলে দেয় তার ছাল।।
দ্বিজ মাধাবানন্দ তরিতে সংসার ধন্দ
দেবীপদে মতি করি স্থির।।
ফুলরা ব্যাধের নারী মাংস বেচি নয়ে কড়ি
হেন কালে আইসে মহাবীর।।
[Page 54]

11. ফুল্লরার বারমাসী বারমাস্যা ফুলরার বারমাসী দুঃখ বর্ণনা

ফুলরায় বোলে রামা যদি দেয় মন।
বাহ্র মাসের যথ দুঃখ কর নিবেদন।।
বাহ্র মাসে যথ দুঃখ ফুলরা পাইল মনে।
ভাবিতে চিন্তিতে মোর পাঞ্জর বিন্ধে ঘুনে।।
মাধবেতে দুক্ষের কথা ১ শুনহ যুবতী।
যথ দুঃখে ব্যাধের ঘরে করিয়ে বসতি।।
প্রাতঃকালে প্রভু মোর যায়ে বনবাস।
যে দিনে না মিলে পশু ২ থাকি উপবাস।।
জ্যৈষ্ঠ মাসেতে রামা শুন মোর দুঃখ।
কহিতে সে সব কথা বিদারয়ে বুক।।
প্রচন্ড রবির তাপে দহে কলেবর।
ললাটের ঘর্ম্ম মোর পরে পদতল।।
বাক্য মোর শুনহ সুন্দরি।
কোন সুখভোগের লাগি হইলা ব্যাধের নারী।।
আষারে রবির রথ চলে মন্দগতি।
ক্ষুধায়ে আকুল হই লোটাই আক্ষি ক্ষিতি।।
ক্ষনে ক্ষনে উঠি আক্ষি চারিদিকে চাহি।
হেন সাধ করে মনে অন্য জাতি ৩ যাই।।
শ্রাবণ মাসেতে ঘন বরিখে ঝিমানি।
মাথা থুইতে ঠাই নাই ঘরে আঠু পানি।।
শীতের কারণে ঘরে বেড়াই চারি কোণে।
মানের পাত মুন্ডে দিয়া বঞ্চি দুই জনে।।
ভাদ্র মাসেত রামা বিদ্যুৎ ঝঙ্কার।
হেনকালে চলি আমি মাথায়ে পসার।।
নয়ানেত পাণি দিয়া নদী হই পার।
বিষাদ ভাবিয়া স্মরি সূর্য্যের কুমার।।
আশ্বিন মাসেত রামা জগত সুখময়।
দুর্গার আনন্দ হেতু নাহি চিন্তা ভয়।।
[Page 55]
বীণ বাঁশী বাহে কেহ লোকে গায়ে গীত।
অন্নের কারণে প্রভু সদায়ে কুঞ্চিত।।
গিরিসুতা-সুত মাসে শুন মোর দুঃখ।
পাড়া-পড়শী নাহি বোলাইতে স্মমুখ।।
উঠিয়া দাঁড়াইতে নারি গায়ে নাই বল।
ক্ষুধায়ে আকুল হই খাই বনফল।।
আঘ্রন মাসেত কৈন্যা শীত পড়ে বেশ।
ভাবিতে চিন্তিতে মোর তনু হইল শেষ।।
মৃগচর্ম্ম ওড়ন মৃগচর্ম্ম পরিধান।
শীতে কাম্পিয়া রাত্র বঞ্চি দুই জন।।
পৌষ মাসেতে রামা হেমন্ত প্রবল।
শীত ভয়ে সদায়ে মোর কম্পিত কলেবর।।
অধর যে অঙ্গ মোর কম্পিত সধন।
অরন্যের কাষ্ঠ আনি পোসাই হুতাশন।।
মাঘ মাসেত কৈন্যা গোরুয়া লাগে শীত।
লোমে লোমে বিন্ধে মোর শোঘয়ে শোণিত।।
খইয়া পাতিয়া থাকি বিভাবরী কালে।
রজনীর শিত মোর খন্ডে রবির জালে।।
ফাল্গুন মাসেত সাজি আইল ঋতুবতী।
নিজ পরিবার লইয়া সখার সঙ্গতি।।
কামিনি করয়ে কেলি সখা লইয়া পাশে।
হেন কালে ১ জায়ে স্বামী বন ২-পরবাসে।।
মধু মাসেত কৈন্যা শুন মোর কথা।
রবির উত্তাপে মোর ঠেকি রহে মাথা।।
মোর ক্লেশ দেখি দুঃখিত বীরমণি।
অন্তরে নাহিক সুখ না চাহে কামিনী।।
দ্বিজ মাধাবানন্দে এই রস ভনে।
ঈষৎ হাসয়ে দুর্গা ফুলরার বচনে।।
[Page 69]

12. >ভাঁড়ু দত্ত রাগ কর্ণাট ১

কালকেতুর রাজ্যে প্রজাগনের সুখ
দেখরে গোরা-চান্দের বাজার।
প্রেমময় রসের ২ পসার।। ধু।
নগরেতে প্রজালোক বৈসে সারি সারি।
নেতের পতাকা উড়ে বীরের উহারি ৩।।
রাজ-বিঘ্ন নাই তাতে নাই দস্যুভীত।
দুর্গাই প্রসাদে লোকে থাকে হরম্বিত।।
রাজদ্বারে বাদ্য যথ বাজে সন্ধ্যাকালে।
আনিয়া পোতলা ভাল নাচায়ে ছাওয়ালে ৪ ।।
দুঃখী দরিদ্র তাতে এক নাহি জানি।
কনক কলসী ভরি প্রোজা খায়ে পানি।।
নগরে বৈসয়ে প্রজা হইয়া হরম্বিত
ঘরে ভাত নাই ভাঁড়ুর দৈবের লিখিত।।
[Page 69]

13. >ভাঁড়ু দত্ত কত্তৃক অশান্তির সুচনা

ভাঁড়ু দত্তে বোলে শুন দত্তের মা।
ক্ষুধার কারণে মোর পোড়ে সর্ব গা।
কালুকার অন্ন যদি এক মুষ্ঠি পাম ৫।
বেলান্তে নিশ্চিত হইয়া দেয়ানেতে যাম।।
যেন মাত্র ভাঁড়ু দত্তে কোইল হেন বাণী।
ক্রোধ করিয়া তারে কহিছে রমণী।।
যেমত কথা কহ তুক্ষি লোকে বোলে আউল।
কালু কৈলা উপবাস আজু কথা চাউল।।
তমার ঘরে বসতি করিয়া যেমন দুঃখে।
উদর না চিনে অন্ন তাম্বুল পান মুখে ৮।।
[Page 70]
স্ত্রীর বচনে ভাঁড়ু ভাবে মনে মন।
আজুকার অন্ন আমার মিলিব কেমন।।
ভাঙ্গা কড়ি ছয় বুড়ি গামছা বান্ধিয়া।
ছাওয়ালের মাথাই বোঝা দিলেক তুলিয়া।।
কড়ি বুড়ি নাই ভুঁড়ি বাক্যমাত্র সার।
ত্বরায় পাইল গিয়া নগর বাজার।।
[Page 71]

14. মিথ্যার বেসাতি

ধনা নামে চালুয়া ১ পসার দিয়া আছে।
ধীরে ধীরে ভাঁড়ু দত্ত গেল তার কাছে।।
ভাঁড়ু দত্তে বোলে ধনা চাউল দেয় মোরে।
তঙ্কা ভাঙ্গাইয়া কড়ি দিয়া যাইমু তোরে।।
ধনাঞি বোলে ভাঁড়ু দত্ত চাউল নাই এথা।
বারে বারে খাও চাউল কহি মিথ্যা কথা।।
তঙ্কা ভাঙ্গাইয়া আগে মজুতে আন কড়ি।
রুজু ২ দিয়া পাঠাইমু চাউল পাইবা ৩ বাড়ী।।
ভাঁড়ু দত্তে বলে ধনা কহিয়া তোমারে।
ধন্নের গর্ব্বে ৪ এথ কথা কহসি আমারে।।
ঘরের ভিতরে ধন আছে ৫ গোফা গোফা।
গিরির মাথায় চুল নাঞি নাবার ৭ মাথায় যে খোপা ৮।।
ভাল মোর অধিকার আছয়ে নগরে।
কালুকা পাইমু তোরে হিস্তের উপরে।।
ভাঁড়ুর বচনে ধনা কাঁপে থর থর।
আস্তে ব্যেস্তে উঠিয়া চাপিয়া ধরে কর।।
পরিহাস কৈলাম তাই করি দরাদরি।
চাউল নিয়া খাও তুক্ষি কড়ি দিয়া বাড়ি।।
এথেক শুনিয়া ভাঁড়ু বসিল চাপিয়া।
সের অষ্ট দশ চাউল নইল মাপিয়া।।
[Page 72]
চাউল লইয়া তবে ভাঁড়ুর গমন।
পুরার ১ পসারে গিয়া দিল দরশন।।
ভাঁড়ু দত্তে বোলে পুরা ২ কহি নিজ কাজ।
বাছিয়া বাছিয়া মোরে দেয়ত আনাজ।
নিত্য নিত্য যোগাও আনাজ দেয়ত আমারে।
তঙ্কা ভাঙ্গাইয়া কড়ি দিয়া যাইমু তোরে।।
সাত পাঁআচ বুলি তারে বোলে ভাই ভাই।
শাক ৪ বাইগন মুলা লইল তার ঠাঞি।।
আনাজ লইয়া হইল ভাঁড়ুর গমন।
লোনের পসারে গিয়া দিল দরশন।।
মলুকি মলুকি ৫ বলি গেল তার কাছে।
কালুকার মুজ ৬ বাকি তোক্ষা স্থানে আছে।।
বিশ্বাস বোলাই ধীরে আনায়ে গোচর।
কথেক মজুত কড়ি বোলয়ে সত্বর।।
"মলুকিরা আড়াঙ্গ করিলা স্থানে স্থানে।
তে কারণে তোমার লোন কেহ নাহি কিনে।।"
তোর ভাগ্যে সেইখানে আছিলাম আপনি ৭।
প্রকারে বুঝাইয়া শান্ত কৈলাম বীরমণি।।
মলুকি বোলে ভাঁড়ু দত্ত কৈলা উপকার।
কিছু লোন লই যাহ আপনে খাইবার।।
লবণ লইয়া হইল ভাঁড়ুর গমন।
তৈলের পসারে গিয়া দিল দরশন।।
ভাঁড়ু দত্ত বোলে পসারী গুয়া দেয় মোরে।
তঙ্কা ভাঙ্গিইয়া কড়ি দিয়া ্যাইমু তোরে।।
পসারী বোলে ভাঁড়ু দত্ত গুয়া নাঞি এথা।
বারে বারে খাও গুয়া কহি মিথ্যা কথা।।
তঙ্কা ভাঙ্গাইয়া মজুতে আন কড়ি।
রুজু দিয়া পাঠাইব গুয়া পাইবা বাড়ী।।
ভাঁড়ু বোলে তোর বাক্যে লাগিল ৩ তরাস।
গুয়ার কড়ি হোতে ফাদ্দা পাইমু একমাস ৪।।
সেই খানে বসি ছিল গোবিন্দ পালিত ৫।
কি কইলা কিন কইলা ভাঁড়ু বাক্য বিচলিত।।
ভাঁড়ু দত্তে বোলে প্রজা বার্ত্তা নাহি পাও।
সুখে অন্ন জল খাও সুখে ৬ নিদ্রা যাও।।
মহাবীর স্থানে লেখিছে দন্দধর।
ত্বরায়ে পাঠাইয়া দেয় গুজরাটের ধন।।
হেঙ্কালে বসিছিলাম বীরের একুধারে।
যথেক ফান্দার ৭ ভার দিলেক আমারে।।
যথ কথা কহে বীর আক্ষা করি বড়া।
গাড়ু কম্বল দিল পাটের পাছোড়া।।
[Page 73]
কালুকা প্রভাতে পাইক পাঠাইমু থরে থরে।
তুলিয়া ১ দিবেক টান গাছহের উপরে।।
ভরতের শাপে লোক হইয়া গেল মুড়া ৩ ।
সাক্ষাতে থাকি ৪ পুত্র বাপ আটফুরা।।
ভাঁড়ুর বচনে প্রজা অন্তরে কাঁপিল।
করে ধরি ভাঁড়ু দত্তে কহিতে লাগিল।।
পরিহাস্য কৈল বাপু কৈল দরাদরি।
গুয়া নিয়া খাও তুক্ষি নাহি দিয় কড়ি।।
গুয়া লইয়া হইল ভাঁড়ুর গমন। ৫
মধ্যনগর ভাঁড়ু প্রজা করে বল।
চিড়া মিঠা নৈন ভাঁড়ু সন্দেশ বহুল।।
বেসাতি করয়ে ভাঁড়ু কাররে না দে কড়ি।
পসার দিয়া বসিয়াছে ঘোষের মাও বুড়ী।।
তের বুড়ীর দধি ভাঁড়ু হস্তে করি লইল।
সেই দধি লই ভাঁড়ু সত্বরে চলিল।।
ভাঁড়ু দত্তে বোলে শুন ঘোষের মাও বুড়ী।
দধি খাইবার যাই বাড়ীতে লইয় কড়ি।।
পরিচারক নাই বাপু দোহাইতে গাঞি।
স্বকীয় দ্রব্য নহে তোর ধারে দিয়া যাই।।
কথার ছেছর তুক্ষি দধি খাইতে চাহ।
আপনার মাথাটি খাও দধি এড়ি যাও।।
ভাঁড়ু দত্তে বোলে বুড়ী কি বলিব তোরে।
ধনের গর্ব্বে এথ কথা বোলহ আম্মারে।।
তর পুত্র শ্যাম ঘোষ তে কারণে সহি।
অন্য জন হইলে এহার কথা কহি।।
চোরা গাই কিনিয়া বুড়া তোমার বসত।
এহার বাদী হইয়াছে গ্রামের রায়ত।।
[Page 74]
ভাঁড়ুর বচনে বুড়ার অন্তর কড়ি।।
দধি লইয়া হইল ভাঁড়ুর গমন।
মাছের পসারে গিয়া দিল দরশন।।
[Page 155]

15. পয়ার

সপত্নী-মিলন ও লহনার রন্ধন
তুম্মি ঘরে যাও দিদি আম্মি যাইব না।
সতিনীর ঘরে গেলে আম্মি জীব না।।
সাধ নাই আর মোর ঐ গৃহকাজে।
তুম্মি কেন আইলা ভইন অটবীর মাঝে।।
দুবলায়ে বোলে রামা নিজ গৃহে চল।
জ্যেষ্ঠ বগিনীর হাত কত বার ঠেল।
দুব্লার বাক্যে রামা করিল গমন।
আপনার পুরা গিয়া দিল দরশন।।
যেন মাত্র বাড়ীতে গেল দুইত সতায়ে।
বাড়ী বারী নিয়া দুবা ছাগ্ল গছায়ে।।
দুবলায়ে করি দিল যথ আসাদন।
হরষিতে লহনায়ে করয়ে রন্ধন।।
[Page 156]
পাবক জালয়ে রামা মনের হরিষে।
শাক রন্ধন করি ওলাইল বিশেষে।।
যুগ ব্যঞ্জন রাঁধে ঘৃতেত আগল।
জাতি কলা দিয়া রান্ধে ঝুনা নারিকেল।।
নিরামিষ ব্যঞ্জন রান্ধি থুইল একুভিতে।
আমিষ রান্ধিতে লহনা দিল চিতে।।
মনের হরিষে রান্ধে রোহিতের মাছ।
দুরিতা মিশালে রান্ধে উরিচা আনাজ।।
জলপাই অম্বল রান্ধে হরষিত হইয়া।
সন্তারি ওলাইল তাহে সউর্ঘ ১ পোড়া দিয়া।
বড় বড় শুরুল ২ মৎস ভাজয়ে বিশেষে।
সুগন্ধি তন্ডুল অন্ন রান্ধে অবশেষে।।
স্বর্ণ ৩ থালা পিড়ি আনি যোগায়ে দুবা দাসী।
ভোজন করিতে বৈসে দুইত রুপসী।।
[Page 157]

16. রাগ শ্রী

রোহিতের মুরা খাও রান্ধিছোঁ যতনে।
বড় দুঃখ পাইছ ভইন ভ্রমিয়া কাননা।।
নানা মতে মতে রান্ধিয়াছোঁ দিয়া বস্তু যত।
সন্তারি ওলাইতে ভইন পূড়িয়াছে হাত।।
খুলনায় বোলে দিদি মুড়া খাও তুম্মি।
তবে এক লক্ষ ধ্ন পাই ৪ আজু আম্মি।।
মুড়া লইয়া পেলাপেলি কেহ নাহি খায়ে।
উভার উপরে ৫ থাকি বিড়াল আড়চোখে ৬ চাহে।।
ধীরে ধীরে আড়ে আড়ে গেল পাতের কাছে।
মুড়া লইয়া বিড়াল গেল বাড়ী পিছে।।
[Page 157]

17. খুলনার দেবী-পূজা

সরসে ভোজন দুহে করে মনসুখে।
আচমনে শুচি হই তাম্বুল দিল মুখে।।
নিত্য সুখ উপভোগ খুলনা সুন্দরী।
বিশেষ অনঙ্গশর হইল তান বৈরী।।
বসন্তের বাত রামা শিতে না পারে।
কুঙ্কুম ২ চন্দন রামা দেহি ত ৩ শরীরে।।
দুবলা দাকিয়া আনি কহিছে কামিনী।
দ্বিজ মাধবে গায়ে ভাবিয়া ভবানী।।
ছাবালের মাথায়।।
[Page 163]

18. ধনপতির ভোজন

আনিয়াত দুবা চেড়ি যোগাইল থালা পিড়ি
খোরায়ে করিয়া সম্বিধান। ৩
করিয়াত পরিপাটি ঘৃতের ভরিয়া বাটি
সাজাইয়া দিল বিদ্যমান।।
[Page 164]
অতি সুবাসিত বারি ভরিয়া হেম ঝারি
থুইয়া গেল অভ্যন্তরে।
চ্রণ পাখালি হইয়া কুতুহলী
ভোজনেতে বৈসে সদাগরে।।
অন্নব্যঞ্জন অমৃত সমান
খুলনায়ে দেহি বারে বার।
ভাবিয়া সারদা মায়ে দ্বিজ মাধব গায়ে
করযোরে করি পরিহার।।
বন্ধু কানাই পরাণধন মোর।
গে যুগে চরণখানি তোর।।
জাতি দিলুঁ যৌবন দিলুঁ আর দিমু কি।
আর আছে শুধা প্রাণ তারে বোল দি।।
আজি মোর আয়ত ১ যাপন।
কি করিব অনঙ্গ অবিসর ২ পঞ্চবাণ।
হরিষে ভোজন সাধু কৈল মনসুখে।
আচমনে শুচি হইয়া তাম্বুল দিল মুখে।।
কর্পুর তাম্বুল সাধু বদনেতে পুরে।
শয্যা রচ্যে সেবক শয়নমন্দিরে।।
বিচিত্র নেহালি পাতে খাতের উপর।
তথির উপরে পুষ্প পাতিল বিস্তর।।
নেতের মশারি তানায়ে চান্দোয়া শোভে তাহে।
পবণ প্রবেশ করে ঘর্ম্ম নাহি গায়ে।।
শিয়রেত গাড়ু নিয়া থুইল সত্বর।
নানান প্রকারে শয্যা রচে মনোহর।।
বাটা ভরিয়া থুইল কর্পুর তাম্বুল।
ভৃঙ্গার ভরিয়া থুইল সুবাসিত জল।।
[Page 165]
চরণ পাদুকা দিয়া সাধুর নন্দন।
শয্যার উপরে গিয়া করিল শয়ন।।
দুবলাকে ডাকি তখন কহে ধনপতি।
ত্বরায়ে আনিয়া দেয় খুলনা যুবতী।।
এথ শুনি দুব্লায়ে করিল গমন।
খুলনার বিদ্যমানে দিলা দরশন।।
হেন কালে দুবলায়ে কহে খুলনারে।
ত্বরিতে চলিয়া যাহ সাধুর গোচরে।।
[Page 173]

19. বারমাসিয়া খুলনার বারমাসী

খুলনায় বলে প্রভু যদি দেয় মন।
বার মাসের যথ দুকঃ কর নিবেদন।।
মাধবীতে জন্ম মোর দুখেঃর অঙ্কুর।
সতিনীর হাতে লাঘব করাইল প্রচুর।।
কাড়িয়া লইল সতা অঙ্গের আভরণ।
পরিবারে দিল মোর ভগ্ন বসন।।
জ্যৈষ্ঠ মাসেত প্রভু শুন মোর দুখঃ।
কহিতে সে সব কথা বিদরয়ে বুক।।
প্রচন্ড রবির তাপে দহে কলেবর।
ললাটের ধর্ম্ম মোর পড়ে পদতল।।
আমার বাক্য তবে শুন সদাগর।
তোমার রমণী হৈয়া রাখিছি ছাগল।।
আষাঢ়ে রবির রথ চলে মন্দগতি।
ক্ষুধারে আকুল হৈয়া লোটাই আমি ক্ষিতি।।
[Page 174]
ক্কেণে উঠি ক্ষেণে বসি চতুর্দ্দিক চাহি।
হেণ সাধ করে মনে অন্য জাতি ১ যাই।।
শ্রাবণ মাসেত প্রভু বরিখে ঝিমানি।
ক্ষেণে ক্ষেণে প্রকাশিত হয়ে সৌদামিনি।।
ছিন্ন ভিন্ন হইয়া ছেলি ধায়ে চারি ভিত।
খেদাইতে আছাড় খাই পড়ি মুর্চ্ছিত ৩।।
ভাদ্র মাসেত প্রভু বিদ্যুৎ ঝঙ্কার।
হেনকালে ছেলি লইয়া কানন মাঝারে।।
ছেলি লইয়া কাননেত বঞ্চি আম্মি একা।
গহন ভ্রমিতে অঙ্গ খাইল ৪ জলৌকা।।
আশ্বিন মাসেত প্রভু জগৎ সুখময়ে।।
দুর্গার আনন্দহেতু নাহি চিন্তাভয়ে।।
বীণা বাঁশী বাহে কেহো লোকে গায়ে গীত।
দারুণ সতার ভয়ে সদায়ে কুঞ্চিত।।
গিরি-সুতা-সুত মাসে শুন মোর দুঃখ।
শাশুড়ী ননন্দী থাকে বোলাম সম্মুখ।।
উঠিয়া দান্ডাইতে মোর গায়ে নাহি বল।
ক্ষুধায় আকুল হইয়া খাই বনফল।।
আঘ্রাণ মাসেত প্রভু শীত পরে বেশ।
ভাবিতে চিন্তিতে মোর তনু হইল শেষ।।
ক্ষৌম বাস পরি শুই ঢেঁকিশালঘরে।
রজনীর শীত মোর খন্ডে রবির জালে।।
পৌষ মাসেত প্রভু হেমন্ত ৬ প্রবল।
শীত ভয়ে দহে তনু কম্পিত অধর।।
দোসর অম্বর চাহিলু শীতের কারণ।
ক্রোধ হইয়া সতিনীয়ে মারিল তখন।।
[Page 175]
মাঘ মাসেত প্রভু গরুয়া লাগে শীত।
লোমে লোমে ভেদি মোর শোঘয়ে শোণিত ১।
ওষ্ঠ অধর অঙ্গ কম্পিত সধন।
হেন সাধ করে মনে পোষাই হতাশন।।
ফাল্গুন মাসেত সাজি আইন ঋতুবতী।
নিজ পরিবার লইয়া স্খার সঙ্গতি।।
ভ্রমর ঝঙ্কারে রস কোকিলা নাদে।
নিরবধি মারে সতা বিনি অপরাধে।।
মধু মাসেত প্রভু শুন তত্ত্ববাণী।
কাননের মধ্যে মোর সহায় ভবানী।।
সতিনী আনিল মোরে করিয়া আদর।
সর্ব্ব দুঃখ খন্ডিলেক আইলা সদাগর।।
খুলনায়ে দুঃখ কহে সদাগরের স্থানে।
দুয়ারে বসিয়া সব লহনায়ে শুনে।।
সারদার চরণে সরোজ-মধু-লোভে।
দ্বিজ মাধবানন্দে অলি হইয়া শোভে।।
[Page 205]

20. দেবীর চেষ্টায় মকরায় ঝড়বৃষ্টি

তাহার মেলানে বাহে শতমুখির জল।
মকরায় উত্তরিল সপ্ত মধুকর।।
যেন মাত্র মকরাতে গেল ধনপতি।
কৈলাশে থকিয়া তাহা জানিল পার্ব্বতী।।
ওষ্ঠ-অধর কাঁপে দেবী দশ দিকে চাহে।
পবন পাঠাইয়া দেবী ইন্দ্রক আনায়ে।।
দাবীর প্রণামে ইন্দ্রে লোটাইয়া দে।
দেবী বোলে সর্ব্ব মেঘ চাপাইয়া মরে দে।।
আপনার ধন্য মানে পাইয়া আরতি।
চৌষট্টি মেঘ তাআনে দিলে সঙ্গতি।।
শেই মেঘ লইয়া হইল দুর্জ্ঞার গমন।
মোকরাতে গিয়া দাবী দিলা দরশন।।
মেঘেরে ডাকিয়া বোলে জগতের মা।
মোকরাতে গিয়া তোরা কর ঝড় ১ বা।।
যেন মাত্র আজ্ঞা করিল বেদমাতা।
মেধে পরিচয় দেহি নোঁইয়াইয়া মাথা।।
আবর্ত্ত সাজন করে শুনিয়া বচন।
বাছের বাছ ঘোল মেঘ তাহার ঘিরন ২।।
দ্রোণ মেঘ সাজি চলে দেবী-অঙ্গীকারে।
বিংশতি মেঘ তার পাছু আগ পুরে।।
পুষ্কর সাজিয়া চলে লকে পায়ে ত্রাস।
আঠার মেঘ তার ঘরে চারি পাশ।।
দুর্গার আজ্ঞায়ে যায়ে করিয়া গর্জন।
দক্ষি্ণ কোণেতে কৈল আপনা পত্তন।।
দাখিতে দেখিতে হপিল প্রচন্ড বাতাস।
জ্বলধরে আচ্ছাদিন রবির প্রকাশ।।
লহরী লহরী বহে বরিখে ঝিমালি।
অষ্ট করবরে মেঘেরে যোগারে পানি।।
[Page 206]
শিলাবৃষ্টি করে মেধে থাকিয়া আকাশে।
সাদ্গুর রৈধ্র উড়ায়ে প্রচণ্ড বাতাসে।।
আকে ত মোকরার জল আর হইল মেহু।
সমুদ্র উচ্ছল ১ হয়ে প্রচন্ড বহে ঢেউ।।
কান্ডারে ইঙ্গিত করে মধুকরে।
সপ্ত-ডিঙ্গা বান্ধিলেক লোহার জঞ্জিরে ২ ।।
তা দেখিয়া নারায়নী রক্ত লোচনে।
পবনের পুত্র দেবী ডাকাইয়া আনে।।
দেবীর বচনে ক্রওধ হইল হনুমান।
লোহার শিকল ধরি দিল এক টান।।
[Page 236]

21. দেবীর ছলনার ঝড়বৃষ্টি

মেঘের ডাকিয়া বোলে জগতের মা।
মোকরা রহিয়া তোরা কর ঝড়-বা।।
যেন মাত্র আজ্ঞা করিল বেদ্মাতা।
মেঘে পরিচয় দেহি লোটাইয়া মাথা।।
আবর্ত্ত সাজন করে হইয়া ক্রোধমন।
বলবন্ত দশ মেঘ তাহার যোগান।।
সস্বর্ত্ত সাজন করে শুনিয়া বচন।
বাছের বাছ ঘোল মেঘ তাহার ধিরন।।
পুষ্কর সাজিয়া চলে লোকে পায়ে ত্রাস।
আঠার মেঘে তার ঘেরে চারি পাশ।
[Page 237]
দ্রোণ সাজিয়া চলে দেবী অঙ্গীকারে।
বিংশতি মেঘ তার পাছু আগ পুরে।।
দুর্গার আজ্ঞায়ে জায়ে করিয়া গর্জন।
দক্ষিণ কোণেতে গিয়া করিল পত্তন।।
লহরি লহরি বহে বরিখে ঝিমানি।
অষ্ট করিবরে মেঘেরে যোগায়ে পানি।।
হুড়াহুড়ি করে মেঘ পড়ে ঝনা ঝনা।
হরিয়া মেঘে ডাকি বোলে কররে সাজনা।।
দেখিতে দেখিতে হঐল প্রচন্ড বাতাস।
জলধরে আচ্ছাদিল রবির প্রকাশ।।
একেত মোক্রার জল আর হীল মেহু।
সমুদ্র উচ্ছল হয়ে প্রচন্ড বহে ঢেউ।।
শিলাবৃষ্টি করে মেহু থাকিয়া আকাশে।
রৈ-ঘর উড়াইল সাধুর প্রচন্ড বাতাসে।।
This is a selection from the original text

Keywords

অন্ন, ক্ষুধা, চাউল, দধি, বাজার, বৃষ্টি, ভাত, মাংস, রন্ধন, শিলাবৃষ্টি

Source text

Title: Mangalchandir Geet

Author: Dwija Madhab

Editor(s): Sudhibhusan Acharya

Publisher: Calcutta University

Publication date: 1952

Original compiled c.1579-1600

Edition: 1st Edition

Place of publication: Calcutta

Provenance/location: This text was transcribed from print at the National Library of India. Original compiled c.1579-1600

Digital edition

Original author(s): Dwija Madhav

Original editor(s): Sudhibhusan Acharya

Language: Bengali

Selection used:

  • 1 ) pages 1 to 2
  • 2 ) pages 39 to 40
  • 3 ) pages 43 to 45
  • 4 ) pages 47 to 48
  • 5 ) page 51
  • 6 ) pages 54 to 55
  • 7 ) pages 69 to 74
  • 8 ) pages 155 to 157
  • 9 ) pages 163
  • 10 ) page 165
  • 11 ) pages 173 to 174
  • 12 ) pages 205 to 206
  • 13 ) pages 236 to 237

Responsibility:

Texts collected by: Ayesha Mukherjee, Amlan Das Gupta, Azarmi Dukht Safavi

Texts transcribed by: Muhammad Irshad Alam, Bonisha Bhattacharya, Arshdeep Singh Brar, Muhammad Ehteshamuddin, Kahkashan Khalil, Sarbajit Mitra

Texts encoded by: Bonisha Bhattacharya, Shreya Bose, Lucy Corley, Kinshuk Das, Bedbyas Datta, Arshdeep Singh Brar, Sarbajit Mitra, Josh Monk, Reesoom Pal

Encoding checking by: Hannah Petrie, Gary Stringer, Charlotte Tupman

Genre: India > poetry

For more information about the project, contact Dr Ayesha Mukherjee at the University of Exeter.

Acknowledgements