Mundy Shaheb-er Golpo
1. মাণ্ডি সাহেবের গল্প
1.1.
পেনরিন বিলাতের ছোট্ট একটা গ্রাম।
কর্ণওয়াল অঞ্চলেতে মাণ্ডির জন্মস্থান।। ১
চারিপাশ সমুদ্রে ঘেরা ছিল জলবন্দী।
ষোলশ’ সালেতে জন্ম হল পিটার মাণ্ডি।। ২
পেনরিন গ্রামে ছিল জেলেদের ঘর।
নৌকা নিয়ে সমুদ্রে মাছ ধরতো বরাবর।। ৩
আশেপাশে গ্রামে-গঞ্জে মাছ বিক্রি করে।
অভাব ছিলনা তখন জেলেদের ঘরে।। ৪
সমুদ্র পেরিয়ে মাছ ফ্রান্সে চালান যায়।
ভাল ভাবে মাণ্ডির বাবা ব্যবসাটি চালায়।। ৫
আরও একটি বাড়ি ছিল খাড়ি-নদীর পাড়ে।
স্কুল-কলেজে পিটার মাণ্ডি পড়াশোনা করে।। ৬
হঠাৎ একদিন এসে গেল মেঘেরই গর্জন।
ঝড়-ঝাপটা শিলাবৃষ্টি মাছের হয় মরণ।। ৭
গঙ্গাবাড় হল বলে বলে গুরুজন।
মা গঙ্গার খেলা যেমন অসুর দলন।। ৮
জেলেরা সব নৌকা নিয়ে মাছ ধরতে যায়।
সমুদ্রে তলিয়ে গেল কোনও কূল না পায়।। ৯
সেই থেকে জেলেদের অভাব অনটন।
কর্ণওয়াল অঞ্চল ভাল লক্ষ্মী-নারায়ণ।। ১০
চোদ্দ বৎসরের পিটার সমুদ্রেতে যায়।
মাছের সংখ্যা কমে গেছে চোখে দেখতে পায়।। ১১
পিটার মাণ্ডি বুঝেছিল আসছে অলক্ষ্যণ।
মনে মনে বুঝেছিল চাকরি প্রয়োজন।। ১২
ডেনমার্ক রাশিয়া ঘুরে চীন ও জাপান।
ভারতবর্ষ বেছে নিল করবে অভিযান।। ১৩
ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির চাকরি পেয়ে গেল।
পিটার মাণ্ডি ভারতবর্ষের সুরাটে পৌঁছাল।। ১৪
ষোলশ’ আঠাশ সালে ভারত আগোয়ান।
সে সময় মুঘল সম্রাট ছিল শাহজাহান।। ১৫
[Page]
দেখেছিল চোখে তিনি মানুষের হাল।
ফসল নষ্ট করে ইঁদুর খেল পঙ্গপাল।। ১৬
অনাহারে তিরিশ লক্ষ মানুষ মারা যান।
হাটে মাঠে রাস্তাঘাটে মানুষ প্রাণ হারান।। ১৭
গুজরাটেতে চলার পথে মানুষ মারা যায়।
জীবজন্তু মাংসের সঙ্গে হাড়গোড় চিবায়।। ১৮
পেটের জ্বালা এমন হল বাচ্চা বিক্রি করে।
পিতামাতার দিবানিশি অশ্রুধারা ঝরে।। ১৯
সে সময়ে দালাল যারা ছিল যে এমন।
মায়া-দয়াহীন ছিল অসুরের মতন।। ২০
প্রাণের ভয়ে দশ লক্ষ মানুষ পালিয়ে যায়।
ভেবেছিল আমাদের বাঁচা বিষম দায়।।২১
আহমেদনগর থেকে দলে মানুষ পালিয়ে ছিল।
মাণ্ডি সাহেব দুঃখের কথা ডায়েরিতে লিখিল।। ২২
বানজারাদের খাবার ভর্তি পাঠায় গরুর গাড়ি।
সম্রাটের সৈন্যদল করত কাড়াকাড়ি।। ২৩
এসব দৃশ্য দেখে মাণ্ডি ফিরে দেশে দেশে।
অনাহার, অত্যাচার মাণ্ডির চোখে ভাসে।। ২৪
ফারশি মির্জা মাহমুদ বুরহানপুর যায়।
পিটার মাণ্ডির সঙ্গে দেখা হইল রাস্তায়।। ২৫
দু’জনেতে রাস্তা-পথে হল পরিচয়।
রাস্তার মধ্যে ছিল তখন চোর-ডাকাতের ভয়।। ২৬
মির্জার সঙ্গে পিটার মাণ্ডি করিল গমন।
সম্রাট দরবারে তারা দিল দরশন।। ২৭
কোম্পানির অধ্যক্ষ বলে করালো ভোজন।
আপদে বিপদে তারা থাকে দুইজন।। ২৮
এইভাবে কিছুদিন কেটে গেল তার।
ডায়েরি লিখা ছবি আঁকা কর্মজীবন তার।। ২৯
মাণ্ডি’র সঙ্গে এসেছিল বিরাট বড় দল।
দুঃখ কষ্ট দেখে তাদের চোখে আসে জল।। ৩০
অনাচার অত্যাচার হয়ে মহামারী।
এসব দৃশ্য দেখে তারা হল ছাড়াছাড়ি।। ৩১
নানা জায়গায় ছড়িয়ে গেল পিটার মাণ্ডির দল।
মৃত্যু দেখে নিজের চোখে হয়েছে দুর্বল।। ৩২
মনের দুঃখে ফিরল দেশে পিটার মাণ্ডি হায়।
দলের মানুষ কমে গেছে চোখের আঙ্গিনায়।। ৩৩
ডায়েরি লিখে গেছেন তিনি মাণ্ডির অবদান।
লেখা তার পড়ে হিন্দু মুসলমান খৃস্টান।। ৩৪
ছবি আঁকে ডায়েরির সাথে আছে যে প্রমাণ।
চারশ’ বছর পরে দুখু গায় সেসব গান।। ৩৫