ধন্য ধন্য সপ্তদ্বীপ মধ্যে জম্বুদ্বীপ ।
ধন্য ধন্য গৌড় দেশ উৎকল সমীপ ।।
একচাকা খলকপুর পদ্মাবতী কক্ষে ।
জন্মিলা অনন্ত মাঘ মাসে শুক্ল পক্ষে ।।
জাতকর্ম করিয়া ঠাকুরে নাম থুইল ।
বালক্রীড়া করি কত আত্ম প্রকাশিল ।।
উন্মাদ বৈরাগ্য মহা ঔদ্ধত্য দেখিয়া ।
শাস্ত্র শালে পড়াইল যজ্ঞসুত্র দিয়া ।।
মাতা পিতা ভ্রাতা কত দেখিল প্রকাশ ।
অষ্টাদশ বৎসরে ছাড়িল গৃহবাস ।।
প্রয়াগেতে যতিরাজ ঈশ্বরপুরী ।
সন্ন্যাস করিল তথা গুরু লক্ষ্য করি ।
অবধূত প্রেমে নিত্যানন্দ নাম ধরি ।।
কাশীপুরে রহিলা সকল তীর্থ করি ।
বঙ্গে বামনবলা গ্রাম লভ্যবতী ঠাকুরাণী ।
তার গর্ভে জন্মিল অদ্বৈত শিরোমণি ।।
কমলাক্ষ নাম সুতিকাগৃহ বাসে ।
সুপ্রকাশে অদ্বৈত পদবী হবে শেষে ।।
শচীগর্ভে অষ্টকন্যা যথাকালে হৈল
দৈব নিবন্ধে দিন কথোকাল গেল ।।
জগন্নাথ মিশ্র হইল মিশ্র পুরন্দ্র ।
সৎকবি পন্ডিত মহা তার্কিক সুন্দর ।।
উগ্রতপ দেখি সর্বলোক চমৎকার ।
স্নান সন্ধ্যা নিত্য শ্রাদ্ধ দেব আচার ।।
বলি হোম জপ সন্ধ্যা পূজা ধূপ দীপে ।
শ্রীভাগবত পাঠ গোবিন্দ সমীপে ।।
আর এক পুত্র হৈল বিশ্বরূপ নামে ।
দুর্ভিক্ষ জন্মিল বড় নবদ্বীপ গ্রামে ।।
নিরবধি ডাকা চুরি অরিষ্ট দেখিয়া ।
নানা দেশে সর্বলোক গেল পালাইয়া ।।
তবে জগন্নাথ মিশ্র দেখিয়া কৌতুকে ।
বিশ্বরূপ দশকর্ম করিল একে একে ।।
[Page 14]
আচম্বিতে নবদ্বীপে হৈল রাজভয় ।
ব্রাহ্মণ ধরিয়া রাজা জাতি প্রাণ লয় ।।
নবদ্বীপে শঙ্খধ্বনি শুনে যার ঘরে ।
ধন প্রাণ লএ তার জাতি নাশ করে ।।
কপালে তিলক দেখে যজ্ঞ সুত্র কান্ধে ।
ঘর দ্বার লুটে তার লৌহপাশে বান্ধে ।।
দেউল দেহারা ভাঙ্গে উপাড়ে তুলসী ।
জীবনভএ স্থির নহে নবদ্বীপে বাসী ।।
গঙ্গাস্নানে বিরোধিল হাট ঘাট যত ।
অশ্বত্থ পনস বৃক্ষ কাটে শত শত ।।
পিরল্যা গ্রামেতে বস্যে যতেক যবনে ।
উচ্ছন্ন করিল নবদ্বীপের ব্রাহ্মণে ।।
ব্রাহ্মণে যবনে বাদ যুগে যুগে আছে ।
বিষম পিরল্যা গ্রাম নবদ্বীপ কাছে ।।
গৌড়েশ্বর বিদ্যমানে দিল মিথ্যাবাদ ।
নবদ্বীপের বিপ্র তুমার করিব প্রমাদ ।।
গৌড়ে ব্রাহ্মণ রাজা হবে হেন আছে ।
নিশ্চিন্তে না থাকিহ প্রমাদ হএ পাছে ।।
নবদ্বীপের ব্রাহ্মণ অবশ্য হব রাজা ।
গন্ধর্বে লিখন আছে ধনুর্ময় প্রজা ।।
এই মিথ্যা কথা রাজার মনেতে লাগিল ।
নদীয়া উচ্ছন্ন কর রাজা আজ্ঞা দিল ।।
বিশারদসুত সার্বভৌম ভট্টাচারয্য ।
সবংশে উৎকল গেল ছাড়ি গৌড় রাজ্য ।।
উৎকলে প্রতাপ্ররুদ্র ধনুর্ময় রাজা ।
রত্নসিংহাসনে সার্বভৌমের কৈল পূজা ।।
তার ভ্রাতা বিদ্যাবাচস্পতি গৌড়ে বসি ।
বিশারদ নিবাস করিল বারাণসী ।।
বিদ্যাবিরিঞ্চি বিদ্যারণ্য নবদ্বীপে ।
ভট্টাচারয্যশিরোমণি সভার সমীপে ।।
নদীয়া উচ্ছন্ন হৈল শুনি গৌড়েশ্বর ।
রাত্রিকালে স্বপ্ন দেখে মহা ঘোরতর ।।
কালী খড়গ খর্পরধারিণী দিগম্বরী ।
মুণ্ডমালা গলে কাট কাট শব্দ করি ।।
ধরিআ রাজার কেশে বুকে মারি শেল ।
কর্ণরন্ধ্রে নাসারন্ধ্রে ঢালে তপ্ত তেল ।।
আজি তোর গঙ্গায় পেলামু গৌড় পাট ।
সবংশে কাটিমু তোর হস্তী ঘোড়া ঠাট ।।
গৌড়েন্দ্র বলেন মাতা মোর দেহে থাক ।
নবদ্বীপ বসাইব আজি প্রাণ রাখ ।।
নাকে খত দিল রাজা তবে কালী ছাড়ে ।
মুর্ছা গেলা গৌড়েন্দ্র ধরণী তলে পড়ে ।।
প্রভাতে কহিল স্বপ্ন রাজবিশ্বাসে ।
শুনিঞা আশ্চর্জ্য স্বপ্ন সর্বলোকে ত্রাসে ।।
[Page 15]
গৌড়েন্দ্রর আজ্ঞা নবদ্বীপ সুখে বসু ।
রাজকুর নাঞি সর্বলোক চাষ চষু ।।
আজি হইতে হাট ঘাট বিরোধ যে করে ।
রাজকর দন্ডী হএ ত্রিশূল সে পরে ।।
দেউল দেহারা ভাঙ্গে অশ্বত্থ যে কাটে ।
ত্রিশূল চড়াহ তারে নদীয়ার হাটে ।।
বৈদ্য ব্রাহ্মণ যত নবদ্বীপে বস্যে ।।
নানা মহোৎসব করুক মনের সন্তোষে ।।
নাটগীত বাদ্য বাজুক প্রতি ঘরে ঘরে ।
কলসে পতাকা উড়ূক মন্দির উপরে ।।
পুষ্পের বাজার পড়ূ গন্ধের উভার ।
শঙ্খ ঘন্টা বাজুক যন্ত্র জয়কার ।।
পূর্বে যেন ছিল নবদ্বীপ রাজধানী ।
তাহাকে শতেক গুণ অধিক যেন শুনি ।।
নবদ্বীপ সীমাএ যবন যদি দেখ ।
আপন ইৎসাএ মার প্রাণে পাছে রাখ ।।
দেবপূজা কর সুখে য হোম দান ।
হাটঘাট মানা নাঞি কর গঙ্গাস্নান ।।
নবদ্বীপের প্রজাএ কি মোর অধিকার ।
সত্য সত্য বলি আমি সংসারের সার ।।
রাজার আজ্ঞা এ নবদ্বীপ পুন সৃষ্টি ।
শরৎকালে রাত্রিশেষে হইল পুষ্পবৃষ্টি ।।
মহা মহা জন যে ছাড়িআছিল গ্রাম ।
আল্যা সভে হআ পূর্ণকাম ।।
চিন্তিয়া চৈতন্যগদাধরপদদন্দ্ব ।
আনন্দে নদীয়াখণ্ড রচে জয়ানন্দ ।।