Annadamangal

About this text

Introductory notes

Mangalkabya is a popular genre in Bengali, influenced by regional cults such as that of Chandi, Manasa, Dharma, or Vaishnav songs, flourished from the thirteenth century to the eighteenth. . The poems are typically written in the form of songs (panchalika) meant for performance by professional singers (mangal gayak) backed by a male chorus (dohar) during ritual worship of the particular deity who was the subject of the poem. Annadamangal Kabya was composed in 1752 by Bharatchandra Ray Gunakar, considered to be one of the leading figures in history of Bengali literature. Bharatchandra Annadamangal under the patronage of Raja Krishnachandra Ray, the zamindar of Nadia.

Bharatchandra born around 1712 in a village in present day Howrah district, experienced major fluctuations of fate in his life. Bharatchandra was witness to the annual Maratha raids between 1740 to 1751. The Maratha raids caused immense sufferings to the people of Bengal, leading to destruction of crops and desertion. Bharatchandra's Annadamangal Kabya provides a picture of the crisis that Bengal underwent in the first half of the 18th Century. Bharatchandra Ray, who was adorned with the title of Ray Gunakor by Krishnachandra Ray, passed away in 1760. Annadamangal was incidentally the first illustrated Bengal book to be published in 1818. The present selections have been made from the first volume of collection of Bharatchandra's works, edited by Brajendranath Bandopadhyay and Sajanikantha Das, The collection was published by the Bangiya Sahitya Parisad in 1942.

Selection details

Bharatchandra born around 1712 in a village in present day Howrah district, experienced major fluctuations of fate in his life. Bharatchandra was witness to the annual Maratha raids between 1740 to 1751. The Maratha raids caused immense sufferings to the people of Bengal, leading to destruction of crops and desertion. Bharatchandra's Annadamangal Kabya provides a picture of the crisis that Bengal underwent in the first half of the 18th Century. Bharatchandra Ray, who was adorned with the title of Ray Gunakor by Krishnachandra Ray, passed away in 1760. Annadamangal was incidentally the first illustrated Bengal book to be published in 1818. The present selections have been made from the first volume of collection of Bharatchandra's works, edited by Brajendranath Bandopadhyay and Sajanikantha Das, The collection was published by the Bangiya Sahitya Parisad in 1942.

[Page 12]

1. অন্নপুর্ণাবন্দনা

তোমার করুণা যারে সবে ধন্য বলে তারে
গুণিগণে তাহার গণন।।
দয়া কর মহামায়া দেহ মোরে পদছায়া
পূর্ণ কর নূতন মঙ্গল।
আসরে আসিয়া উর নায়কের আশা পূর
দূর কর কুজ্ঞান সকল।।
কৃষ্ণচন্দ্র নরপতি গীতে দিলা অনুমতি
করিলাম আরম্ভ সহসা।
মনে বড় পাই ভয় না জানি কেমন হয়
ভারতের ভারতী ভরসা।।
অন্নপুর্ণা মহামায়া দেহ মোরে পদছায়া
কোটি কোটি করিএ প্রণাম।
আসরে আসিয়া উর নায়াকের আশা পুর
শুন আপনার গুণগ্রাম।।১
কৃপাবলোকন কর ভক্তের দুরিত হর
দারিদ্র্য দুর্গতি কর চূর্ণ।
তুমি দেবী পরাৎপরা সুখদাত্রী দুঃখহরা
অন্নপূর্ণা অন্নে কর পুর্ণ।।
রক্তসরসিজোপরি বসি পদ্মাসন করি
পদতলে নবরবি২ দেখা।
[Page 13]
রক্তজবাপ্রভাকর অতিমনোহরতর
ধ্বজবজ্রাঙ্কুশ ঊর্দ্ধরেখা।।
কিবা সুবলিত উরু কদলিকাণ্ডের গুরু
নিরুপম নিতম্বে কিঙ্কিণী।
শোভে নিরুপম বাস দশ দিশ১ পরকাশ
ত্রিভুবনমোহকারিণী।।
কটি অতি ক্ষীণতর নাভি সুধাসরোবর
উচ্চ কুচ সুধার কলস।
কন্ঠ কম্বুরাজ রাজে নানা অলঙ্কার সাজে
প্রকাশে ভুবন চতুর্দ্দশ।।
কিবা মনোহর কর মৃণালের গর্ব্বহর২
অঙ্গুলী চম্পকচারুদল।
ফণিরাজমণি কঙ্কনের কণকণি
নানা অলঙ্কার ঝলমল।।
বাম করতলে ধরি কারণ অমৃত ভরি
পানপাত্র রতন নির্মিত।
রত্ন হাতা ডানি হাতে সঘৃত পলান্ন তাতে
কিবা দুই ভুজ সুললিত।।
চর্ব্ব্য চূষ্য লেহ্য পেয় নানা রস অপ্রমেয়
বিবিধ বিলাসে পরশিয়া।
ভুঞ্জাইয়া কৃত্তিবাস মধুর মধুর হাস
মহেশের নাচন দেখিয়া।।
[Page 14]
দেবতা অসুর রক্ষ অপ্সর কিন্নর যক্ষ
সবে ভোগ করে নানা রস।
গন্ধর্ব্ব ভুজঙ্গ নর সিদ্ধ সাধ্য বিদ্যাধর
নবগ্রহ দিকপাল দশ।।
জিনি কোটি শশধর কিবা মুখ মনোহর
মণিময় মুকুট মাথায়।
ললিত করবীভার তাহে মালতীর হার
ভ্রমর ভ্রমরী কল গায়।
বিধি বিষ্ণু ত্রিলোচন আদি দেব ঋষিগণ
চৌদিকে বেড়িয়া করে গান।
আগম পুরাণ বেদ না জানে তোমার ভেদ
তুমি দেবী পুরুষ প্রধান।।
ঘটে কর অধিষ্ঠান শুনা নিজ গুণ গান
নায়কের পুর্ণ কর আশ।
রাজার মঙ্গল কর রাজ্যের আপদ হর
গায়কের কন্ঠে কর বাস।।
স্বপনে রজনীশেষে বসিয়া শিয়রদেশে
কহিলা মঙ্গল রচিবারে।
সেই আজ্ঞা শিরে বহি নুতন মঙ্গল কহি
পুর্ণ কর চাহিয়া আমারে।।
বিস্তর অন্নদাকল্পে কত গুণ কব অল্পে
নিজ গুণে হবে বরদায়।
নুতন মঙ্গল আশে ভারত সরস ভাসে
রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের আজ্ঞায়।।
[Page 15]

2. ৭. গ্রন্থসূচনা

অন্নপূর্ণা অপর্ণা অন্নদা অষ্টভুজা।
অভয়া অপরাজিতা অচ্যুত অনুজা।।
অনাদ্যা অনন্তা অম্বা অম্বিকা অজয়া।
অপরাধ ক্ষম অগো অব গো অব্যয়া।।
শুন শুন নিবেদন সভাজন সব।
যে রুপে প্রকাশ অন্নপূর্ণা মহোৎসব।।
সুজা খাঁ নবাবসুত সর্ফরাজ খাঁ।
দেয়ান আলমচন্দ্র রায় রায়রায়াঁ।।
ছিল আলিবর্দ্দি খাঁ নবাব পাটনায়।১
আসিয়া করিয়া যুদ্ধ বধিলেক তায়।।
তদবধি আলিবর্দ্দি হইলা নবাব।
মহাবদজঙ্গ দিলা পাতশা খেতাব।।
কটকে মুরসীদ্কুলি খাঁ নবাব ছিল।
তারে গিয়া আলিবর্দ্দি খেদাইয়া দিল।।
কটকে হইল আলিবর্দ্দির আমল।
ভাইপো সৌলদজঙ্গে দিলেন দখল।।
নবাব সৌলদজঙ্গ রহিলা কটকে।
মুরাদবাখর তারে ফেলিল ফাটকে।।
লুঠি নিল নারী গারী দিল বেড়ি তোক।
শুনি মহাবদজঙ্গ চলে পেয়ে শোক।।
উত্তরিল কটকে হইয়া ত্বরাপর।
যুদ্ধে হারি পলাইল মুরাদবাখর।
[Page 16]
ভাইপো সৌলদজঙ্গে খালাস করিয়া।
উড়িষ্যা করিল ছার লুঠিয়া পুড়িয়া।।
বিস্তর লস্কর সঙ্গে অতিশয় জুম।
আসিয়া ভুবনেশ্বরে করিলেক ধুম।।
ভুবনে ভুবনেশ্বর মহেশের স্থান।
দুর্গা সহ শিবের সর্ব্বদা অধিষ্ঠান।।
দুরাত্মা মোগল তাহে দৌরাত্ম্য করিল।।
দেখিয়া নন্দীর মনে ক্রোধ উপজিল।।
মারিতে লইলা হাতে প্রলয়ের শুল।
করিব১ যবন সব সমূল নির্ম্মূল।।
নিষেধ করিল শিব ত্রিশূল মারিতে।
বিস্তর হইবে নষ্ট একেরে বধিতে।।
অকালে প্রলয় হৈল কি কর কি কর।
না ছাড় সংহার শূল সংহর সংহর।।
আছয়ে বর্গির রাজা গড় সেতারায়।
আমার ভকত বড় স্বপ্ন কহ তায়।।
সেই আসি যবনের করিবে দমন।
শুনি নন্দী তারে গিয়া কহিলা স্বপন।।
স্বপ্ন দেখি বর্গিরাজা হইল ক্রোধিত।।
পাঠাইল রঘুরাজ ভাস্কর পণ্ডিত।।
বর্গি মহারাষ্ট্র আর সৌরাষ্ট্র প্রভৃতি।
আইল বিস্তর সৈন্য বিকৃতি আকৃতি।
লুঠি বাঙ্গলার লোকে করিল কাঙ্গাল।
গঙ্গা পার হৈল বান্ধি নৌকার জাঙ্গাল।।
[Page 17]
কাটিল বিস্তর লোক গ্রাম গ্রাম পুড়ি।
লুঠিয়া লইল ধন ঝিউড়ী বহুড়ী।।
পলাইয়া কোঠে গিয়া নবাব রহিল।
কি কহিব বাঙ্গালার যে দশা হইল।।
লুঠিয়া ভুবনেশ্বর যবন পাতকী।
সেই পাপে তিন সুবা হইল নারকী।।
নগর পুড়িলে দেবালয় কি এড়ায়।
বিস্তর ধার্ম্মিক লোক ঠেকে গেল দায়।।
নদীয়া প্রভৃতি চারি সমাজের পতি।
কৃষ্ণচন্দ্র মহারাজ শুদ্ধশান্তমতি।।
প্রতাপতপনে কীর্তিপদ্ম বিকাসিয়া১।
রাখিলেন রাজলক্ষী অচলা করিয়া।।
রাজা রাজচক্রবর্ত্তী ঋষি ঋষিরাজ।
ইন্দ্রের সমাজ সম যাঁহার সমাজ।।
কাশীতে বান্ধিলা জ্ঞানবাপীর সোপান।
উপমা কোথায় দিব না দেখি সমান।।
দেবীপুত্র বলি লোক যার গুণ গায়।
এহ২ পাপে সেহ৩ রাজা ঠেকিলেন দায়।।
মহাবদজঙ্গ তাঁরে ধরে লয়ে যায়।
নজরানা বলে বার লক্ষ টাকা চায়।।
লিখি দিলা সেই রাজা দিব বার লক্ষ।
সাজোয়াল হইল সুজন সর্ব্বভক্ষ।।
বর্গিতে লুঠিল কত কত বা সুজন।
নানামতে রাজার প্রজার গেল ধন।।
[Page 18]
বন্ধ করি রাখিলেক মুরশিদাবাদে।
কত শত্রু কত মতে লাগিল বিবাদে।।
দেবীপুত্র দয়াময় ধরাপতি ধীর।
বিবিধ প্রকারে পুজা করিলা দেবীর।।
চৌত্রিশ অক্ষরে বর্ণাইয়া কৈলা স্তব।
অনুকম্পা স্বপনে হইল অনুভব।।
অন্নপূর্ণা ভগবতী মূরতি ধরিয়া।
স্বপন কহিলা মাতা শিয়রে বসিয়া।।
শুন রাজা১ কৃষ্ণচন্দ্র না করিহ ভয়।
এই মূর্ত্তি পূজা কর দুঃখ হবে ক্ষয়।।
আমার মঙ্গল গীত করহ প্রকাশ।
কয়ে দিলা পদ্ধতি গীতের ইতিহাস।।
চৈত্র মাসে শুক্ল পক্ষে অষ্টমী নিশায়।
করিহ আমার পুজা বিধিব্যবস্থায়।।
সভাসদ তোমার ভারতচন্দ্র রায়।
মহাকবি মহাভক্ত আমার দয়ায়।।
তুমি তারে রায় গুণাকর নাম দিও।
রচিতে আমার গীত সাদরে কহিও।।
আমি তারে স্বপ্ন কব তার মাতৃবেশে।
অষ্টাহ গীতের উপদেশ সবিশেষে।।
সেই আজ্ঞা মত রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়।
অন্নপূর্ণা পুজা করি তরিলা সে দায়।।
সেই আজ্ঞা মত কবি রায় গুণাকর।
অন্নদামঙ্গল কহে নবরসতর।।
[Page 90]

3. শিবের ভিক্ষায় গমনোদ্যোগ

ভবানীর কটুভাষে লজ্জা হৈল কৃত্তিবাসে
ক্ষুধানলে কলেবর দহে।
বেলা হৈল অতিরিক্ত পিত্তে হৈল গলা তিক্ত
বৃদ্ধ লোকে ক্ষুধা নাহি সহে।।
হেঁটমুখে পঞ্চানন নন্দীরে ডাকিয়া কন
বৃষ আন যাইব ভিক্ষায়।
আন শিঙ্গা হাড়মাল ডমরু বাঘের ছাল
বিভূতি লেপিয়া দেহ গায়।।
আন রে ত্রিশূল ঝুলি প্রমথ সকলগুলি
যতগুলি১ ধুতুরার ফল।
থলি ভরা সিদ্ধিগুঁড়া লহ রে ঘোটনা কুঁড়া
জটায় আছয়ে গঙ্গাজল।।
ঘর উজাড়িয়া যাব ভিক্ষায় যে পাই খাব২
অদ্যাবধি ছাড়িনু কৈলাস।
নারী যার স্বতন্তরা সে জন জীয়ন্তে মরা
তাহারে উচিত বনবাস।।
বৃদ্ধকাল আপনার নাহি জানি রোজগার
চাষবাস বাণিজ্য ব্যাপার।
[Page 91]
সকলে নির্গুণ কয় ভুলায়ে সর্ব্বস্ব লয়
নাম মাত্র রহিয়াছে সার।।
যত আনি তত নাই না ঘুচিল খাই খাই১
কিবা সুখ এ ঘরে থাকিয়া।
এত বলি দিগম্বর আরোহিয়া বৃষবর২
চলিলেন ভিক্ষার লাগিয়া।।
শিবের দেখিয়া গতি শিবা কন ক্রোধমতি
কি করিব একা ঘরে রয়ে।
বৃথা কেন দুঃখ পাই বাপের মন্দিরে যাই
গণপতি কার্ত্তিকেয় লয়ে।।
যে ঘরে গৃহস্থ হেন সে ঘরে গৃহিণী কেন
নাহি ঘরে সদা খাই খাই।৩
কি করে গৃহিণীপনে খন খন ঝন ঝনে
আসে লক্ষী বেড়৪ বান্ধে নাই।।
বাণিজ্যে লক্ষীর বাস তাহার অর্দ্ধেক চাষ
রাজসেবা কত খচমচ।
গৃহস্থ আছয়ে যত সকলের এই মত
ভিক্ষা মাগা নৈব চ নৈব চ।।
হইয়া বিরসমন লয়ে গুহ গজানন
হিমালয়ে চলিলা অভয়া।
ভারত বিনয়ে কয় এমন উচিত নয়
নিষেধ৫ করিয়া কহে জয়া।।
[Page 92]

4. জয়ার উপদেশ

কহে সখী জয়া শুন গো অভয়া
এ কি কর ঠাকুরালি।
ক্রোধে করি ভর যাবে বাপঘর
খেয়াতি হবে কাঙ্গালী।।
মিছা ক্রোধ করি আপনা পাসরি
কি কর ছাবাল খেলা।
সুখমোক্ষধাম অন্নপূর্ণা নাম
সঃসার সাগরে ভেলা।।
অন্নপূর্ণা হয়ে অন্ন দেহ কয়ে
দাঁড়াবে কাহার কাছে ।
দেখিয়া কাঙ্গালী সবে দিবে গালি।
রহিতে না দিবে১ নাছে।।
জননীর আশে যাবে পিতৃবাসে
ভাজে দিবে সদা তাড়া।
বাপে না জিজ্ঞাসে মায়ে না সম্ভাষে
যদি দেখে লক্ষীছারা২।।
যা বলি তা কর নিজ মূর্ত্তি ধর
বস অন্নপূর্ণা হয়ে।
কৈলাসশিখর অন্নে পূর্ণ কর
জগতের অন্ন লয়ে।।
তিন ভূমণ্ডলে যে স্থলে যে স্থলে
যত যত অন্ন আছে।
[Page 93]
কটাক্ষ করিয়া আনহ হরিয়া
রাখহ আপন কাছে।।১
কমল আসন আদি দেবগণ
কোটি কোটি লক্ষ লক্ষ।
কমলা প্রভৃতি যতেক প্রকৃতি
এই স্থানে দেহ ভক্ষ্য।।
ফিরি ঘরে ঘর হইয়া ফাঁফর
কোথাও অন্ন না পেয়ে।২
আপনি শঙ্কর আসিবেন ঘর
তোমার এ গুণ গেয়ে।।৩
অন্ন দিয়া তাঁরে সকল সংসারে
আপনা প্রকাশ কর।
প্রকাশিয়া তন্ত্রে অন্নপূর্ণামন্ত্রে
লোকের যন্ত্রণা হর।।
তিন ভুমণ্ডলে পূজিবে সকলে
চৈত্র শুক্লা অষ্টমীতে।
দ্বিতীয়া অন্বিত অষ্টাহ সঙ্গীত
বিসর্জ্জন নবমীতে।।
পুজিবে যে জনে তাহার ভবনে
হইবে লক্ষ্মী অচলা।
আর জত আছে সব হবে পাছে
কহিবে অষ্টমঙ্গলা।।
[Page 94]
কৃষ্ণচন্দ্র ভুপ দেবীপুত্ররূপ১
অন্নপূর্ণা ব্রতদাস।২
ভারত ব্রাহ্মণ কহে সুবচন৩
অন্নদা পুরাও আশ।।৪
[Page 94]

5. অন্নপূর্ণামূর্ত্তি ধারণ।

অন্নপূর্ণা জয় জয়
দূর কর ভবভয়।।
তুমি সর্ব্বময় তোমা হৈতে হয়
সৃজন পালন লয়।
কত মায়া কর কত কায়া৫ ধর
বেদের গোচর নয়।।
বিধি হরি হর আদি চরাচর
কটাক্ষেতে কত হয়।
ছাড় ছায়া মায়া দেহ পদছায়া
ভারত বিনয়ে কয়।।
জয়ার বচনে দেবী মানিয়া প্রবোধ।
বসিলেন হাস্যমুখী দূরে গেল ক্রোধ।।
[Page 95]
বিশাই বিশাই বলি করিলা স্মরণ।
জোরহাতে বিশ্বকর্ম্মা দিলা দরশন।।
শুন রে বিশাই বাছা লহ মর পান।
পানপাত্র হাতা দেহ করিয়া নির্ম্মাণ।।
মর্ম্ম বুঝি বিশ্বকর্ম্মা আজ্ঞা পাবামাত্র।
রতননির্ম্মিত দিলা হাতা পানপাত্র।।
রতনমুকুট দিলা নানা পানপাত্র।।
অমূল্য কাঁচুলি শাড়ী উড়নি যে আর।।
বসিবারে মণিময় দিলা কোকনদ।
আশিস করিলা মাতা হও নিরাপদ।।
মায়া কৈলা মহামায়া কহিতে কে পারে।
হরিলা যতেক অন্ন আছিল সংসারে।।
কোটি কোটিরূপ কোটি কোটি নারায়ণ।
কোটি কোটিরূপ কোটি কোটি পদ্মাসন।।
কোটি কোটিরূপ কোটি কোটি মৃত্যুঞ্জয়।
কোটি কোটিরূপ কোটি কোটি হরি হয়।।
দেব দেবী ভুজঙ্গ কিন্নর আদি যত।
সৃষ্টি কৈলা কোটি কোটিরূপ কোটি কোটি শত।।
কোটি কোটি ব্রহ্মাণ্ড হইল এক ঠাঁই।
কেমন হইল মেনে মনে আসে নাই।
অন্নের পর্ব্বত পরমান্নসরোবর।
ঘৃত মধু দুগ্ধ দধি সাগর সাগর।।
কে রান্ধে কে বাড়ে কেবা দেয় কেবা খায়।১
কোলাহল গণ্ডগোল কহা নাহি যায়।।২
[Page 96]
অনন্ত ব্রহ্মাণ্ড কলরব এক ঠাঁই।
জয় জয় অন্নপূর্ণা বিনা শব্দ নাই।।
আজ্ঞা দিলা কৃষ্ণচন্দ্র ধরণী ঈশ্বর।
রচিল ভারতচন্দ্র রায় গুণাকর।।
[Page 96]

6. শিবের ভিক্ষাযাত্রা

জয় শিব নাচহি পাঁচহি তালা।
বাজত ডমরু পিনাক রসালা।।১
নাচত ভূত বাজাওত ভৈরব
গাওত তাল বেতালা।
নন্দী কহে তাতা- কার২ মনোহর
ভৃঙ্গী বাজাওত গালা।।
গঙ্গা ঝরে জল চাঁদ সুধারস
অনল হলাহল জ্বালা।
ভারতকে হর শঙ্কর মূরতি
নাশ কপাল কপালা।।
ওথায় ত্রিলোকনাথ বলদে চড়িয়া।
ত্রিলোক ভ্রমেন অন্ন চাহিয়া চাহিয়া।।
যেখানে যেখানে হর অন্ন হেতু যান।
হা অন্ন হা অন্ন ভিন্ন শুনিতে না পান।।
ববম্ ববম্ বম ঘন বাজে গাল।
ভভম্ ভভম্ ভম শিঙ্গা বাজে ভাল।।
[Page 97]
ডিমি ডিমি ডিমি ডিমি ডমরু বাজিছে।
তাধিয়া তাধিয়া ধিয়া পিশাচ নাচিছে।।
দূরে হৈতে শুনা যায় মহেশের শিঙ্গা।
শিব এল বলে ধায় যত রঙ্গচিঙ্গা১।।
কেহ বলে ওই এল শিব বুড়া কাপ।
কেহ বলে বুড়াটি খেলাও দেখি সাপ।।
কেহ বলে জটা হৈতে বার কর জল।
কেহ বলে জ্বাল দেখি কপালে অনল।।
কেহ বলে ভাল করি শিঙ্গাটি বাজাও।
কেহ বলে ডমরু বাজায়ে গীত গাও।।
কেহ বলে নাচ দেখি গাল বাজাইয়া।
ছাই মাটি কেহ গায় দেয় ফেলাইয়া।।
কেহ আনি দেয় ধুতুরার ফুল ফল।
কেহ দেয় ভাঙ্গ পোস্ত আফিঙ্গ গরল।।
আর আর দিন তাহে হাসেন গোসাঁই।
ও দিন ওদন বিনা ভাল লাগে নাই।।
চেত রে চেত রে চিত২ ডাকে চিদানন্দ।
চেতনা যাহার চিত্তে সেই চিদানন্দ।।
যে জন চেতনামুখী সেই সদা সুখী।
যে জন অচেতচিত্ত সেই সদা দুখী।।
এত বলি অন্ন দেহ কহিছেন শিব।
সবে বলে অন্ন নাই বলহ কি দিব।।
কি জানি কি দৈব আজি হৈল প্রতিকূল।
অন্ন বিনা সবে আজি হয়েছি আকুল।।
[Page 98]
কান্দিছে আপন শিশু অন্ন ন পাইয়া।
কোথায় পাইব অন্ন তোমার লাগিয়া।।
আজি মেনে ফিরে মাগ শঙ্কর ভিখারী।
কালি আস দিব অন্ন আজি ত না পারি।।
এইরূপে শঙ্কর ফিরিয়া ঘর ঘর।।
অন্ন না পাইয়া হৈলা বড়ই কাতর।।
ক্রমে ক্রমে ত্রিভুবন করিয়া ভ্রমণ।
বৈকুন্ঠে গেলেন যথা লক্ষীনারায়ণ।।
আস লক্ষ্মী অন্ন দেহ ডাকেন শঙ্কর।
ভারত কহিছে লক্ষ্মী হইলা ফাঁফর।।
[Page 98]

7. শিবের প্রতি লক্ষ্মীর উপদেশ

কহে লক্ষ্মী শুন গৌরীপতি।
কহিতে না বাক্য সরে অন্ন নাহি মোর ঘরে
আজি বড় দৈবের দুর্গতি।।
আমি লক্ষ্মী সর্ব্বঠাঁই মোর ঘরে অন্ন নাই
ইহাতে প্রত্যয় কেবা করে।
শুনিয়া শঙ্কর কন ফিরিলাম ত্রিভুবন
এই কথা সকলের ঘরে।।
গুমান হইল গুঁড়া না মিলিল খুদ কুঁড়া।
ফিরিনু সকল পাড়া পাড়া।
হাভাতে যদ্যপি চায় সাগর শুকায়ে যায়।
হেদে লক্ষ্মী হৈল লক্ষ্মীছাড়া।।
[Page 99]
লক্ষ্মী বলে অন্ন নাই আর যাব কার ঠাঁই
ভুবনে ভাবিয়া নাহি পাই।
গলে সাপ বান্ধি চাই তবু অন্ন নাহি পাই১
কপালে দিলেক বিধি ছাই।।
কত সাপ আছে গায় হাভাতের নাহি খায়
গলে বিষ সেহ নাহি বধে।
কপালে অনল জ্বলে সেহ না পোড়ায় বলে।
না জানি মরিব কি ঔষধে।।
ঘরে অন্ন নাহি যার মরণ মঙ্গল তার
তার কেন বিলাসের সাদ।
যার নারী সুতা সুত সদা অন্নকষ্টযুত
সর্ব্বদা তাহার অবসাদ।।
দেখিয়া শিবের খেদ লক্ষ্মী কয়ে দিলা ভেদ
কেন শিব করহ বিষাদ।
অন্নপূর্ণা যার ঘরে সে কান্দে অন্নের তরে
এ বড় মায়ার পরমাদ।।২
গৌরী অন্নপূর্ণা হয়ে জগতের অন্ন লয়ে
কৈলাসে পাতিয়াছেন খেলা।
যত্তেক ব্রহ্মাণ্ড আছে সকলি তাঁহার কাছে
তাঁরে কেন করিয়াছ হেলা।।
আমার যুকতি ধর কৈলাস গমন কর
আমি আদি সকলি সেখানে।
তোমারে করার তরে আমি আছিলাম ঘরে৩
এই আমি যাই সেইখানে।।
[Page 100]

8. শিবে অন্নদান

অন্নপূর্ণা দিলা শিবেরে অন্ন।
অন্ন খান শিব সুখসম্পন্ন।।
কারণ অমৃত পূরিত করি।
রত্ন পানপাত্র দিলা ঈশ্বরী।।
সঘৃত পলান্নে পূরিয়া হাতা।
পরশেন হরে হরিষে মাতা।।
পঞ্চ মুখে শিব খাবেন কত।
পুরেন উদর সাদের মত।।
[Page 101]
পায়সপয়োধি সপসপিয়া।
পিষ্টকপর্ব্বত কচমচিয়া।।
চুকু চুকু চুকু চুষ্য চুষিয়া।
কচর মচর চর্ব্ব্য চিবিয়া।।
লিহ লিহ জিহে লেহ্য লেহিয়া।
চুমুকে চক চক পেয় পিয়া।।
জয় জয় অন্নপূর্ণা বলিয়া।
নাচেন শঙ্কর ভাবে ঢলিয়া।।
হরিষে১ অবশ অলস অঙ্গে।
নাচেন শঙ্কর রঙ্গ তরঙ্গে।।
লটপট জটা লপটে পায়।
ঝর ঝর ঝরে জাহ্নবী তায়।
গর গর গর গরজে ফণী।
দপ দপ দপ দীপয়ে মণি।।
ধক ধক ধক ভালে অনল।
তর তর তর চাঁদমণ্ডল।।
সর সর সরে বাঘের ছাল।
দলমল দোলে মুণ্ডের মাল।।
তাধিয়া তাধিয়া বাজয়ে তাল।
তাতা থেই থেই বলে বেতাল।।
ববম ববম বাজয়ে গাল।
ডিমি ডিমি বাজে ডমরু ভাল।।
ভভম ভভম বাজয়ে শিঙ্গা।
মৃদঙ্গ বাজয়ে তাধিঙ্গা ধিঙা।।
[Page 102]
পঞ্চ মুখে গেয়ে পঞ্চম তালে।
নাচেন শঙ্কর বাজায়ে গালে।।
নাটক দেখিয়া শিব ঠাকুর।
হাসেন অন্নদা মৃদু মধুর।।
অন্নদা অন্ন দেহ এই যাচে।
ভারত ভুলিল১ ভবের নাচে।।
[Page 144]

9. ব্যাসের ভিক্ষাবারণ

হর১ শশাঙ্কশেখর দয়া কর।
বিভূতিভূষিত কলেবর।।
তরঙ্গভঙ্গিত ভুজঙ্গরহিত
কপর্দ্দমর্দ্দিত জটাধর।
কুবের বান্ধব বিভুতিবৈভব২
ভবেশ ভৈরব দিগম্বর।।
ভুজঙ্গকুণ্ডল পিশাচমণ্ডল
মহাকুতুহল মহেশ্বর।
রজঃপ্রভায়ত পদাম্বুজানত
সুদীন ভারত শুভঙ্কর।।
এইরুপে বেদব্যাস রহিলা কাশীতে।
নন্দীরে কহেন শিব হাসিতে হাসিতে।।
দেখ দেখ অহে নন্দি ব্যাসের দুর্দ্দৈব।
ছিল গোঁড়া বৈষ্ণব হইল গোঁড়া শৈব।।
[Page 145]
যবে ছিল বিষ্ণুভক্ত মোরে না মানিল।
যদি হৈল মোর ভক্ত বিষ্ণুরে ছাড়িল।।
কি দোষে মুছিল হরিমন্দির১ ফোঁটায়।
কী দোষে ফেলিল ছিঁড়ি তুলসীমালায়।।
হের দেখ তুলসীপত্রের গড়াগড়ি।
বিল্বপত্র লইয়া দেখহ রড়ারড়ি।।
হের দেখ টানিয়া ফেলিল শালগ্রাম।
রাগে মত্ত হইয়া ছাড়িল হরিনাম।।
মোর ভক্ত হয়ে যেবা নাহি মানে হরি।
আমি ত তাহার পুজা গ্রহণ না করি।।
হরিভক্ত হয়ে যেবা না মানে আমারে।
কদাচ কমলাকান্ত না চাহেন তারে।।
হরি হর দুই মোরা অভেদশরীর।
অভেদে যে জন ভজে সেঈ ভক্ত ধীর।।
রূদ্রাক্ষ তুলসীমালা যেই ধরে গলে।
তার গলে হরিহরে থাকি কুতূহলে২।
অভেদ দুজনে মোরা ভেদ করে ব্যাস।
উচিত না হয় যে কাশীতে করে বাস।।
চঞ্চল ব্যাসের মন শেষে যাবে জানা।
কাশীতে ব্যাসের অন্ন৩ শিব কৈলা মানা।।
স্নান পুজা সমাপিয়া ব্যাস ঋষিবর।
ভিক্ষাহেতু গেলা এক গৃহস্থের ঘর।।
ব্যাসে ভিক্ষা দিতে এক গৃহী হইল উদ্যত।
কিঞ্চিত না পায় দ্রব্য হৈল বুদ্ধিহত।
[Page 146]
ভিক্ষার বিলম্ব দেখি ব্যাস তপোধন।
গৃহস্থেরে গালি দিয়া করিলা গমন।।
বালক কুক্কুর লয়ে করে তাড়াতাড়ি।১
ব্যাসদেব গেলা অন্য গৃহস্থের বাড়ী।।২
ব্যাসেরে দেখিয়া গৃহী করিয়া যতন।
ভিক্ষা দিতে ঘর হৈতে আনে আয়োজন।।
শিবের মায়ায় কেহ দেখিতে না পায়।
হাত হইতে হরিয়া ভৈরবে লয়ে যায়।।
রিক্তহস্ত গৃহস্থ দাঁড়ায় বুদ্ধিহত।
মর্ম্ম না বুঝিয়া ব্যাস কটু কন কত।।
এইরূপে ব্যাসদেব যান যার বাড়ী।
ভিক্ষা নাহি পান আর লাভ তাড়াতাড়ি।।
সবে বলে ব্যাস তুমি বড় লক্ষীছাড়া।
অন্ন উড়ি যায় তুমি যাহ সেই পাড়া।।
কেহ বলে যাও মেনে মুখ না দেখাও।
কেহ বলে আপনার নামটি লুকাও।।
এইরুপে গৃহস্থের সঙ্গে গণ্ডগোল।
ক্ষুধায় ব্যাকুল ব্যাস হইলা উতরোল।।
পাড়া পাড়া ঘরে ঘরে ফিরিয়া ফিরিয়া।
শিষ্যগণ ঠাঁই ঠাঁই পড়িছে ঘুরিয়া।।
আশ্রমে নিঃশ্বাস ছাড়ি চলিলেন ব্যাস।
শিষ্য সহ সে দিন করিলা উপবাস।।
পরদিন ভিক্ষাহেতু শিষ্য পাঠাইলা।
ভিক্ষা না পাইয়া সবে ফিরিয়া আইলা।।
[Page 147]
মহাক্রোধে ব্যাসদেব অজ্ঞান হইলা।
কাসীখণ্ডে বিখ্যাত কাশীতে শাপ দিলা।।
আজ্ঞা দিলা কৃষ্ণচন্দ্র ধরণী ঈশ্বর।
রচিল ভারতচন্দ্র রায় গুণাকর।।
[Page 147]

10. কাশীতে শাপ

আমারে শঙ্কর দয়া কর হে।
শরণ লয়েছি শুনি দয়া কর হে।।১
তুমি দীনদয়াময় আমি দীন অতিশয়
তবে কেন দয়া নয় দেখিয়া কাতর হে।
তব পদে আশুতোষ পদে পদে মোর দোষ
জানি কেন কর রোষ পামর উপর হে।।
পিশাচে তোমার প্রীতি মোর পিশাচের রীতি
তবে কেন মোর নীতি দেখে ভাব২ পর হে।
ভারত কাতর হয়ে ডাকে শিব শিব কয়ে
ভবনদী পারে লয়ে দূর কর ডর হে।।
ধন বিদ্যা মোক্ষ অহঙ্কারে কাশীবাসী।
আমারে না দিল ভিক্ষা আমি উপবাসী।।
তবে আমি বেদব্যাস এই দিনু শাপ।
কাশীবাসী লোকের অক্ষয় হবে পাপ।
[Page 148]
অন্যত্র যে পাপ হয় তাহা খণ্ডে কাশী।
কাশীতে যে পাপ হবে হবে অবিনাশী।
ক্রমে তিন পুরুষের বিদ্যা না হইবে।
ক্রমে তিন পুরুষের ধন না রহিবে।।
ক্রমে তিন পুরুষের মোক্ষ না হইবে।
যদি বেদ সত্য তবে অন্যথা নহিবে।
শাপ দিয়া পুনরপি চলিলা ভিক্ষায়।
ভিক্ষা না পাইয়া বড় ঠেকিলেন দায়।।
ঘরে ঘরে ফিরি ফিরি ভিক্ষা না পাইয়া।
আশ্রমে চলিলা ভিক্ষাপাত্র ফেলাইয়া।।
হেন কালে অন্নপূর্ণা দেখিতে পাইলা।
ব্যাসদেবে অন্ন দিতে আপনি চলিলা।।
জগতজননী মাতা সবারে সমান।
শক্তিরূপে সকল১ শরীরে অধিষ্ঠান।।
আকাশ পবন জল অনল অবনী।
সকলে সমান যেন চন্দ্র সূর্য্য তারা।
তেমনি সকলে সমা অন্নপুর্ণা সারা।।
মেঘে করে যেমন সকলে জলদান।
তেমনি সকলে সমা অন্নপুর্ণা সারা।।
মেঘে করে যেমন সকলে জলদান।
তেমনি অন্নদা দেবী সকলে সমান।।
তরু যেন ফল ধরে সবার লাগিয়া।
তেমনি সকলে অন্নপূর্ণা অন্ন দিয়া।।
হরি হর প্রভৃতিরো শত্রু মিত্র আছে।
শ্ত্রু মিত্র এক ভাব অন্নদার কাছে।।
[Page 149]
চলিলেন অন্নপুর্ণা ব্যাসে করি দয়া।
আগে আগে যায় জয়া পশ্চাতে বিজয়া।।১
হেন কালে পথে আসি কহেন মহেশ।
কোথায় চলেছ থুয়ে কার্ত্তিক গণেশ।।
ক্রোধভরে কন দেবী পিছু কেন ডাক।
ব্যাসে অন্ন দিয়া আসি ঘরে বসি থাক।।
একে বুড়া তাহে ভাঙ্গী ধুতুড়ায় ভোল।
অল্প অপরাধে কর মহাগণ্ডগোল।।
তিন দিনে ব্যাসেরে দিয়াছ উপবাস।
ব্রহ্মহত্যা হইবে তাহাতে নাহি ত্রাস।।
একবার ক্রোধেতে ব্রহ্মার মাথা লয়ে।
অদ্যাপি সে পাপে২ ফির মুণ্ডধারী হয়ে।।
কি হেতু করিলে মানা ব্যাসে অন্ন দিতে।
সে দিল কাশীতে শাপ পেটের জ্বালায়।।
আমি অন্নপুর্ণা আছি কাশীতে বসিয়া।
আমার দূর্নাম হবে না দেখ ভাবিয়া।।
এত বুলি অন্নপূর্ণা ক্রোধভরে যান।
সঙ্গে সঙ্গে যান শিব ভয়ে কম্পমান।।
সভয় দেখিয়া ভীমে হাসেন অভয়া।
বুড়াটির ঠাট হেদে দেখ লো বিজয়া।।
ভারত কহিছে ইথে সাক্ষী কেন৩ মান।
তোমার ঘরের ঠাট তোমরা সে জান।।
[Page 165]

11. গঙ্গাকৃত ব্যাসতিরষ্কার

কালের উচিত কর্ম্ম বুঝিনু১ তোমার মর্ম্ম
তুমি মোরে হাস উপহাসে।।
তোরে অন্তরঙ্গ জানি করিনু যুগলপাণি
উপকারে আসিতে আমার।
তাহা হৈল বিপরীত আর কহ অনুচিত
দৈবে করে কি দোষ তোমার।।
আমি যারে প্রকাশিনু আমি যারে বাড়াইনু
সেহ মোরে তুচ্ছ করি কহে।
মাতঙ্গ পড়িলে দরে পতঙ্গ প্রহার করে
এ দুঃখ পরাণে নাহি সহে।।
উচিত কহিব যদি নদীমধ্যে তুমি নদী
পুণ্যতীর্থ বলি কে জানিত।
পুরাণে বর্ণিনু যেই পুণ্যতীর্থ হলে তেঁই
পুরাণে বর্ণিনু যেই পুণ্যতীর্থ বলি কে জানিত।
জহ্নু মুনি থুইয়া দূরে জানাইনু তিন পুরে
জাহ্নবী বলিয়া তোর নাম।।
শান্তনু রাজার লয়ে ছিলি তার নারী হয়ে
তার সাক্ষী ভীষ্ম তোর বেটা।
শান্তনুরে করি সারা হয়েছ শিবের দারা
তোর সমা পুণ্যবতী কেটা।।
পেয়েছ শিবের জতা তাহাতে সাপের ঘতা
কপালে বহ্নির তাপ লাগে।
[Page 166]
চণ্ডী করে গণ্ডোগোল ভুতভৈরবের রোল
কোন সুখে আছ কোন রাগে।।
স্বভাবতঃ নীচগতি সতত চঞ্চলমতি
কভু নাহি পতির নিয়ম।
যে ভাল ভজিতে পারে পতি ভাব কর তারে
সিন্ধু সঙ্গে সম্প্রতি সঙ্গম।।
বেশ্যাধর্ম্ম লয়ে আছ জাতি কুল নাহি বাছ
রূপ গুণ যৌবন না চাও।
মা বলিয়া সেবা দেই ক্ষীর পান করে যেই
পতি কর কোলে মাত্র পাও।
আপনার পক্ষ জানি কহিলাম তোরে আনি
তুমি তাহে বিপরীত কহ।
তুমি মোর কি করিবা তোমার শক্তি কিবা
বিষ্ণুপদোদক বিনা নহ।।
শাপ দিয়া পতি যেই ব্রহ্মতেজ জানে সেই
অগস্ত্য করিয়াছিল পান।।
ব্যাসদেব এইরূপে মদিয়া কোপের কূপে
গঙ্গার করিলা অপমান।
ভারত সভয়ে কহে মোরে যেন দয়া রহে
স্তুতি নিন্দা গঙ্গার সমান।।
[Page 167]
গঙ্গার হইল ক্রোধ ব্যাসের বচনে।
ব্যাসেরে ভর্ৎসিয়া কন মহাক্রোধ মনে।।
শুন শুন ওহে ব্যাস বিস্তর কহিলা।
এই অহঙ্কারে কাশী বাস না পাইলা।।
নর হয়ে নারায়ণ হৈতে চায় যেবা।
শিবনিন্দা যে করে তাহার গঙ্গা কেবা।।
তোর প্রকাশিতা আমি কেমনে কহিলি।
বেদ মত পুরাণেতে আমারে বর্ণিলি।।
যতেক প্রসঙ্গ লয়ে করেছ পুরাণ।
আমার প্রসঙ্গ আছে তেঁই সে প্রমাণ।।
তুমি বুঝিয়াছ আমি শান্তনুর নারী।
সমুদ্রে মিলেছি বলি নারী হৈনু তারি।।
সংসারে যতেক নারী মোর অংশ তারা।
শিবঅংশ সংসারে পুরুষ আছে যারা।।
প্রকৃতি পুরুষ মোরা তই কি বুঝিবি।
আমার জাতির দায় কে ধরিবে তোরে।
কোন জাতি তোমার বুঝাও দেখি মোরে।।
বেদের পঞ্চত্ব দিয়া ভারত পুরাণ।
রচিয়াছ আপনি পরমজ্ঞানবান।।
তাহে কহিয়াছ আপনার জন্ম কর্ম্ম।
ভাবিয়া দেখহ দেখি তাহার কি মর্ম্ম।।১
[Page `168]
পরাশর ব্রহ্মঋষি তোর পিতা যেই
ব্রাহ্মণের লক্ষ্ণে ব্রাহ্মণ বটে সেই।।১
মৎস্যগন্ধা দাসকণ্যা ব্রাহ্মণী ত নহে
তার গর্ভে জন্ম তর ব্রাহ্মণ কে কহে।।
পরাশর অপসর তোর জন্ম দিয়া।
শান্তনু তোমার মায়ে পুন কৈল বিয়া।।
বৈপিত্র দু ভাই তাহে জন্মিল তোমার।
একটি২ বিচিত্রবীর্য্য দিত্রাঙ্গদ আর।।
অম্বালিকা অম্বিকা বিবাহ কৈল তারা।
যৌবনে মরিল দুতি বুউ রৈল সারা।।
পুত্র হেতু সত্যবতী তোমার জননী।
তোমারে দিলেন আজ্ঞা যেমন আপনি।।
তুমি রণ্ডা ভ্রাতৃবধূ করিয়া গমন৩।
জন্মাইলা ধৃতরাষ্ট্র পাণ্ডু দুই জন।।
কুন্তি মাদ্রী দুই নারী পান্ডু কৈল বিয়া।
সম্ভোগে রহিত হৈল শাপের লাগিয়া।।
ভেবে মরে কুন্তি মাদ্রী করিব কেমন।
তুমি তাহে বিধি দিলা আপনি যেমন।।
ধর্ম্ম বায়ু ইন্দ্র আর অস্বিনীকুমার।
উপপতি হৈতে পাঁচ পুত্র হৈল তার।।
যুধিস্থির ভীম আর অর্জ্জুন নকুল।।
সহদেব এই পঞ্চ পাণ্ডব অতুল।।
তুমি তাহে আপনার মত বিধি দিয়া।
পাঁচ বরে এক দ্রৌপদীরে দিলা বিয়া।।
[Page 169]
জন্ম কর্ম্ম কথা সব সমান তোমার।
তুমি কলঙ্কের ডালি কলঙ্ক আমার।।
ব্রহ্মশাপ কি দিবি কি তোরে মোর ভয়।
ব্রহ্মশাপ সেই দেয় ব্রাহ্মণ যে হয়।।
ব্রহ্মশাপ কিবা দিবি কে তোরে ডরায়।
ব্রহ্মহত্যা আদি পাপ মোর নামে যায়।।
তুই কি জানিবি১ ব্রহ্মা তোর পিতামহ।
সে জানে মহিমা মোর তারে গিয়া কহ।।
এত বলি ক্রোধে গঙ্গা কৈলা অন্তর্দ্ধান।৩
গালি খেয়ে ব্যাসদেব হৈলা হতজ্ঞান।।
ভারত কহিছে ব্যাস ধিরি ধিরি ধিরি।
গিয়াছিলা যথা হৈতে তথা গেলা ফিরি।।
দীনদয়াময়ী দেবী দয়া কর দীনে।
দারিদ্র্য দুর্গতি দূর কর দিনে দিনে।।
ধর্ম্ম তার ধরা তার ধন তার ধান।
ধ্যানে ধরে যে তোমারে সেই সে ধীমান।।
নারসিংহী নৃমুণ্ডমালিনী নারায়ণী।
নগেন্দ্রনন্দিনী নীলনলিননয়নী।।
কৃষ্ণচন্দ্র আজ্ঞায় ভারতচন্দ্র গায়।
হরি হরি বল সবে পালা হৈল সায়।।
[Page 199]

12. হরিহোড়ে অন্নদার দয়া

হাসিয়া কহেন দেবী অরে বাছা হরি।
পরিচয় দিব আগে দুঃখ দূর করি।।
আহা মরি ঘুঁটে বেচি তোমার নির্ব্বাহ।
এই ঘুঁটে একখানি বেচিবারে যাহ।।
এত বলি একখানি ঘুঁটে হাতে লয়ে।
দিলেন হরির হাতে অনুকুল১ হয়ে।।
ঘূঁটে হৈল হেমঘুঁটে দেবীর পরশে।
লোহা যেন হেম হয় পরশি পরশে।।
ঘুঁটে দেখি হেমঘুঁটে হোরিহোড়ে ভয়।
এ কি দেখি অপরুপ ঘুঁটে সোনা হয়।।
কেমন দেবতা মেনে বুড়ী ঠাকুরাণী।
জাগিতে স্বপন কিবা বাজি অনুমানি।।
তপস্যা কি আছে যে দেবতা দেখা দিবে।
ভাগ্যগুণে বুঝি কোন বিপদ ঘটিবে।।
হেমঘুঁটে হাতে হরি কাঁপে থর থর।
অনিমিক নয়নে সলিল ঝর ঝর।।
এইরুপে হরিহোড়ে মোহিত দেখিয়া।
কহিতে লাগিলা দেবী ঈষদ হাসিয়া।।
আজ্ঞা দিলা কৃষ্ণচন্দ্র ধরণী ঈশ্বর।
রচিল ভারতচন্দ্র রায় গুণাকর।।
[Page 200]

13. হরিহোড়ে বরদান

ভয় কি রে অরে বাছা হরি।
আমি অন্নপুর্ণা মহেশ্বরী।।
অরে বাছা হরিহোড় দূর কর ভয়।১
আমি দেবী অন্নপূর্ণা লহ পরিচয়।
দুঃখ দেখি আসিয়াছি তোরে দিতে বর।
ধন পুত্র লক্ষ্মী পরিপূর্ণ হবে ঘর।।
চৈত্র মাসে শুক্ল পক্ষে অষ্টমী নিশায়।
করিহ আমার পুজা বিধি ব্যবস্থায়।।
আমার পুজার ফলে বড় সুখে রবে।
মাটিমুটা ধর যদি সোনামুটা হবে।।
দেবীর অমৃতবাক্যে পাইয়া আনন্দ।
প্রণমিয়া হরিহোড় কহে মৃদু মন্দ।।
অন্নপূর্ণা অবতীর্ণা অধমের ঘরে।
কেমনে এমন হবে প্রত্যয় কে করে।।
বিধি বিষ্ণু বিরিঞ্চি বাসব আদি দেবে।
দেখিতে না পায় যাঁরে ধ্যান করি সেবে।।
ধর্ম্ম অর্থ কাম মোক্ষ যাঁর নামে হয়।
তাঁরে আমি দেখিব কেমনে মনে লয়।।
শুনিয়াছি কাশীতে তাঁহার অধিষ্ঠান।
সেই মুর্ত্তি দেখি যদি তবে সে প্রমাণ।।
নহে হেন অসম্ভবে কে করে প্রত্যয়।
ভেল্কীতে কত ভাত ঘুঁটে সোনা হয়।।
[Page 201]
হাসিয়া কহেন দেবী দেখ রে চাহিয়া।
বসিলেন অন্নপুর্ণা মুরতি ধরিয়া।।
মণিময় রক্তপদ্মে পদ্মাসনা হয়ে।
দুই হাতে পানপাত্র রত্নহাতা লয়ে।।
কোটি শশী জিনি মুখ অর্দ্ধ শশী ভালে।
শিরে রত্নমুকুট কবরী কেশজালে।।
পঞ্চমুখ সম্মুখে নাচেন অন্ন খেয়ে।
ভুমে পড়ে হরিহোড় একবাড় চেয়ে।।
মূর্ছিত দেখিয়া হরিহোড়ে হরপ্রিয়া।
প্রবোধিয়া দিলা বর রূপ সম্বরিয়া।।
হরিহোড় বলে মা গো ধনে কাজ কিবা।
এই বর দেহ পাদপদ্মে ঠাঁই দিবা।।
হাসিয়া কহিলা দেবী সে ত হবে শেষে।
কিছু দিন সুখভোগ করহ বিশেষে।।
হরিহোড় কহে মা গো কর অবধান।
চঞ্চলা তোমার কৃপা চঞ্চলাসমান।।
অনুগ্রহ করিতে বিস্তর ক্ষণ নহে।
নিগ্রহ করিতে পুন বিলম্ব না সহে।।
তবে লব ধন আগে দেহ এই বর।
বিদায় না দিলে না ছাড়িবে মোর ঘর।।
কিঞ্চিত ভাবিয়া দেবী তথাস্তু বলিলা।
ভোজন করিতে পুনর্ব্বার আজ্ঞা দিলা।।
দেবীর আজ্ঞায় হরিহোর ভাগ্যধর।
মায়েরে কহিলা অন্ন দেহ শীঘ্রতর।।
পদ্মিনী পদ্মিনী হৈল দেবীর দয়ায়।
দিব্য বস্ত্র অলঙ্কার সুশোভিত কায়।।
[Page 202]
মুখপদ্মগন্ধে মত্ত মধুকর ওড়ে।
মহানন্দে অন্ন বাড়ী দিলা হরিহোড়ে।।
চর্ব্য চূষ্য লেহ্য পেয় আদি নানা রস।১
ভোজন করিল হরিহোড় মহাযশ।।২
বস্ত্র অলঙ্কারে বিষ্ণুহোড় দিব্যকায়।
কুটীর হইল কোঠা দেবীর কৃপায়।।
এইরুপে হরিহোড়ে দিয়া ধন বর।
অন্তরীক্ষে অন্নপূর্ণা গেলেন সত্ত্বর।।
আজ্ঞা দিলা কৃষ্ণচন্দ্র ধরণী ঈশ্বর।
রচিল ভারতচন্দ্র রায় গুণাকর।।
[Page 202]

14. বসুন্ধরার জন্ম

এইরূপে হরিহোড় পেয়ে ধন বর।
ধনধান্যে পরিপূর্ণ কুবেরসোঁসর।।
কুলীন মৌলিক যত কায়স্থ আছিল।
নানামতে ধন দিয়া সকলে তুষিল।।
ঘটক পাইয়া ধন গাইল ঠাকুর।
বাহত্তরে গালি ছিল তাহা গেল দূর।।
ঘোষ বসু মিত্র মুখ্যকুলীনের কন্যা।
বিবাহ করিল তিন রুপে গুণে ধন্যা।।
পিতা মাতা সুত ভ্রাতা কন্যা বধূগণ।
জামাই বেহাই লয়ে ভুঞ্জে নানা ধন।।
[Page 217]

15. অন্নদার ভবানন্দভবনে যাত্রা

সভয়ে পাটুনি কহে চক্ষে বহে জল।
দিয়াছ যে পরিচয় সে বুঝিনু ছল।।
হের দেখ সেঁউতীতে থুয়েছিলা পদ।
কাঠের সেঁউতি মোর হৈল অষ্টাপদ।।
ইহাতে বুঝিনু তুমি দেবতা নিশ্চয়।
দয়ায় দিয়াছ দেখা দেহ পরিচয়।।
তপ জপ জানি নাহি ধ্যান জ্ঞান আর।
তবে যে দিয়াছ দেখা দয়া সে তোমার।।
যে দয়া করিল মোর এ ভাগ্য উদয়।
সেই দয়া হৈতে মোরে দেহ পরিচয়।।
ছাড়াইতে নারি দেবী কহিলা হাসিয়া।
কহিয়াছি সত্য কথা বুঝহ ভাবিয়া।।
আমি দেবী অন্নপূর্ণা প্রকাশ কাশীতে।
চৈত্র মাসে মোর পুজা শুক্ল অষ্টমীতে।।
কত দিন ছিনু হরিহোড়ের নিবাসে।
ছাড়িলাম তার বাড়ী কন্দলের ত্রাসে।।
ভবানন্দ মজুন্দার নিবাসে রহিব।
বর মাগ মনোনীত যাহা চাহ দিব।।
প্রণমিয়া পাটুনি কহিছে যোড় হাতে।
আমার সন্তান যেন থাকে দূধে ভাতে।।
তথাস্তু বলিয়া দেবী দিলা বরদান।
দুধে ভাতে থাকিবেক তোমার সন্তান।।
বর পেয়ে পাটুনী ফিরিয়া ঘাটে যায়।
পুনর্ব্বার ফিরি চাহে দেখিতে না পায়।।
সাত পাঁচ মনে করি প্রেমেতে পূরিল।
ভবানন্দ মজুন্দারে আসিয়া কহিল।।
[Page 240]

16. রন্ধন

বেলা হৈল অন্নপূর্ণা রান্ধ বাড় গিয়া।
পরম আনন্দ দেহ পরমান্ন দিয়া।।
তোমার অন্নের বলে অদ্যাবধি আছে গলে।
কালরূপী কালকূট অমৃত হইয়া।
একহাতে পানপাত্র আর হাতে হাতা মাত্র
দিতে পার চতুর্ব্বর্গ ঈষদ হাসিয়া।।
তুমি অন্ন দেহ যারে অমৃত কি মিঠা তারে
সুধাতে কে করে সাধ এ সুধা ছাড়িয়া।
পরশিয়া অন্ন সুধা ভারতের হর ক্ষুধা
মা বিনা বালকে অন্ন দে দেয় ডাকিয়া।।
ভোগের রন্ধনে ভার লয়ে পদ্মমুখী।
রন্ধন করিতে গেলা মনে মহাসুখী।।
স্নান করি করি রামা অন্নদার ধ্যান।
অন্নপূর্ণা রন্ধনে করিলা অধিষ্ঠান।।
হাস্যমুখী পদ্মমুখী আরম্ভিলা পাক।।
শড়শড়ি খণ্ট ভাজা নানামত শাক।।
[Page 241]
ডালি রান্ধে ঘনতর ছোলা অরহরে।
মুগ মাষ বরবটী বাটুলা মটরে।।
বড়া বড়ী কলা মূলা নারিকেল ভাজা।
দুধথোর ডালনা শুক্তানি ঘণ্ট তাজা।।
কাটাঁলের বীজ রান্ধে চিনিরসে বুড়া।
তিল পিটালিতে লাউ বার্ত্তাকু কুমুড়া।।
নিরামিষ তেইশ রান্ধিলা অনায়াসে।
আরম্ভিলা বিবিধ রন্ধন মৎস্য মাসে।।
কাতলা ভেকুট কই ঝাল ভাজা কোল।
সীকপোড়া ঝুড়ী কাঁটালের বীজে ঝোল।।
ঝাল ঝোল ভাজা রান্ধে চিতল ফলই।
কই মাগুরের ঝোল ভিন্ন ভাজে কই।।
মায়া সোনাখড়কীর ঝোল ভাজা সার।
চিঙড়ীর ঝাল বাগা অমৃতের তার।।
কন্ঠা রান্ধি রান্ধে রুই কাতলার মুড়া।
তিত দিয়া পচা মাছে রান্ধিলেক গুঁড়া।।
আম্র দিয়া শৌলমাছে ঝোল চড়চড়ী।
আড়ি রান্ধে আদারসে দিয়া ফুলবড়ী।।
রুই কাতলার তৈলে রান্ধে তৈলশাক।
মাছেড় ডিমের বড়া মৃতে দেয় ডাক।।
বাচার১ করিলা ঝোল খয়রার ভাজা।
অমৃত অধিক বলে অমৃতের রাজা।।
সুমাছ বাছের বাছ আর মাছ যত।
ঝাল ঝোল চড়চড়ী ভাজা কৈলা কত।।
[Page 242]
বড়া কিছু সিদ্ধ কিছু কাছিমের ডিম।
গঙ্গাফল তার নাম অমৃত অসীম।।
কচি ছাগ মৃগ মাংসে ঝাল ঝোল রসা।
কালিয়া দোলমা বাগা সেকচী সমসা।।
অন্ন মাংস সীকভাজা কাবাব করিয়া।
রান্ধিলেন মুড়া আগে মসলা পূড়িয়া।।
মৎস্য মাংস সাঙ্গ করি অম্বল রান্ধিলা।
মৎস্য মূলা বড়া বড়ী চিনি আদি দিলা।।
আম আমসত্ত্ব আর আমসী আচার।
চালিতা তেঁতুল কুল আমড়া মন্দার।।
অম্বল রান্ধিয়া রামা আরম্ভিলা পিঠা।
সুধা বলে এই সঙ্গে আমি হব মিঠা।।
বড়া এলো আসিকা পীযুষী পুরী পুলী।
চুষী রুটী রামরোট মুগের সামুলী।।
কলাবড়া ঘিয়ড় পাপড় ভাজাপুলী।
সুধারুচি মুচমুচি লুচি কতগুলি।।
পিঠা হৈল পরে পরমান্ন আরম্ভিলা।
চালু চিনা ভুরা বাজরার চালু দিলা।।
পরমান্ন পরে খেচরান্ন রান্ধে আর।
বিষ্ণুভোগ রান্ধিলা রান্ধনী লক্ষ্মী যার।।
অতুলিত অগণিত রান্ধিয়া ব্যঞ্জন।
অন্ন রান্ধে রাশি রাশি অন্নদামোহন।।
মোটা সরু ধান্যের তণ্ডুল তরতমে।
আসু বোরো আমন রান্ধিলা ক্রমে ক্রমে।।
দলকচু ওড়কোচু ঘিকলা পাতরা।
মেঘহাসা কালামনা রায় পানিতরা।।
[Page 243]
কালিন্দী কনকচূড় ছায়াচূর পুদি।
শুয়া শালি হরিলেবু গুয়াথুবি সুঁদী।।
ঘিশালী পোয়ালবিড়া কলামচা আর।
কৈজুড়ী খাজুরছড়ী চিনা ধলবার।।
দাদুসাহি বাঁশফুল ছিলাট করুচি।
কেলে জিরা পদ্মরাজ দুদসার১ লুচি।।
কাঁটারাঙ্গি কোঁচাই কপিলাভোগ রান্ধে।
ধুলে বাঁসগজাল ইন্দ্রের মন বান্ধে।।
বাজাল মরীচশালী ভুরা বেনাফুল।
কাজলা শঙ্করচিনা চিনিসমতুল।।
মাকু মেটে মষিলোট শিবজটা পরে।
দুধপনা গঙ্গাজল মুনিমন হরে।।
সুধা দুধকলম খড়িকামুটি রান্ধে।
বিষ্ণুভোগ গন্ধেশ্বরী গন্ধভার কান্ধে।।
রান্ধিয়া পায়রারস রান্ধে বাঁশমতী।
কদমা কুসুমশালি মনোহর অতি।।
রমা লক্ষ্মী আলতা দনারগুঁড়া রান্ধে।
জুতী গন্ধমালতী অমৃতে ফেলে বান্ধে।।
লতামউ প্রভৃতি রাঢ়ের সরু চালু।
রসে গন্ধে অমৃত আপনি আলুথালু।।
অন্নদার রন্ধন ভারত কিবা২ কয়।
মৃত হয় অমৃত অমৃত মৃত হয়।।
This is a selection from the original text

Keywords

অন্ন, ডিম, দারিদ্র্য, ভিক্ষা, ভিক্ষা, মাংস, মাছ, রুটী, লুট

Source text

Title: Bharatchandra Granthabali(Prothom Bhag)

Subtitle: Annadamangal

Author: Bharatchandra Ray

Editor(s): Brajendranath Bandopadhyay & Sajanikanta Das

Publisher: Bangiya Sahitya Parisad

Publication date: 1952

Original compiled 1752

Edition: 1st Edition

Place of publication: Calcutta

Provenance/location: This text was transcribed from print at the National Library of India. Original compiled 1752

Digital edition

Original author(s): Bharatchandra Ray

Original editor(s): Brajendranath Bandopadhyay & Sajanikanta Das

Language: Bengali

Selection used:

  • 1 ) pages 12 to 18
  • 2 ) pages 90 to 98
  • 3 ) pages 100 to 102
  • 4 ) pages 144 to 149
  • 5 ) pages 165 to 169
  • 6 ) pages 199 to 202
  • 7 ) page 217
  • 8 ) pages 240 to 243

Responsibility:

Texts collected by: Ayesha Mukherjee, Amlan Das Gupta, Azarmi Dukht Safavi

Texts transcribed by: Muhammad Irshad Alam, Bonisha Bhattacharya, Arshdeep Singh Brar, Muhammad Ehteshamuddin, Kahkashan Khalil, Sarbajit Mitra

Texts encoded by: Bonisha Bhattacharya, Shreya Bose, Lucy Corley, Kinshuk Das, Bedbyas Datta, Arshdeep Singh Brar, Sarbajit Mitra, Josh Monk, Reesoom Pal

Encoding checking by: Hannah Petrie, Gary Stringer, Charlotte Tupman

Genre: India > poetry

For more information about the project, contact Dr Ayesha Mukherjee at the University of Exeter.

Acknowledgements