Phullara-r Baromasha
1. ফুল্লরার বারমাস্যা
1.1. প্রথম পর্ব
কালকেতূ মহাবীর শিকার করে ভাল
স্বর্ণগোধি’র রূপ ধরে চণ্ডীমাতা এল।১
সুন্দরীর বেশ ধরে দিল দরশন
ফুল্লরা দ্যাখে তাকে বিষণ্ণ বদন।২
মনে মনে হাসেন মাতা ভাবেন বচন
দুঃখ দেখে এলাম তোকে দিতে দরশন।৩
সতীন ভেবে ফুল্লরা যে বিষণ্ণ হইল।
বারমাসের দুঃখের কথা বলিতে লাগিল।৪
বৈশাখে বসন্ত ঋতু খরতর খরা
তরুতল নাহি মোরে করিতে পসরা ।৫
পা পোড়ে খরতর রবির কিরণ
শিরে দিলে নাই আঁটে খুঞার বসন ।৬
বৈশাখে হইল মোর গোটা গায়ে বিষ
মাঁস না বিকায় সবে করে নিরামিষ ।৭
পাপিষ্ঠ জইষ্ঠ মাস প্রচণ্ড তপন
খণ্ড খণ্ড হইল মোরে খুঞার বসন ।৮
পসরা এড়িয়া জল খাইতে না পারি
দেখিতে দেখিতে চিলে লয় এক সারি ।৯
পাপিষ্ঠ জইষ্ঠ মাস গরম বাতাস
বেঙচের ফল খাইয়া করি উপবাস ।১০
আষাঢ়ে পুরল আসি নব মেঘ জল
ভাল গেরস্তের নাঞি জোড়এ সম্বল ।১১
মাঁসের পসরা লৈয়া ভ্রমি ঘরে ঘরে
কিছু খুদ কুড়া মিলে উদর নাহি পুরে ।১২
বড় অভাগী আমি মনে মনে গুনি
কত শত খায় জোঁকে নাঞি খায় ফণী ।১৩
শ্রাবণে বরিখে ঘন দিবস রজনী
সিতাসিত দুই পক্ষ একোই না জানি ।১৪
ভুবন তরিল আসি নব মেঘের জলে
হেন কালে মৃগ মারে পাপ কর্ম ফলে ।১৫
দুখ করি অবধান ওগো ভগবান
বীরের ঘরে ঝড় নাই কুঁড়েয় এল বান ।১৬
ভাদ্রপদ মাসে রামা দুরন্ত বাদল
নদনদী একাকার আট দিকে জল ।১৭
মাংসের পসরা লইয়া ফিরি ঘরে ঘরে
অনলে পোড়এ অঙ্গ ভিতরে বাহিরে ।১৮
কত দিবে নিব দুঃখ পাই নাই সুখ
বিপক্ষী হইল স্বামী বিধাতা বিমুখ ।১৯
আশ্বিনে অম্বিকা-পুজা প্রতি ঘরে ঘরে
ছাগ মোষ মানত হয় দিয়া উপাচারে ।২০
উত্তমবসন বেশ করয়ে বনিতা
অভাগি ফুল্লরা করে সম্বলের চিন্তা ।২১
ওই মাস সবাকার বড়ই আদরে
দেবীর প্রসাদ মাংস প্রতি ঘরে ঘরে ।২২
[Page]
1.2. দ্বিতীয় পর্ব
অকালে অম্বিকা পূজা ভবনদীর কূলে
খুল্লনা চরাত ছাগল ওরুনা জঙ্গলে।২৩
সেই থেকে ঘরে ঘরে পূজা আরম্ভিল
ফুল্লরার বারমাস্যা বলিতে লাগিল।।২৪
কার্তিক মাসেতে হৈল হিমের জনম
জগ-জনে কৈল বসন শীত নিবারণ ।২৫
নিযুক্ত করিল বিধি সবার কাপড়
অভাগী ফুল্লরা পরে হরিণের ছড় ।২৬
দুঃখ কর অবধান ওগো ভগবান
জানু ভানু কৃশানু শীতের পরিত্রাণ ।২৭
অগ্রহায়ণ মাস ঠাকুর নিজেই ভগবান
হাটে মাঠে গৃহে গোঠে সবাকার ধান ।২৮
উদর পুরিয়া অন্ন দৈবে দিল যদি
যম সম শীত তথি নিরমিল বিধি ।২৯
অভাগী ফুল্লরা আমি মনে মনে গুনি
পুরানো দোপাট্টা গায় দিতে করে টানাটানি ।৩০
পোষেতে প্রবল শীত সুখ জগজন
তুলি পাড়ি পাছুড়ি শীতের নিবারণ ।৩১
হরিণ বদলে পাইল পুরাণ খোসলা
উড়িতে সকল অঙ্গে বরিসএ ধূলা ।৩২
বিধাতা দিয়েছে বৃথা বনিতা জনম
ধুলি ভয়ে নাঞি মেলি শয়নে নয়ন ।৩৩
নিদারুণ মাঘ মাসে সদায় কুজ্ঝটি
আঁধারে লুকায় মৃগ না পায় আক্ষটি ।৩৪
ফুল্লরার আছে যে কত কর্মের বিপাক
মাঘ মাসে কিনি আমি তুলিতে নাঞি শাক ।৩৫
নিদারুণ মাঘ মাস করিল প্রকাশ
সর্বজন নিরামিষ করে উপবাস ।৩৬
ফাল্গুনে দুগুনে শীত খরতরা খরা
খুদ সেরে বান্ধা দিল মাটিয়া পাথরা ।৩৭
ফুল্লরার আছে যে কত কর্মের ফল
মাটিয়া পাথরা বিনে নাহি অন্য স্থল ।৩৮
দুঃখে কর অবধান ওগো ভগবান
আমানি খাবার গর্ত দেখ বিদ্যমান ।৩৯
মধুমাসেতে মলয়, মারুত মন্দ মন্দ
মালতিয়ে মধু পান করে মকরন্দ ।৪০
বনিতা পুরুষ অঙ্গ উদর দহন
পার্বতী ফুল্লরাকে দিল দরশন।৪১
আজি হৈতে আমার ধনে আছে তোমার অংশ
শ্রীকবিকঙ্কন গান গীত ভৃগুবংশ ।৪২